৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সন্ধ্যা ৭:২৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে নির্বিঘœ ও দ্রুত সড়ক যোগাযোগ চালু করতে ২০০৯ সালে নেয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ২০১১ সালে এটি নির্মাণ চুক্তি সই হয়। কথা ছিল ২০১৩ সালের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করা হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ১০ বছর পর আংশিক উদ্বোধন করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কয়েক দফা নকশাই পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, পিপিপি অংশীদারের অর্থের সংস্থান না হওয়াসহ নানা জটিলতায় এর নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা পাঁচবার পিছিয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে এটি ২০২৪ সালে পুরোপুরি শেষ হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যদিও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশটি উদ্বোধন করা হচ্ছে আগামী ২ সেপ্টেম্বর।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) তথ্যমতে, ২০০৯ সালে প্রকল্পটি নেয়া হলেও অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত ও নকশা প্রণয়নেই দুই বছর ব্যয় হয়। এতে পিপিপি অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ইটাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে নির্মাণ চুক্তি সই হয় ২০১১ সালের জুনে। তবে এর আগে ওই বছর ৩০ এপ্রিল এর প্রথম দফা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অর্থ সংস্থান না হওয়ায় পিপিপি বিনিয়োগকারী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় বাড়ানোর আবেদন করে।
এর মাঝে এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। প্রায় তিন বছর পর নকশা সংশোধন করে ২০১৩ সালের নভেম্বরে পিপিপি অংশীদার ইটাল-থাইয়ের সঙ্গে পুনরায় নির্মাণ চুক্তি সই করা হয়। এর পর ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর পরও শুরু হয়নি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। যদিও সে সময় ২০১৭ সালে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল।
সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা ছিল। আর ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ড (ভিজিএফ) হিসেবে দুই হাজার ৪১৪ কোটি টাকা দেয়ার কথা ছিল সরকারের। প্রথম অংশের কাজ সম্পন্নের পর ছয় কিস্তিতে এ অর্থ দেয়ার কথা। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এটিও বহন করবে সরকার।
যদিও শুরুতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সর্বশেষ ট্যাক্স, ভ্যাটসহ নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার কোটি ৭০ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় দফা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রথম সময়সীমা ছিল ২০১৭ সাল। সেটি পিছিয়ে হয় ২০১৮ সাল। তারপর আবারও পিছিয়ে হয়েছে ২০২২ সাল। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার চর্তুথবার সেই সময়সীমা পিছিয়ে দাঁড়ায় ২০২৩ সালের জুনে। তবে সর্বশেষ পুরো প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটারের ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এসব র্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়টি প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। পুরোটা চালু হলে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮০ হাজার যানবাহন চলার কথা রয়েছে। পুরোটা চালু হলে মাত্র ২০ মিনিটে এক্সপ্রেসওয়েটি পাড়ি দেয়া যাবে। এর ডিজাইন স্পিড ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
বর্তমানে ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এতে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১
শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হবে প্রাথমিকভাবে। এই সাড়ে ১১ কিলোমিটারের জন্য টোল ধরা হয়েছে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মিনিট্রাক ৮০ টাকা, বাস ও মিনিবাস ১৬০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৩২০ টাকা এবং বড় ট্রাক ৪০০ টাকা। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিকভাবে একপ্রেসওয়েটিতে বাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে পরে বাইক চলার অনুমতি দেয়া হবে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
Leave a Reply