১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৮:৪৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
বহল তবিয়তে হাসিনার দোসর মুশফিকুল ইসলাম
স্টাফ রিপোর্টার:
যে বিল্ডিংয়ের প্রতিটি চেযার টেবিলে ঘুষ খায় তার নাজ জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত ডিডি মুশফিকুল ইসলাম দুর্নীতিগ্রস্ত কিন্ত একটি সিন্ডিকেট করে রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে বর্তমানে ছাত্র জনতার সরকার এসে একজন সৎ ব্যাক্তিকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও এই দূর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটর কাছে যেন অসহায় শত শত অসৎ এর কাছে একজন সৎ ব্যাক্তি কতটা করতে পারে জনগণের জন্য, তবে চেস্টা করছে মানুষের সেবা দিয়ে উক্ত প্রতিষ্টানটি দূর্নীতিমুক্ত করতে তা কি পারবেন তাই দেখার বিষয়।
এ দিকে ডিডি মুশফিকুল ইসলাম দুর্নীতির তদন্ত চলছে দুদকে।আরেকটা তদন্ত চলছে মন্ত্রণালয়ে জাল জালিয়াতি ও ফাইল আটকে রাখার দায়ে। এমনকি জাগৃক সিন্ডিকেট করে রাখছে এই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সৎ অফিসার ও সাধারন প্লট গ্রহিতরা। তার পরেও সে রয়েছে বহাল তবিয়তে। এদিকে নিজের নামে একটি প্লটের নামজারির আবেদন করেছিলেন এসএম অহিদুল ইসলাম। মাসের পর মাস ঘুরেও কূল-কিনারা করতে পারেননি। অসমাপ্ত রেখেই মারা যান। এর পর ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদন করেন তার স্ত্রী-সন্তানরা। তারাও মাসের পর মাস ঘুরে এখন ক্লান্ত। আদৌ নামজারি করাতে পারবেন কিনা, জানেন না।
শুধু অহিদুলই নন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে (জাগৃক) যারাই প্লট, ফ্ল্যাট পেয়েছেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটি ফাইল টেবিলের পর টেবিলে ঘুরছে কিংবা পড়ে থাকছে আর ভোগান্তি বাড়ছে গ্রাহকের। যাদের ‘রেফারেন্স’ বা ‘অর্থ’ রয়েছে তাদের কাজ সহজেই হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা।
মিরপুর সেকশন ১২-এর মিরপুর হাউজিং এস্টেটে ব্লক সি-এর ৬ নম্বর সড়কের পুনর্বাসন ১০২/০৩ নং প্লটটি পেয়েছিলেন এসএম অহিদুল ইসলাম। তিনি নামজারির আবেদন করেছিলেন ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এর পর চলতি বছরের ১ জুলাই ওয়ারিশসূত্রে নামজারির আবেদন করেন তার স্ত্রী পাপিয়া ইসলাম, কন্যা সুরাইয়া ইসলাম প্রিয়াংকা ও ছেলে মেহরাজ ইসলাম। দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও তারা নামজারি করাতে পারেননি। এই চিত্র শুধু ঢাকার প্রধান কার্যালয়েই নয়, জাগৃকের প্রতিটি অফিসেই।
দাবি অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় এক বছর ধরে ঢাকা অফিস আর চট্টগ্রাম অফিসে দৌড়াচ্ছেন রূপালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার শেখ ফজলুল করিম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, হয়রানি সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ অফিসে। সেখানে অফিসের লোকদের কন্ট্রাক্টে কাজ না দিলে প্রতি টেবিলে যতবার ফাইলের জন্য যেতে হয়, ততবারই টাকা দিতে হয়। নয়তো ভুল প্রতিবেদন দিয়ে আরও বেশি যন্ত্রণায় ফেলে। আর সময়ক্ষেপণ তো রয়েছেই; দিনের পর দিন হয়রানি করে। এমনকি ফাইল বা নথি গায়েব করে দেয়। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সরিয়ে হয়রানি করে। তিনি বলেন, আমি ক্রয়সূত্রে চট্টগ্রামের ব্লক-বি, লেন-১৬, রোড ২-এর ২১ নম্বর প্লটের পশ্চিম পাশে যে খালি/খ- জায়গা পাই।
সেই জায়গা নিজের নামে নামজারি করতে প্রায় এক বছর ধরে টেবিলে টেবিলে ঘুরছি। নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমাকে হয়রানি করছে। সরাসরি টাকা চায় না। তবে টাকা না দিলে ভুল প্রতিবেদন দিয়ে সময়ক্ষেপণ করে। আমি একাধিকবার ঢাকা অফিসে গিয়েছি। সেখান থেকে আবার চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেয়। অশেষ হয়রানির পর একপর্যায়ে বিকল্প পথে আগান শেখ ফজলুল করিম। তিনি বলেন, বাড়ির নামজারি করাতে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। পরে সেলস পারমিশনের জন্য ফাইল জমা দিলে নতুন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দেওয়ায় বাড়িতে অবৈধ
নির্মাণ রয়েছে উল্লেখ করে ফাইল ঢাকায় পাঠানো হয়। পরে সে ফাইলে অনুমোদন না দিয়ে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। এর পর ফাইল নিয়ে আবার তদবিরে গেলে এবার
টাকার অংক আরও বেড়ে যায়। বলা হয়- এখন ঢাকাকেও ম্যানেজ করতে হবে।
ঢাকা অফিসের রেকর্ড রুম এবং যে দপ্তর থেকে চিঠি ইস্যু ও ফাইলের ডিজিটাল নম্বর দেওয়া হয় সেখানে হয়রানি হতে হয় বেশি। ফাইলে ডিজিটাল নম্বর ও প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন মুসাফবিবাল আশবাব ইকবাল। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তৃতীয় তলার ৩১৭ নম্বর রুমে গেলে সব সময় দেখা যায় সেবাগ্রহীতাদের জটলা। টাকা না দিলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। এসএম অহিদুল ইসলামের ওয়ারিশরা নামজারির জন্য কয়েক মাস ঘোরার পর প্রথমে সরেজমিন প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে নোট দেন ইকবাল। এর পর সেই রিপোর্ট জমা দিলে নতুন করে আরও একটি প্রতিবেদনের জন্য পাঠান। এভাবে তিন-চার দফা প্রতিবেদন নিয়ে ফাইল আটকে রাখেন তিনি। এর পর ফাইলটি উপ-পরিচালক-১ (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগ) আরএম সেলিম শাহনেওয়াজের দপ্তরে পাঠান। সেখানে তিন দিন রাখার পর আবার তিনি নকশা শাখায় পাঠিয়ে দেন। এভাবেই টেবিলের পর টেবিলে চলছে ফাইল চালাচালি।
নামজারি করাতে এসে ভোগান্তির শিকার পাপিয়া ইসলাম বলেন, একই চিঠি একাধিকবার আনতে হয়েছে। কেন এমন করছে, কিছু বলেও না। আমার পরে যারা দিয়েছেন, তাদের অনেকের কাজও এরই মধ্যে হয়ে গেছে। অফিসের এক স্টাফ আমাকে জানিয়েছেন, কাজটা কন্ট্রাক্টে দিলে দ্রুত হয়ে যাবে। এখানে এসে দেখি, প্রতিটা টেবিলেই টাকার জন্য ফাইল আটকে রাখে।
ফাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- এ কথা বলে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকা কামরুল হাসান ও নাফিজা খানমের বিরুদ্ধে। এর আগে কামরুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ জমা হয়েছে।
এভাবে প্লটের নামজারি, নাম ট্রান্সফার, প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রয় অনুমতিসহ নানা কাজে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। প্রতিদিনই জাগৃকের ঢাকা অফিসে শত শত মানুষ সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে জাগৃক সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধেও। তিনি তার ব্যক্তিগত সহকারী শোয়েব ও অফিস সহকারী এরশাদের মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পিএ শোয়েব যে ফাইলে সবুজ সংকেত দেন, শুধু সেটিতেই স্বাক্ষর করেন কুদ্দুছ আলী সরকার। অন্যথায় দিনের পর দিন ফাইল নড়ে না। এরা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধা ভোগি হয়ে এখনো তাই করছে তাদের রুখবে কে।
গ্রাহকের ভোগান্তির বিষয়ে জাগৃক চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, এটা অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠান। যারা কাজ করাতে আসেন অনেক সময় হয়রানির শিকার হন- এটা সত্য। আগেও বিষয়টি নিয়ে নজর দেওয়া হয়েছে। তবে এখন কেউ কোনো বিষয়ে অভিযোগ দিলে আমি কেইস টু কেইস সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে যারাই কাজ করাতে আসেন তারা কম-বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। আমি গ্রাহককে এমন আহাজারিও করতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহ, দুনিয়াতে এতো কিছু ধ্বংস হয়, এই ভবন (জাগৃক অফিস) কেন ধ্বংস হয় না।’ মানুষ কতটা কষ্ট পেলে এমন কথা বলে? প্রশ্ন রাখেন এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইচ্ছা করেই ফাইল থেকে নোট সরিয়ে টাকা নেওয়ার অনেক অভিযোগ উঠেছে। অনেককেই অনেক সময় অনেকভাবে সতর্ক করা হয়েছে; কিন্তু কিছুই বদলায়নি।
Leave a Reply