৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৬:৫৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার॥
রাজধানীতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযান। ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয় যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ ক্যাসিনোর রাঘববোয়ালদের। সিলগালা করে দেওয়া হয় অনেক ক্যাসিনো। অভিযানে মাদকদ্রব্য, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, পশুর চামড়া, টাকা, বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার জব্দ করে পুলিশ-র্যাব। ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ পাচারেরও তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধসহ বিভিন্ন আইনে বহু মামলা হয়। এর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনের ১২টি এবং বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি ১৩টি মামলার মধ্যে ১১টির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও হোতা সম্রাট ও খালেদের দুই মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তাঁরা এরই মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
সিআইডি সূত্র জানিয়েছে, ১১টি মামলার চার্জশিটে আসামির সংখ্যা অন্তত ৮০। এর মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক মামলায়ও অভিযুক্ত হয়েছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক এনু, তাঁর ভাই একই কমিটির বহিস্কৃত সহসাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁঁইয়া, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন, বিতর্কিত ঠিকাদার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান এবং অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনোর কারবারি সেলিম প্রধান।
খালেদের বিরুদ্ধে দুটি, এনু ও রুপমদের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, লোকমান হোসেন এবং মিজানের বিরুদ্ধে একটি করে মানি লন্ডারিং মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
বিদেশি তথ্যের অপেক্ষা দুই মামলায়: সিআইডি মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি। এর মধ্যে একটি মামলার আসামি হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং একই কমিটির বহিস্কৃত সহসভাপতি তাঁর সহযোগী এনামুল হক আরমান। তাঁদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে রমনা থানায় মামলাটি করেছিল সিআইডি। সম্রাট সহযোগী এনামুলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় মামলায়।
তদন্তাধীন অপর মামলার আসামি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। মামলাটি করা হয়েছিল মতিঝিল থানায়। এতে খালেদ ছাড়াও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। খালেদ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে সাড়ে ৮ কোটি টাকা পাচার করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় এজাহারে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গুলশান থেকে খালেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার হন সম্রাট ও আরমান। গ্রেপ্তারের সময় তাঁরা দলীয় পদে ছিলেন। তবে পরে তাঁদের বহিস্কার করা হয় দল থেকে।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, এ দুটি মামলার বাংলাদেশের তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে তাঁদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তার জবাব আসেনি এখনও। এ কারণে মামলা দুটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। বিদেশি তথ্য পাওয়ার পর প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে আদালতে।
পাঁচ ভাইয়ের ৩১ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং: ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা এনামুল ও তাঁর চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলায় সিআইডি চার্জশিট জমা দিয়েছে। এতে তাঁদের বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা অবৈধভাবে উপার্জনের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে এনু ও রুপন গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁদের তিন ভাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে তাঁরা সবাই কারাগারে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এনু-রুপনের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৫ কোটি টাকা ও ৮ কেজি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে র্যাব। পৃথব অভিযানে তাঁদের বাড়ির ভল্ট থেকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকা, এক কেজি স্বর্ণ, বিদেশি মুদ্রা ও ৫ কোটি টাকার এফডিআর পাওয়া যায়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয় এনু-রুপনকে। তদন্তে তাঁদের ২২টি বাড়ি ও ১২১টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পায় সিআইডি। এনু-রুপনের ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৯ কোটি টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে।
রায় মাত্র একটি মামলায়: ক্যাসিনো-সংক্রান্ত ঘটনায় একটি মানি লন্ডারিং মামলার রায় হয়েছে। ওই মামলায় গত বছরের এপ্রিলে এনু ও তাঁর চার ভাইসহ ১১ জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের ৪ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। অপর আসামিরা হলেন- মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় গোপাল সরকার এবং তাঁদের সহযোগী তুহিন মুন্সী, নবীন হোসেন শিকদার, সাইফুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ ও পাভেল রহমান।
তবে সিআইডির তদন্তের বাইরে একটি অস্ত্র মামলায় জি কে শামীমের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর নিকেতনের বাসা থেকে সাত বডিগার্ডসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। এখনও তিনি কারাগারে।
হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে ২০১৯ সালের অক্টোবরে শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন তিনি। মিজান অবৈধভাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।
Leave a Reply