১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১২:০৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
মাসরুল হাসান কাজলঃ
আহা ব্যস্ত জীবন সুখের নাচন সময় বাধা সুচি,দু:খগুলো থাকনা দুরে যুদ্ধ করে বাঁচি….। গীতিকার রোস্তম মল্লিকের লেখা এই গানটি ক‘জনে শুনেছেন জানিনা। তবে আমি প্রায় শতবার এই গানটি শুনেছি। যতবার এই গানটি শুনেছি ততোবারই আমি বর্তমান সমাজের নানাবিধ অসংগতির চালচিত্র দেখতে পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে গানের কথাগুলোর সাথে যেন চলমান অবক্ষয়মুখী সমাজ জীবনের অভুতপূর্ব একটা মিল রয়েছে। একই সাথে শাসন ব্যবস্থার ভুলত্রুটিগুলোর দিকেও স্পস্ট ইংগিত করা হয়েছে।
গীতিকার রোস্তম মল্লিককে আমি চিনি মাত্র এক বছর হয়। এই ৩৬৫ দিনে তার সাথে কমপক্ষে অর্ধশতবার আমার দেখা হয়েছে। তার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে তিনি একজন স্বভাব গীতিকবি। ভাষাতত্ত্বে তার রয়েছে অগাধ দখল। বাংলা ভাষার ছন্দ রীতিকে তিনি আয়ত্ব করেছেন বহু আগেই। তার বেশ কয়েকখানা কাব্যগ্রন্থ পাঠ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সে সব গ্রন্থের কবিতা পড়ে আমি নিজেই আতকে উঠেছি। অধিকাংশ কবিতাকেই মনে হয়েছে একেকটা শব্দ বুলেট বা শব্দ বোমা।
তবে আজ আমি তার কবিতা নিয়ে আলোচনা করবো না। আজ আমি তার রচিত গানগুলো নিয়ে আরোচনা করতে চাই। আমার জানামতে আজ অব্দি তিনি ২ হাজারের অধিক গান লিখেছেন। এসব গানের মধ্যে সবধারার গানই রয়েছে। যেমন-আধুনিক ফোক গান, বাউল ধারার গান, জীবনধর্মী গান, রোমান্টিক গান,ইসলামী গান, আঞ্চলিক গান প্রভৃতি। এসব গানের মধ্যে যেমন সুরের আনন্দ কল্লোল রয়েছে তেমন আছে বিরহ বেদনা। কিছু গান শুনলে চোখে জল এসে যেতে বাধ্য।
গীতিকবি রোস্তম মল্লিক শব্দের চাষাবাদে জীবনের ছবি আঁকেন। তার একেকটি গান একেকটি গল্প বা উপন্যাসের মত। গানটি শুনলে মনে হয় আমরা যেন একটি জীবন ছবি দেখতে পাচ্ছি। সব থেকে বিস্মিয়ের ব্যাপার হলো তিনি যে কোন থিমের ওপর তাতক্ষণিকভাবে গান লিখে সুর করতে পারেন। যেমন পদ্মা সেতুর ওপর একটি গান তিনি মাত্র তিন ঘন্টায় রচনা করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন। তার লেখা গানের বিষয়বস্তু এবং গভীর তত্ত্বের অনুধাবন একজন দার্শনিকের গবেষণাকেও অতিক্রম করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রখ্যাত সুরকার ও শিল্পী মান্নান মোহাম্মদ।
সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবাজারের আগুন ট্্রাজেডির ওপর এবং ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান একুশের ওপর ২ টি গান লিখে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন। এই গান দুটি যারাই শুনেছেন তরাই প্রশংসা করেছেন। এমন কি গান দুটি সরকারী আর্কাইভে সংরক্ষন করার প্রস্তাবও উঠেছে নানা মহল থেকে।
তার আরেকটি বাউলধারার গান “ মানুষ চিনলাম নারে আমি মানুষ চিনলাম না“ লালনধারা বা বাউলধারার শিল্পীদের কছে অতি প্রিয়তা পেয়েছে। গানটি এখন সারাদেশের বাউল শিল্পীদের কন্ঠে শোনা যাচ্ছে। তিনি এখন মুক্তিযুদ্ধের গান লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। “যুদ্ধে গেল একটি ছেলে ফিরলো না আর ঘরে“ শিরোনামে তিনি যে গানটি লিখেছেন তার কথাগুলো শুনলে যে কারো চোখে জলের ধারা নামতে বাধ্য।
এমন বিষয়বস্তুভিত্তিক অসংখ্য গান তিনি অবিরাম লিখে চলেছেন। ফলে দেশ বিদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের কাছে তিনি অগ্রগন্যের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তারা গীতিকার রোস্তম মল্লিককে কিংবদন্তী শিল্পী ,বাউল সম্্রাট শাহ আব্দুল করিমের রিপ্লেচমেন্ট হিসাবে বিবেচনা করছেন। এই প্রাপ্তি গীতিকার রোস্তম মল্লিকের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন বলে আমি মনে করি।
রোস্তম মল্লিকের গানগুলো শুনতে বাংলাদেশের সুনামধন্য মিউজিক কোম্পানী জি সিরিজ, প্রাইম মিউজিক,প্রাইম টিভি বিডি, ইউটিউব চ্যানেল ও বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোতে লগইন করতে পারেন। আমাদের বাংলা গানের ভান্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করতে আমি এই গীতিকবির কাছ থেকে আরো ভালো ভালো গান প্রত্যাশা করছি। তিনি দীর্ঘজীবি হোন এবং আপন সৃষ্টিকর্মের মধ্যে বেঁচে থাকুন হাজার বছর এটাই আমার প্রার্থনা।
মাসরুল হাসান কাজল
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও গবেষক
Leave a Reply