৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১১:৩৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাহফুজা বর্তমানে বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি বিটিভির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজিত রায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি নিজেরা তদন্ত না করে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদকের পরিচালক (দৈনিক ও সাম্প্রতিক) উত্তম কুমার মণ্ডল স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি গত ৭ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এরপর ২৯ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. শেখ মুসলিমা মুন (টেলিভিশন-১ শাখা) স্বাক্ষরিত নির্দেশ অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের জন্য বিটিভির মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছেন।
মাহফুজার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সুজিত রায় নিজেকে সংগীত পরিচালক ও শিল্পী হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকাকালে মাহফুজা আক্তার প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে এক কোডের ব্যয় অন্য কোডে দেখিয়ে প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া পিপিপিআরের নিয়ম না মানা, টেন্ডার আহ্বান না করে প্রতিদিন একাধিক ক্রয় দেখিয়ে সরাসরি মালপত্র কেনাসংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম থাকার সময় অনুষ্ঠান প্রযোজনা করার নিয়ম না থাকলেও মাহফুজা নিজেকে প্রযোজক দেখিয়ে ৬৩৯টি অনুষ্ঠান করেছেন। এসব অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আর এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন সফির হোসেন নামের এক প্রযোজক। গত অর্থবছরে প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা বিভিন্ন কেনাকাটা দেখিয়ে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা তুলেছেন। যার বিপরীতে কোনো মালপত্র কেনা হয়নি।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রামে যোগদান করার সময় তাঁর বাংলো মেরামত, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, পর্দা কেনাসহ বিভিন্ন অনিয়মে মাহফুজার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন অভিযোগকারী। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে তখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে নাটক নির্মাণের নামে টাকা তোলা হলেও তা নির্মাণ না করে ভুয়া বিল-ভাউচারের প্রায় কোটি টাকা তুলে নেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিটিভির তৎকালীন ডিজি হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে যোগসাজশে এইচডিটিভি প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা নামে-বেনামে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পে নিজের বোন, বোনজামাই ও কাজের মেয়েকে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের কথাও অভিযোগে বলা হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা কেন্দ্রে বদলি হয়ে আসার পর এ কেন্দ্রের অনেকেও তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। বিটিভির সংশ্লিষ্ট সূত্র সমকালকে বলেছে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনটির বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লাইভ অনুষ্ঠান। অর্থ সংকটে ও জিএমের ব্যর্থতায় বিটিভির ৭০-৮০ শতাংশ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং বন্ধ রয়েছে। অনেক শিল্পীর সম্মানীর টাকার চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হচ্ছে। টাকার অভাবে বেশ কিছু অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, যা বিটিভির মতো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেমানান।
জিএম মাহফুজা আক্তারের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি অবমাননার অভিযোগও উঠেছে। তাঁর অফিস কক্ষে জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল ছবির পাশে নিজের ছবিও টানিয়ে রাখেন। পরে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে তা সরিয়ে ফেলেন।
তবে বেশকিছু কারণে সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই তহবিল প্রায় শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমটির। শিল্পী সম্মানীর ৩-৪ হাজার টাকার চেকও ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হতে শুরু করেছে। বিটিভির যেসব কর্মচারী রাজস্ব খাতে নেই, তাঁরা ছয় মাস ধরে কোনো টাকা পাচ্ছেন না। এমনকি গাড়ির জ্বালানি কিনতে না পারায় অতিথিদের যাতায়াতে কোনো যানবাহনও দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন উপকেন্দ্রে কাজ না করিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ লাখ টাকার বিল প্রদান করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। গত ১৬ মে কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে টিমের সদস্যরা ঢাকায় বিটিভি প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এর সত্যতাও পান।
তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিটিভিতে পাঠানো এ-সংক্রান্ত কাগজপত্রসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ এর৷ সংগ্রহে রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিটিভির জিএম মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোনে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উল্টো তিনি তাঁর স্বামীকে দিয়ে সাংবাদিকদের মামলার হুমকি দেন।
Leave a Reply