৭ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:০৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
মোঃ আবুল কালাম আজাদ, হোমনা:
কুমিল্লার হোমনায় কওমি শিক্ষকের অনৈতিক কাজে সম্মত না হওয়ায় ছাত্রদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভাষানিয়া ইউনিয়নের নয়াকান্দি মমতাজিয়া আসমতিয়া হাফিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।
হুজুরের অনৈতিক কাজে সম্মত না হওয়ায় আঃ কাইয়ুম(১৪) নামের হেফজ বিভাগের এক ছাত্রকে পিটিয়ে, পায়ে ও পাছায় গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে মাদ্রাসায় আটকিয়ে রেখে। নির্যাতনের অভিযোগে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মাদ্রাসার ২ হুজুর ও ৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অভিযান চালিয়ে এজহারে উল্লেখিত আতিকুল্লাহ নামের এক হুজুরকে গ্রেফতার করেছে। আজ ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে কোর্টে চালান করা হয়েছে।
জানাগেছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্রকে তার পাছায় গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দিয়ে গুরুতর জখম করে মাদ্রাসায় আটকে রেখে গোপনে চিকৎসা দেন। ঘটনার ১০দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর ছেলেকে খাবার দিতে গিয়ে এ নির্যাতনের ঘটনা জানতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে।পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার করে। ভিকটিম আঃ কাইয়ুম চান্দেরচর ইউনিয়নের চান্দেরচর গ্রামের আবদুল কাদিরের ছেলে।
মামলার বাদী ভিকটিমের মা হাফেজা বেগম সাংবাদিকদের বলেন ‘ গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমার ছেলেন জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে জানতে পারি সাইফুল ইসলাম ও আতিকউল্লাহ হুজুর মিলে আমার ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে।তার পায়ে ও পাছায় গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেবার কারনে সে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। পরে এলাকাবাসির সহযোগীতায় তাঁকে উদ্ধার করে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করি এবং আমার ছেলেকে যারা অমানুষিক নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করি। পুলিশ আতিক হুজজুরকে গ্রেফতার করতে পারলেও সাইফুল হুজুরকে গোেফতার করতে পারেনি। আমি আমার ছেলের নির্যাতনের বিচার চাই।
এ বিষয়ে ভিকটিম আঃ কাইয়ুম বলেন, সাইফুল হুজুর ও আতিক হুজুর অনেক ছাত্রদের সাথে অনৈতিক আচরন করে। এই ঘটনা বাইরে জানাজানি করি বলে সবাইকে অনেক নির্যাতন করে আসছে। ১৬ তারিখ কোন কারন ছাড়াই আমাকে মারধর করে ইস্ত্রি গরম করে আমার পায়ে ও পাছায় ছ্যাকা দিয়েছে এবং কাউকে বলতে মানা করেছে । আমাকে হাসপাতালে যেতে দেয় নাই। মাদ্রাসায় আটকিয়ে রেখেছে। কিন্ত আমি ব্যাথায় টিকতে না পেরে আমার মাকে ঘটনা বলে দিয়েছি।
এদিকে ঘটনা জানা জানি হলে এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। পরে মাদ্রাসা বন্ধ করে সাইফুল ইসলাম ও আতিক উল্লাহ পালিয়ে যায়। তবর অভিযান চালিয়ে এজহার নামীয় সাইফুল ইসলামে সহযোগী আতিকুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন জানান, ছাত্র নির্যাতনের বিষয়ে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার ভুক্ত একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
এ দিকে সংবাদ পেয়ে হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করার আশ্বাস দিলে উত্তেজিত বিক্ষোব্ধ জনতা শান্ত হয়। মাদ্রাসা আপাতন বন্ধ রয়েছে।
Leave a Reply