১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১২:৫৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে দেশের সর্বত্র পটপরিবর্তন হতে থাকে। আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সরকারের সকল দপ্তর-পরিদপ্তর থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে সরে যাচ্ছেন। কোথাও রাখা হচ্ছে না আওয়ামী পন্থীদের। তবে ব্যতিক্রম ঘটাচ্ছে সরকারের তথ্য অধিদপ্তর। ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগের আস্থাভাজনদেরকেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া দিচ্ছে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়া আগের দিন একযোগে ৪২টি মন্ত্রণালয় থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেয়, তথ্য অধিদপ্তর। শপথ নেওয়ার পরদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে চাইলে প্রত্যাহার হওয়া জনসংযোগ কর্মকর্তারাই সবকিছুর ব্যবস্থা করেন। গত ১৭ আগস্ট এক অফিস আদেশে দেয় তথ্য অধিদপ্তর। সেই আদেশে দেখা গেছে, ২৭ জন জনসংযোগ কর্মকর্তার পদায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ৫ জন নতুন জনসংযোগ কর্মকর্তা। বাকি ২২ জনই আওয়ামী লীগ সরকারে আস্থাভাজন বলে পরিচিত। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূরের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর, পুরোনো জনসংযোগ কর্মকর্তারা নতুন করে মন্ত্রণালয়ে পদায়ন পাওয়ায় বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসকল জনসংযোগ কর্মকর্তা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের আস্থাভাজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারাই মন্ত্রণালয় পরিবর্তন করে অন্য মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে আসছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনেকে একই মন্ত্রণালায়ের কয়েক বছর টানা দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার কেউ কেউ দপ্তর পরিবর্তন করে মন্ত্রণালয়ে ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকারের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন পবন চৌধুরী। এখনও তিনি আগের মন্ত্রণালয়ের বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অনুরূপ দীপংকর বর বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে আগেও ছিলেন, এখনও সেই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ সামলাবেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন তিনি একই দপ্তরে দায়িত্ব পেয়েছেন। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন বিবেকানন্দ রায়। তিনি নতুন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছে। অপরদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মো. জাহাঙ্গীর কবির খানকে প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবং মহিল ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ মাহমুদুল হাসানকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মত বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রধান করা হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের রেজাউল করিম সিদ্দিককে রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অর্থ প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন বর্তমানে মো. আলমগীর হোসেন’ তিনি বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূইয়াকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হয়েছে। এতে করে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জনসংযোগ কর্মকর্তার হিসেবে দায়িত্ব ছিলেন ড. মো. রেজাউল করিম। নতুন করে তিনি একই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ সামলাবেন। আগে খাদ্য মন্ত্রণালের জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন মো. কামাল হোসেন। তিনি এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. মাহবুবুর রহমানকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। সমাজ কল্যাণের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে কৃষি মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন জাকির হোসেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মো. আবুবকর সিদ্দীক একই দপ্তরে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান খান পূর্বে ন্যায় একই মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ে ছিলেন ফয়সাল আহমেদ তিনি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। ম. শেফায়েত হোসেন ছিলেন ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। এখন তিনি প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। মো. এনায়েত হোসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে আগেও ছিলেন এখনও আছেন। এছাড়া অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। নোবেল দে, আগে ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এখন তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। মো. নূর আলম আগে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে এখন তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
যে ৫ জন জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নতুন এসেছেন তারা হলেন, এ এম ইমদাদুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রনালয় এছাড়া তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। মো. সায়েম হোসেন শিল্প মন্ত্রনালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। মো. শফিউল্লাহ বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণসলয়। মুহম্মদ জসীম উদ্দিন, ডাক টেলি যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। মিজ আশরোফা ইমদাদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
অন্যদিকে মো: কামাল হোসেন বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্ব পেয়েছে তিনি আগে ছিলেন খাদ্য মন্ত্রনালয়ে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের আস্থাভাজন ও সুবিধা ভোগীরা মন্ত্রণলায়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঘুরে ফিরে এরাই সকল সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে। খোলস পরিবর্তন করে বর্তমান সরকারের সুবিধাজনক মন্ত্রনালয়ে পোস্টিং নিয়েছেন। অনেকে দুইটা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এতে করে অনেক তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের আস্থাভাজনদের আগের চেয়ে আরও ভালো ভালো মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন, তথ্য অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সুবিধা ভোগীদের বিভাগ, জেলায় কিংবা সদর দপ্তরে বদলি করতে পারত। তা না করে তথ্য অধিদপ্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে তাদের পোস্টিং দিচ্ছে। এই অফিসের মাধ্যমে একটি বিশেষ গুষ্টিকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিনিয়র উপপ্রধান তথ্য অফিসার (প্রেস) মুন্সি জালাল উদ্দীন আনুষ্ঠানিক কোনো কথা বলতে চাননি। তিনি প্রতিবেদককে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কেবলই তথ্য অধিদ্প্তরের কাজ শিরোনামে একটি প্রেসনোট দেন। সেখানে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নিয়োগ বা পদায়নের বিষয়টি উ্ল্লেখ রয়েছে। সেই নোটে বলা হয়েছে, জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ/পদায়নের বিষয়টি যখন থেকে তথ্য অধিদফতরের পরিবর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সরাসরি চর্চা করতে থাকে তখন থেকেই এ কাজে নানা জটিলতা সৃষ্টিসহ কাজের মান নিম্নগামী হতে থাকে। তথ্য অধিদফতর যখন এসব পদে পদায়নের বিষয়টি অনুশীলন করত তখন কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার বিষয় বিবেচনা করে উপযুক্ত স্থানে পদায়নের ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে যেসব কর্মকর্তা কয়েকমাস থেকে সর্বোচ্চ দুই-তিন বছর কাজ করেন তাদের পক্ষে জনসংযোগ কাজে কাকে কোথায় পদায়ন করা প্রয়োজন সেটা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। ফলে নানারকম বৈষম্য সৃষ্টি ও কর্মকর্তাদের যথোপযুক্ত পদায়নের বিষয় বিঘ্নিত হচ্ছে।
Leave a Reply