১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১:৩৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
জাহাঙ্গীর আলম:
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্টিমেটর আনোয়ার শিকদার প্রকল্পের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহের মাধ্যমে কেনাকাটায় অনিয়ম, ভুয়া আইটেম সংযোজন ও ঠিকাদারদের নিকট থেকে অতিরিক্ত ঘুষবানীজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন মর্মে তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার শিকদারের গ্রামের বাড়ি আরোহ সালিনা পাড়া, টেংগুরিয়া, টাঙ্গাইল। বর্তমান ঠিকানা – ৭/ এ, বাড়ি নং- ৪০, রোড নং- ১, আদাবর, ঢাকা। পৌরসভার বাইরে “সরকার সারাদেশে নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পটি” হাতে নেয় ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে এবং প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসে। অত্র প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও সরকার এখনো তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছাতে পারেনি। প্রকল্পের আওতায় গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে সারাদেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ-ই এর লক্ষ্য। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালিত সমগ্র দেশে সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের স্টিমেটর আনোয়ার হোসেন সিকদার। তিনি প্রকল্পের পিডি তুষার মোহন সাধু খাঁ ও ডিপিডি হানিফ এর আস্থাভাজন হওয়ায় নানা ফন্দি-ফিকির করে বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের নিকট থেকে অতিরিক্ত কমিশন নিয়ে প্রকল্পের টাকা তিন জনে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। শুরু থেকে প্রকল্পের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম করে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যেহেতু তিনি প্রকল্পের স্টিমেটর তাই প্রতিটি স্টিমেটে ভুয়া আইটেম সংযোজন ও পণ্যের মূল্য অধিক দেখিয়ে স্টিমেট তৈরি করেন এবং টেন্ডারের পর ঠিকাদারের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। প্রকল্পের শুরু থেকে বর্তমান অবধি যতগুলো নলকূপ অনুমোদন ও স্থাপন করা হয়েছে তার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ নলকূপ অকেজো রয়েছে বলে জানা যায়। ঐসব নলকূপের ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজস করে প্রয়োজনের অধিক ও নিম্নমানের পাইপ দিয়েছে। যার ফলে মাটির চাপে পাইপ ফেটে পানি ওঠা বন্ধ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ দেখিয়ে রিভাইজ স্টিমেট অনুমোদন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রায় ৩০০ টি গভীর নলকূপ ঠিকাদারের সাথে আতাত করে অগভীর নলকূপ স্থাপন করিয়েছেন এবং ঠিকাদারকে গভীর নলকূপের বিল দিয়ে অতিরিক্ত টাকা ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। স্টিমেট অনুমোদন ও বিলের জিও দিয়ে ৩-৫ শতাংশ হারে টাকা ঘুষ নেন। এভাবে নানান কায়দায় আনোয়ার হোসেন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। আনোয়ার হোসেন সিকদারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো :- বাসা নং- ৭৮,রোড নং-৬, ধানমন্ডি। চতুর্থ তলায় ৮০০০ বর্গফুটের ফ্লোরটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে। সাভার পৌরসভা সংলগ্ন বাড়ি নং-২০, রোড নং-৮, স্ত্রীর নামে পঞ্চম তলা আলিশান বাড়ি। তিনি সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন যার মূল্য প্রায় ৪০লক্ষ টাকা। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে আলিশান বাড়ির সহ এলাকায় দশ বিঘার ওপরে জমি কিনেছেন। তাছাড়াও তার পরিবারের অনেকের নামে বেনামে ব্যাংকে রেখেছেন কয়েক কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী) তুষার মোহন সাধু খাঁ-র অলিখিত নির্দেশনায় মাঠ পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সাথে যোগসাজস করে অতিরিক্ত কমিশন নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করে কমিশন বাণিজ্য, পারসেন্টেন্স নিয়ে বিল পাশে সহায়তা, চাহিদামত উৎকোচ না পেলে রি-স্টিমেট চেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের হেনস্তাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ উঠেছে অত্র প্রকল্পের প্রাক্কলনিক মো. আনোয়ার হোসেন সিকদারের বিরুদ্ধে। তারা আরো বলেন,
মাঠ পর্যায়ে দরপত্রের চাহিদামত কাজ করতে গিয়ে পানির গভীরতা/ভাল লেয়ার না পাওয়ার কারনে অনেক সময় ঠিকাদারদেরকে দরপত্রের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী কাজ করতে হয়। প্রয়োজন হয় বেশী মালামালের- নিরাপদ পানি সরবরাহের স্বার্থে। তখন নতুন করে প্রাক্কলন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীরা প্রকল্প পরিচালক বরাবর প্রেরণ করেন। আর পিডি-র টেবিলে পাঠানোর আগে তা প্রকল্পের প্রাক্কলনিক মো.আনোয়ার হোসেন শিকদার যাছাই-বাছাই করে থাকেন। যদি সঠিক মনে হয় তিনি সুপারিশ করে পিডির টেবিলে পাঠান চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগটি ও কাজে লাগিয়ে আনোয়ার হোসেন শিকদার নির্বাহী প্রকৌশলীদের জিম্মি করে থাকেন । কেননা, চাহিদামত কমিশন দিতে রাজি না হলে ওই সকল নির্বাহী প্রকৌশলীদের বিভিন্ন অজুহাতে রি-স্টিমেট নিয়ে আসতে বলেন এবং বিভিন্নভাবে হয়রানী করে থাকেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই নির্বাহী প্রকৌশলীরা তার চাহিদা পূরণ করেন।
আরো জানা যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে এক হাজার ফুট বোরিং করার কথা থাকলেও করা হচ্ছে ৭০০ ফুট থেকে ৭৫০ ফুট। উন্নতমানের সাবমার্সিবল পাম্প দেওয়া কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে দেশীয় নিম্নমানের ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পাম্প। এসব নলকূপের পানি ও পাম্প বুয়েটের ল্যাব কর্তৃক পরীক্ষা করার কথা থাকলেও সেখানেও নেওয়া হয়েছে প্রতারণার আশ্রয়। কয়েকটি ভালো নলকূপের পানি পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। অথচ অনেক নলকূপের পানিতে অতিরিক্ত আয়রণ, লবণাক্ত, আর্সেনিক ও জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে এবং অনেক নলকূপের গভীরতা কম হওয়ায় গ্রীষ্মকালে পানিও পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্পেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজের বিবরণীর বিওকিউতে ভালো কোম্পানির ট্যাংক দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। দেওয়া হয়েছে নিম্নমানের পানির ট্যাংক। ঠিকাদারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুস নিয়ে ২০ ভাগ কাজ করা হলেও দেওয়া হয়েছে ৮০ ভাগ বিল।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্টিমেটর মোঃ আনোয়ার শিকদারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন না ধরার কারণে মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply