১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১০:৪৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
মহানগর কমিটি সামনে রেখেই এমন গায়েবি মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধনী উত্তরার পশ্চিম থানায় খালেদা জিয়াকে হত্যা চেষ্টায় একটি মামলা হয়েছে গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার। ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল উত্তর সিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে উত্তরা এসেছিলেন, বাদী সাবেক যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর এজাহারে উল্লেখ করেন সেই দিন উত্তরা ৩ নং সেক্টরে খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে হামলা করা হয় এবং খালেদা জিয়াকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এজাহারে বর্নিত দিনে উত্তরায় খালেদা জিয়ার বহর হামলার শিকার হয়নি। হামলা শিকার না হলেও সেই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশের সাথে আসামী করা হয় বিএনপির একনেতাকেও।
জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন সেটির শেষ লাইনে বলা হয় হামলার ঘটনাটি সেদিন ( ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ) প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারও করা হয়। কিন্তু সেই দিনের বা পরেরর দিনের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় উত্তরায় খালেদার বহরে হামলার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অনেকেই বলছেন সেই দিন উত্তরায় খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে কোন হামলা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উত্তরার একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রতিবেদকে বলেন, উত্তরায় খালেদার গাড়ী বহরে কোন হামলা সেই দিন হয়নি। খালেদা জিয়া ৩ নং সেক্টরের দুটি মার্কেটে লিফলেট বিলি করে যাওয়ার সময় জসিমউদদীন রোডের পশ্চিম পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শন করে। পুরো সময়টি তারা সেখানেই ছিল। খালেদা জিয়া চলে চাওয়ার পর তারা রাজলক্ষীর দিকে অগ্রসর হয়, তৎক্ষনে বিএনপি নেতাকর্মীরা চলে যায়। তিনি আরো বলেন, মহানগর বিএনপির কমিটি সামনে রেখে সম্পূর্ণ স্ট্যানবাজি করার জন্য এ গায়েবি মামলাটি দেওয়া হয়। উর্দেশ্য হচ্ছে আলোচনায় থাকা। ম্যাডামের নাম ব্যবহার করে গায়েবি এই মামলাটি দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। গত সরকারের সময় ম্যাডামের উপর ঢাকায় এবং ফেনিতে মিলে মোট চারটি হামলা হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরায় এ পর্যন্ত দখল, ছিনতাই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় আজমল হুদা মিঠু, মিলন মিয়া ও আলাউদ্দিন সরকার টিপুকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত এই তিনজনই সাবেক যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীরের একনিষ্ট কর্মী। এই বিষয়টি আড়াল করতেই এমন একটি গায়েবী মামলার আশ্রয় নেওয়া হয়।
মামলার আসামী তালিকা পর্যাচোলনা করে দেখা গেছে,হুকুমের আসামী হিসেবে প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২নং হুকুমের আসামী করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। দলের দ্বিতীয় ব্যাক্তি হিসেবে মামলায় ওবায়দুল কাদেরের নাম দেওয়া হলেও সে সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আর মামলাটির ৭৯ নং ক্রমিক এ আসামী হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে ইসহাক মিয়াকে। ইসহাক বর্তমানে ৫২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি। মামলায় তাকে তুরাগ থানা সেবকলীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ তিনি দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর থেকে তুরাগের হরিরামপুর ইউনিয়ন বিএনপির নানা পদে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সাথে গত ১৮ বছরে তুরাগ থানায় ৭ টি এবং উত্তরার অপর দুটি থানায় মোট ৮ টি রাজনৈতিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। একটি মামলায় ৩০ মাসের সাজাও পান তিনি। মামলায় ৮১ নং আসামী করা হয়েছে কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার নাইম হাসানকে। ঘটনার সাথে তার কোনই সংশ্লিষ্টতা নেই।
১৯ এপ্রিল উত্তরায় কি ঘটেছিল : সে দিনের ঘটনা নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেনীর একটি দৈনিকের অনলাইলে লেখা হয়,
” ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ১৯ এপ্রিল রোজ রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো মাঠে নেমেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি উত্তরা-১ নম্বর এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচার চালাতে তাঁর গুলশানের বাসা থেকে বের হন। তিনি উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরে পৌঁছালে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২৫-৩০টি মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর গাড়িবহরে যোগ দেন। গাড়িবহর কিছু দূর এগুলে উল্টো দিক থেকে উত্তরা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা খালেদা জিয়ার গাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ‘আমার ভাই মরল কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’, ‘পাকিস্তানের প্রেতাত্মা, পাকিস্তানে ফিরে যা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা পুলিশ ও তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তিরা খালেদা জিয়ার গাড়ির সঙ্গে এগোতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর খালেদার গাড়ি মূল সড়কে উঠে দ্রুতবেগে চলে যায়।
পরে বিএনপির চেয়ারপারসন উত্তরা-৩ নম্বর সেক্টরে এসবি প্লাজা ও আমির কমপ্লেক্সে গিয়ে তাবিথের পক্ষে প্রচার চালান। তিনি বিভিন্ন দোকানে ঢুকে দোকানি ও ক্রেতাদের কাছে তাবিথের পক্ষে ভোট চান। বিএনপির কয়েক শ নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে ছিলেন।” (হবহু নিউজটি তুলে ধরা হলো )
এদিকে বিগত সরকারের সময় সর্বমোট চারবার খালেদা জিয়ার গাড়ী বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যম ও বিএনপি সূত্রে জানাগেছে, ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি প্রচারণার সময় রাজধানীতে পৃথক দিনে তিন বার তার গাড়িবহরে হামলা হয়। আর চতুর্থ হামলাটি হয় ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর খালেদা জিয়ার নিজ জেলা ফেনীতে। সে সময় রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দেওয়ার জন্য কক্সবাজার যাচ্চিলেন তিনি। এর বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপর কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি।
Leave a Reply