৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১০:২৫ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র আওতায় বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপুর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে শরীফ হোসেন কে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেয়া হয়। শরীফ হোসেন প্রেষণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল -৫ (কাওরান বাজার) এ বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন।
ডিএনসিসি’তে কর্মরত থাকাবস্থায় শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তিনি এলজিইডিতে ফিরে প্রকল্প পরিচালকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগদান করেন। পুর্বে কর্মস্থলে থাকাকালীণ তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) অভিযোগ দিলেও তা আলোর মুখ দেখে নি।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার গৃহিত বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ত্বরানিত করার লক্ষ্যেই প্রকল্পগুলোতে পিডি পদটি সৃষ্টি করা হয়। আবার বিভিন্ন প্রকল্পের পিডিদের স্বেচ্ছাচারিতা,অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। এসব কারনে প্রতি বছর রাষ্ট্রের কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন ব্যহত হয়।
ইতোপূর্বে শরীফ হোসেন মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইরে উপজেলা প্রকেীশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীণ বিভিন্ন ঠিকাদারের সাথে আতাঁত করে ভূায়া বিল, ভাউচার ও ঠিকাদারী লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেই কাজ করতেন বলে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে অনেক আগের বিষয় হওয়ার কারনে অনেকেই এবিষয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
তবে এলজিইডি ভবনে গিয়ে জানা যায় উপজেলা প্রকৌশলী থাকাকালীণ সময় থেকেই নানা কারনে আলোচিত শরীফ হোসেন। শেরপুরে একটি প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্বরত থাকাবস্থায় প্রকল্পটিতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়, আর এসব বিষয়ে তার সম্পৃক্ততা থাকার কারনে তাকে শাস্তিমূলক বদলী বান্দরবনে করা হয়েছিল বলে দুদকের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সেখানে গিয়ে শরীফ হোসেন নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তাই এলজিইডি’র সুনাম অটুট রাখতে তাকে বরখাস্ত করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হন। শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে সীমাহিন অভিযোগ থাকার পরেও কতৃপক্ষ তাকে নতুন করে পিডি পদে পদায়ন করায় বিস্মিত এলজিইডি’র অনেক কর্মকর্তাই। পিডি পদে যোগদানের পর গোটা প্রকল্পে নিজস্ব একটি বলয় তৈরী করেন শরীফ হোসেন।
বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (৩ য় পর্যায়) প্রকল্পটিতে কুমিল্লা জেলার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলাও অর্ন্তভুক্ত। মূলত এই তিনটি জেলার গ্রামীণ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থ পিডি’র অনুমোদন ক্রমেই ব্যবহার করা হয়। ক্ষমতার সর্বেসর্বা শরীফ হোসেনের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র, অর্থ বরাদ্দ এবং অর্থ ছাড়ের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করতে বাধ্য। প্রতিটি বরাদ্দের জন্য সর্বনিম্ন পিডির জন্য ২ শতাংশ, অফিস খরচ ০.৫ শতাংশ, অডিট বাবদ ১ শতাংশ, এবং মাঠ পর্যায়ে আরো ৪-৫ শতাংশ দিতে হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আবার চুড়ান্ত বিলের সময় আরো ৫-৭ শতাংশ হারে কমিশন দিতে হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে কয়েকজন ঠিকাদারের জানান, পিডি স্যাার সরাসরি আমাদের নিকট টাকা নেন না তবে অফিস মারফত দিতে হয়। তবে সব কাজে এক রেট নয়। কাজ ভেদে কমিশনের রেট পরিবর্তিত হয়। চাকরি জীবনে অগাধ সম্পদের মালিক শরীফ হোসেন ও তার স্ত্রী তাহমিনা শরীফ। তার নিজ এলাকা নড়াইল জেলার লোহাগঞ্জ থানার লাহুরিযা ডিগ্ররিচরে আলীশান বাড়ি করেছেন। যার ফিটিংস, টাইলস ও মার্বেল বিদেশী বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। আরো উল্লেখ্য পান্থপথে ৮,৯ ও ১০/৩ ফ্রী স্ট্রিট, কাঠালবাগানে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে স্ত্রী’র নামে। ঢাকা শহরে হাসান এসোসিয়েটের শান্তিনগর মোড়ের পাশ্বেই ৪১ চামেলীবাগ, গ্রীণ পিস ভবনে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এবং এই ভবনে তিনি বসবাস করেন বলে নিরাপত্তা কর্মীরা জানায়। অভিযোগের বিষয়ে শরীফ হোসেনের বক্তব্যের জন্য অগারগাঁও অফিসে গেলে তার স্টাফরা জানায় তিনি মন্ত্রণালয় গেছেন। ফোনে যোগাযোগের চেস্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply