১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১২:২৬ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
রেখা খাতুন,ইবি।
নান্দনিক স্থাপত্য, সবুজ ছায়াঘেরা ক্যাম্পাস, পাখির অভয়ারণ্য এবং নানা ফুলে সজ্জিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এ ছাড়া শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এখানে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য তৈরি হয়। কিন্তু দিনে দিনে এই স্বর্গরাজ্যটি আবর্জনার ভাগাড় হয়ে উঠছে, যা বর্তমানে জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে।
ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন সংকট ও জনসচেতনতার অভাবে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে পরিবেশ। বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে চড়ুইভাতি, পার্টি, জন্মদিনসহ ছোটখাটো নানা আয়োজন শেষে ফেলে যাওয়া ময়লা ক্যাম্পাসের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে আগত দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া খাবারের প্যাকেট, দোকানের আবর্জনা, পলিব্যাগ, বোতল, খাবার মোড়ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে-সেখানে। ক্যাম্পাসের ঝাল চত্বর, বটতলা, অনুষদ ভবন ও রবীন্দ্র-নজরুল ভবনের চারপাশ, ফুটবল মাঠ, ক্রিকেট মাঠসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দুপাশেই আবর্জনা বেশি। এ ছাড়া সাদ্দাম হোসেন হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শেখ রাসেল হল ও জিয়া মোড় এলাকায় চারপাশে আবর্জনার স্তূপ জমে উঠেছে। সর্বত্রই পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ান টাইম প্লেট, গ্লাস, খাবারের প্যাকেটে জমছে নোংরা পানি। এসব জায়গা ইঁদুর, তেলাপোকা ও মশা-মাছির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেখা মেলাই ভার। মাঝে মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তারুণ্য ও পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনভয়েসসহ কিছু সচেতন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে দুদিন না যেতেই আবার আগের অবস্থায় চলে আসে।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সভাপতি মোখলেসুর রহমান সুইট বলেন, ‘সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না করলে অবশ্যই পরিবেশের ক্ষতি করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এলোমেলোভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছি, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। আমরা সংগঠনের উদ্যোগে কয়েকবার ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়েছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।’
আল-হাদিস ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান মাহমুদ বলেন, ‘এ দায় দুই পক্ষেরই, শিক্ষার্থী এবং কর্তৃপক্ষ। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ময়লা ফেলা আমাদের অসচেতনতার পরিচয়। একই সঙ্গে ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখায় উদ্যোগী না হওয়া কর্তৃপক্ষের দায়। ক্যাম্পাসে এভাবে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকলে বাইরের মানুষদের কাছেও ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের উপরেজিস্ট্রার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় দুই যুগ আগে প্রকৌশল অফিসের উদ্যোগে ডাম্পিং ব্যবস্থা করা হলেও বর্তমানে তা অকার্যকর। ক্যাম্পাসে যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপের ব্যাপারটি আমাদেরও দৃষ্টিকটু লাগে। অথচ সুইপারসহ লোকবল সংকটের কারণে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না। দু-একজন সুইপারের পক্ষে পুরো ক্যাম্পাস কাভার দেওয়া সম্ভব নয়। লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে প্রশাসনকে কয়েকবার আবেদন জানিয়েও কোনো দৃশ্যমান সমাধান পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আবার প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করব এবং অতিদ্রুত সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করব।’
Leave a Reply