1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
  3. editorsobujbangladesh@gmail.com : sumona akter : sumona akter
ইজিবাইক চলছে টাকার জোরে - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৭:২১ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

ইজিবাইক চলছে টাকার জোরে

ইজিবাইক চলছে টাকার জোরে

স্টাফ রিপোর্টার॥
রাজধানীর ঢাকার রাজপথে অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে তরিতরকারি, সবজি, মাছ, শীতের কাপড়, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। ফুটপাত সে তো বহু বছর ধরেই হকারদের দখলে। সব মিলে রাজধানীর কোনো অংশ আর খালি নেই। এতে যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।

বাড়ছে যানজট ভোগান্তি। অবৈধ যান চলাচল ও রাস্তা ফুটপাত দখলকে কেন্দ্র করে মাসে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশ। ভুক্তভোগিরা জানান, নেতাদেরকে টাকা না দিলে অবৈধ যান কোনোভাবেই রাস্তায় নামানো যায় না। আর রাস্তা দখল করে ভ্যান রেখে বেচাবিক্রিতেও পুলিশকে টাকা দিতে হয়। আর ফুটপাতের টাকাও পায় প্রভাবশালী নেতা হয়ে পুলিশ। ফুটপাত থেকে লাইনম্যানের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই চাঁদা তোলা হয়। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, নগরবাসীর যাতায়াত ও চলাচল নির্বিঘœ করতে না পারলে কোনোভাবেই ভোগান্তি কমবে না। রাজধানী ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এজন্য সরকারকে কঠোর হতে হবে। সরকার ইচ্ছা করলে একদিনেই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যা কমপক্ষে ১৭ লাখ। এর মধ্যে ১০ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান। বাকি ৭ লাখ ইজিবাইক। আর ঢাকায় এই সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১০ লাখ রিকশা বাকি ২ লাখ ইজিবাইক। এসব অবৈধ যান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই চাঁদা তুলে থাকে। চাঁদার একটা বড় অংশ পায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।

অটোরিকশার চালক ও মালিকরা বলেছেন, বিধি অনুযায়ী অবৈধ হলেও রাস্তায় চলতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ একদিকে যেমন এলাকার নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে চলেন, তেমনি সড়কে তাদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেই পুলিশ তাদের কাছে ‘ম্যানেজড’। অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হলে এই দুই পক্ষ, নেতা ও পুলিশ-উভয়ে বড় অঙ্কের মাসোহারা হারাবে। সে বিবেচনায় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা সহজ নয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজুলে নূর তাপস ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন। চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে সীমিত পরিসরে অভিযানও শুরু হয়েছে। তবে ঢিলেঢালা অভিযানের আঁচ লাগেনি কোথাও। আগের মতোই অবাধে চলছে নিষিদ্ধ এসব যান। চালক ও মালিকরা জানান, অভিযান শুরুর ঘোষণার পর চাঁদার পরিমান বেড়ে গেছে। আগে দিনে গাড়িপ্রতি দেড়শ’ থেকে দুশ টাকা দিলেই চলতো। এখন প্রতিটি রুটে চাঁদার পরিমান ৫০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয় নিয়মিত। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে বছরে আড়াই থেকে সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে থাকেন অটোরিকশার চালক-মালিকরা। অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকার ভাগ স্থানীয় নামধারী কিছু নেতা, মাস্তান, সন্ত্রাসী, থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের মধ্যে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ হয়। এ কারণেই এই বিপুল অঙ্কের অর্থের উৎস সহজে বন্ধ করতে রাজি নন কেউ। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরা যদি অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়, তবে প্রতিবাদকারীদের নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরাই তখন অপরাধী বনে যান। অটোরিকশার ক্ষেত্রে ঘটছে সেটিই। সরেজমিনে রাজধানীর মুগদা, মান্ডা, হাজারীবাগ, জিগাতলা, কামরাঙ্গীরচর, দক্ষিণখান, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, ডেমরা, বাসাবো ও মাদারটেকসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকাতেই ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বিভিন্ন এলাকার রিকশাচালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

চালক-মালিকরা জানান, অটোরিকশা চালানোর জন্য প্রতিটি এলাকাতেই সুনির্দিষ্ট ‘ব্যবস্থা’ আছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের যৌথ উদ্যোগে ‘লাইনম্যান’দের মাধ্যমে প্রতিটি ইজিবাইক ও রিকশার জন্য একটি করে কার্ড ইস্যু করা হয়। এই কার্ডে উল্লেখ থাকে, কোন ইজিবাইক বা রিকশা কোন এলাকা পর্যন্ত চলতে পারবে। আর এই কার্ডের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে এক হাজার টাকা করে দিতে হয় লাইনম্যানকে। তবে যেসব এলাকা ভিআইপি হিসেবে পরিচিত (উত্তরা, ধানমন্ডি, মতিঝিল, মিরপুরের মতো ), সেসব এলাকায় এই ‘লাইন খরচ’ তথা মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২ হাজার টাকা। এই টাকা না দিলে নির্ধারিত এলাকার মধ্যে ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে কোনো রিকশার কার্ডে উল্লেখ করা এলাকার বাইরে গেলে সেটি ধরা পড়লে আবার ট্রাফিক পুলিশকে ‘খুশি করে’ গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। তাতে একেকবার খরচ সর্বনি¤œ ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।

ব্যাটারিচালিক রিকশাচালকরা জানান, প্রতিটি এলাকার জন্য কার্ডের রঙ হয় আলাদা। আবার একেক এলাকার কার্ডে চিহ্নও থাকে আলাদা আলাদা। কোনো এলাকার কার্ডে থাকে কাঁঠাল, তো কোনো এলাকার কার্ডে ইলিশ মাছের ছবি। একইভাবে নানা ধরনের ফুল ও ফল ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিভিন্ন এলাকার চিহ্ন হিসেবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী বলেন, গত প্রায় এক দশকে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য বেড়েছে। কিন্তু এসব রিকশার ব্যাটারি তিন থেকে ছয় মাস পর অকেজো হয়ে যায়। সেই অকেজো ব্যাটারি নিঃশেষ করার কোনো উপায় দেশে নেয়। যে কারণে এটি পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতি। আবার এ রিকশার ব্যাটারি চার্জ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ খরচ হয়। তাই আমরা চাই না, এসব অটোরিকশা চলুক। আমরা দুই সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার লিখিতভাবে বলেছি এসব রিকশা উচ্ছেদ করার জন্য। ইজিবাই ও ব্যাটারিচালি রিকশার ‘লাইন ভাড়া’ থানায় থানায় জমা হওয়ার বিষয়ে জানতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটা নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। অবৈধ এসব যান উচ্ছেদে অভিযানও শুরু করেছে পুলিশ। যদিও ঢাকায় গত কয়েক দিনে এ ধরণের কোনো অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জে ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে জোড়ালো ভাবেই।

এদিকে, রাজধানীর পাড়া মহল্লার রাস্তা অলিগলি এখন ভ্যানগাড়ির দখলে। ভোর থেকে শুরু করে শত শত ভ্যানগাড়ি তরিতরকারি, সবজি, মাছ, শীতের কাপড়, ফলমূল, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়েই বিক্রি করছে। এতে করে রাস্তা দখল হয়ে যান চলাচলের বিঘœ ঘটছে। অনেক এলাকায় ভ্যানের ভিড়ে পথচারিও হাঁটতে পারে না। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের চলাফেরা নেই। তা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতো। সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, এসব ভ্যান রাস্তা দখল করে রাখার জন্যও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকে চাঁদা দিতে হয়। এলাকাভেদে প্রতিটি ভ্যানের জন্য দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকা করে দিতে হয়। এর মধ্যে ৫০ টাকা পায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ফাঁড়ির ইনচার্জ। কদমতলী থানার দনিয়া এলাকার বর্ণমালা স্কুলে রোডে প্রায় একশ’ ভ্যানে করে বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে। ভ্যানগুলো রাস্তা দখল করে রাখায় গলির ভিতরেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি ভ্যান থেকে চাঁদা তোলে মামুন নামে এক সবজি বিক্রেতা। মামুন চাঁদা তুলে শনিরআখড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআইর কাছে দেয়। কয়েকজন সবজি বিক্রেতা জানান, চাঁদা না দিলে মামুন পুলিশকে খবর দিয়ে এনে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায়, হয়রানি করে।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »
error: Content is protected !!