১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৪:০৬ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
এক সময়ের ক্রিকেট মাঠের দাপুটে অধিনায়ক, যিনি ব্যাট-বলের জাদুতে জয় করেছিলেন কোটি মানুষের হৃদয়, তিনি হঠাৎ করেই যখন রাজনীতির মঞ্চে নামেন, দেশজুড়ে শুরু হয় আলোড়ন। সাকিব আল হাসান—বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নামগুলোর একটি—দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মাগুরা-১ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন বিপুল ভোটে।
নির্বাচনের পর যখন মাগুরার মাটিতে পা রাখেন, জনতা তাকে স্বাগত জানায় ফুলের মালা আর করতালির ঝংকারে। সবাই ভেবেছিল, হয়তো এবার ক্রিকেট মাঠের নায়ক রাজনীতির মঞ্চেও আলো ছড়াবেন। কিন্তু সময় যেন খুব কমই ছিল সাকিবের হাতে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, “আমি নির্বাচনের পর মাগুরায় গিয়েছি হয়তো তিন দিন। তারপর তো পুরো সময়টাই ক্রিকেট নিয়ে ছিলাম। রাজনীতি করার বা পরিস্থিতি বোঝার সময় পেলাম কই?”
রাজনীতির সেই ছোট্ট অধ্যায়টি যে সাকিবের জন্য কতটা কঠিন হয়ে উঠবে, তা তখন হয়তো কেউই কল্পনা করেননি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঢেউ যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। দেশের অনেক তারকা ক্রিকেটার তখন আন্দোলনরত ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান, কেউ স্ট্যাটাস দেন, কেউ রাস্তায় নামেন। কিন্তু সাকিব? তিনি ছিলেন নীরব।
এই নীরবতাই যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রোল, সংবাদ শিরোনামে কড়া সমালোচনা—সবই যেন এক মুহূর্তে বদলে দেয় সাকিবের চারপাশের পৃথিবী। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় হত্যা মামলাও! তিনি দেশ ছেড়ে থাকতে বাধ্য হন।
অনেক দিন চুপ করে ছিলেন। কিন্তু এবার ভাঙলেন নীরবতা। এক বেসরকারি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন— তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে রাজনীতি করতে হবে না, ক্রিকেটেই মনোযোগ দাও। আমি সেটাই করেছিলাম। আমি তো আর নিজের ইচ্ছায় রাজনীতি করতে যাইনি। আমি রাজনীতিবিদ না, একজন খেলোয়াড়।”
‘আর কোনো এজেন্ডা তো ছিল না। আমার ভাবনাই ছিল যতদিন পারি ক্রিকেট খেলে যাব। আমি চাইলেই ক্রিকেট ছেড়ে ফুলটাইম পলিটিশিয়ান হতে পারতাম। আমার লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা। এরপর আস্তে ধীরে বুঝেশুনে রাজনীতিতে মনোযোগ দিতাম। হুট করে রাজনীতিতে জড়িয়ে যেতে চাইনি। মানুষের দুটি মৌলিক অধিকার আছে- একটা ভোট দেওয়া আরেকটা নিজের পছন্দের রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া।’
সাকিবের রাজনীতিতে আসা অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেননি। তবে তার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে দাবি করেছেন এই তারকা ক্রিকেটার। এমনকি মাগুরায় এখনও নির্বাচন করলে তিনিই জয়লাভ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাকিবের ভাষ্য, যারা বলছে রাজনীতিতে আসা ঠিক হয়নি তাদের বেশিরভাগই মাগুরার বাইরের। মাগুরার ভোটাররা বিশ্বাস করছে কোনটা- এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাকে না চাইলে ভোট দেবে না। ব্যাপারটা তো খুব সিম্পল। আমি যদি আজও নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার লোকজন আমাকে ভোট দিতে আসবে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব।
তিনি বলেন, আমি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে চেয়েছি। আপনি সিস্টেমের মধ্যে না থাকলে সিস্টেম পরিবর্তন করবেন কীভাবে? এখন যারা দেশ চালাচ্ছে, সিস্টেমের বাইরে থাকলে কি কোনো পরিবর্তন আনতে পারত? এটা মানুষের ব্যাপার। আমি মনে করি যখন রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি তখন ব্যাপারটা ঠিক ছিল। আমি এখনও বিশ্বাস করি আমি ঠিক ছিলাম।
নিজের ভাবনা নিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, আমার ভাবনা ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা। আমার মনে হয়েছে ওদের জন্য কিছু করতে পারব, তারাও আমাকে চায়। আমার নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ সন্দেহ প্রকাশ করবে যে আমি যদি আবারও দাঁড়াই আবার জয়ী হবো।
Leave a Reply