১৩ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৪:২৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
এস এ আখি: শিশু আমাদের আগামী প্রজন্ম, আমাদের আশা এবং ভবিষ্যত। কিন্তু আজকের দিনে এই শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়? প্রতিদিনই দেশে-বিদেশে শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও পাচারের খবর গণমাধ্যমে আসছে। প্রশ্ন উঠছে, কোথায় তাদের নিরাপত্তা? কেন বারবার আমাদের শিশুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও অত্যাচার ঘটছে? কখন আমরা একটি সুরক্ষিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো, যেখানে শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে?
দেশজুড়ে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সমাজের জন্য একটি মারাত্মক সংকেত।
সম্প্রতি ঢাকার কেরাণীগঞ্জের আটি বাজার সংলগ্ন নয়াবাজার গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু । এর আগে বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে ৮ বছর বয়সী আছিয়া ধর্ষণের শিকার হয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
বর্তমান পরিস্থিতি:
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের নিরাপত্তা আজ বড় এক প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই শিশুদের ওপর ধর্ষণ, নির্যাতন, পাচার, এবং শারীরিক নিপীড়নের খবর আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয়, সেসব ঘটনার মধ্যে সবার আগে উঠে আসে শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা। একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংস্থাগুলোর রিপোর্টে দেখা গেছে, গত বছরেই প্রায় ৬,০০০ এরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যা আমাদের সমাজের জন্য একটি অশনি সংকেত।
এছাড়া, বেশিরভাগ শিশু যে অপরাধীদের দ্বারা শিকার হচ্ছে, তারা সাধারণত পরিচিত কেউ। পরিবারের সদস্য, শিক্ষক বা প্রতিবেশী, এমনকি বন্ধুবান্ধবও শিশুদের শিকার করার মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, যদি আমাদের নিজেদের কাছেই নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে এই শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়?
শিশু ধর্ষণের পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করে। মূলত সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্য, অপরাধমূলক মনোভাব, শিশুদের প্রতি নিরাপত্তাহীনতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা এসব ঘটনার জন্য দায়ী। শিশু ধর্ষণ অনেক সময় পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা ঘটে থাকে, যেমন: পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী, শিক্ষক বা অন্য কোন পরিচিত ব্যক্তি।
আইন ও বিচার ব্যবস্থা:
বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে শিশু নির্যাতন (প্রতিরোধ) আইন ২০০০ অন্যতম। তবে, এই আইনটির বাস্তবায়ন এখনো যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি। আইনের প্রতি মানুষের অবজ্ঞা এবং দুর্বল বিচার ব্যবস্থার কারণে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি থেকে মুক্ত থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতি একটি ধ্বংসাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়, যেখানে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হয় এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তা দিন দিন হুমকির মুখে পড়তে থাকে।
শুধুমাত্র একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজই পারে এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করতে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। আইনজীবী, পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
Leave a Reply