১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৩:৪১ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
এলজিইডি’র অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও বর্তমানে এলজিইডি কল্যাণ সমবায় সমিতি (এলকেএসএস)-এর ম্যানেজার নূরুল ইসলাম অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন আলোচনা এলজিইডি জুড়ে। অভিযোগে প্রকাশ, শুধুমাত্র অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমেই ঢাকায় বহুতল বাড়িসহ কয়েকটি বিলাসবহুল ফ্লাটের মালিক এই নূরুল ইসলাম। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার এফডিআর। ব্যক্তিগত গাড়িও আছে একাধিক। গ্রামের বাড়িতে মার্কেট, বাংলো, কৃষি খামার, একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। যা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্ট তলব এবং তদন্ত করলেই অভিযোগের প্রমান মিলবে বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী অভিযোগকারীগণ।
তারা জানান যে, নূরুল ইসলাম এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহনসহ বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সে সময় নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছিল।
অবসরের পর এলজিইডি’র সদ্য অবসর যাওয়া প্রধান প্রকৌশলী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম দোসর আলী আখতারের আশির্বাদে এলজিইডি কল্যাণ সমবায় সমিতি (এলকেএসএস)-এর ম্যানেজারের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন নূরুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পর এলজিডিতে তৈরি করেছেন নিজস্ব সিণ্ডিকেট, আর এই সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে বদলী ,নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্য শুরু করেন দেদার।
আলী আখতারের প্রভাবে তিনি এলজিইডি ভবনের আরডিইসি ভবনের ১৪ তলায় একটি বিশাল কক্ষ বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ অফিসিয়াল কোনো কাজ এখানে করেন না বললেই চলে।
অভিযোগকারীরা জানান, নূরুল ইসলাম এখানেবসেন বিকেলে। কখনো লাঞ্চ করেন, আবার কখনো দুপুরের পরে গিয়ে বিশ্রাম নেন। আর এসময় তার কক্ষে বিভিন্ন বয়সের নারীদের আনাগোনা দেখা যায়। নূরুল ইসলামের রমনীপ্রীতিও রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন। এই রুমে শুধু নূরুল ইসলাম নারী নিয়ে বিনোদন করতেন না এখানে আলী আক্তারও গোপনে গিয়ে রুখসি নামের এক সুন্দরী কর্মচারীকে নিয়ে সময় কাটাতেন। সূত্র জানায় এখনও অনেক কর্মকর্তা সুন্দরী কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে গোপনে সময় কাটায়।
সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলী আখতারের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি’দের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নানান অনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন নূরুল ইসলাম।তিনি দিনের বেলা অফিস টাইমে এলকেএসএস-এ অফিস করতেন না। এখনো করেন না। সারা দিন বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের কক্ষে ঘুরাঘুরি খোশগল্প আর তদবির করেন। নূরুল ইসলামের দৌরাত্মে অনেক প্রকল্প পরিচালক রীতিমতো ত্যাক্ত বিরক্ত।
অবাক করার বিষয় হলো- হাসিনা সরকারের পতনের পর আলী আখতার অবসরে গেলেও রহস্যজনক কারণে বহাল তবিয়তে আছেন এলকেএসএস-এর ম্যানেজার নূরুল ইসলাম!
অভিযোগ রয়েছে, পরোক্ষভাবে নিজে এলজিইডি’র ঠিকাদারী করেন। পাশাপাশি প্রকল্পের বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ তদবির করে পছন্দের ঠিকাদারদের পাইয়ে দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করছেন। টাকার বিনিময়ে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য করছেন।
সূত্র জানায়, গত প্রায় তিন মাসে এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে বিভিন্ন ২৫০ জনকে রিপ্লেসমেন্টে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পদ বিশেষ প্রত্যেকের কাছ থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হারে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে।
আলী আখতারের অবসরের পর বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আবদুর রশীদ মিয়াকে ব্যবহার করেও তদবীর, বদলী-নিয়োগ বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন নূরুল ইসলাম। প্রতিবেদকের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় নূরুল ইসলামের সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় আড়াইশ রিপ্লেসমেন্ট নিয়োগ দিয়ে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। উত্তরে তিনি বলেন, আমি নিজের ইচ্ছায় কোন নিয়োগ দেইনি। সকল নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশে এবং নিয়োগে আমি একটি টাকা নেইনি সব প্রধান প্রকৌশলীকে বুঝিয়ে দিয়েছি। আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে এলজিইডির কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা প্রতিবেদককের নিকট নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নূরুল ইসলাম খুব ধুর্ত প্রকৃতির মানুষ আমরা অনেক অনুরোধের পরও সে আমাদের অনুরোধ না রেখে ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে।
এলজিইডি’র অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও বর্তমানে এলজিইডি কল্যাণ সমবায় সমিতি (এলকেএসএস) এর ম্যানেজার মো. নূরুল ইসলাম এর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে এলজিইডি প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এলজিইডি’র সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
Leave a Reply