২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৮:১৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
বিশেষ প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের ত্রিশালের ঐতিহ্যবাহী সরকারি নজরুল কলেজের মার্কেট বরাদ্দের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হরিলুট ও কলেজের বেনসন সিগারেট ও পান সুপারির বদলে
বিল হয় ডিম রুটির। এ ঘটনা জানাজানির পর থেকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম-দূর্নীতির মূলে রয়েছেন স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি ও মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান এবং একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার। তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবতদূর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। কেউ প্রতিবাদ করলেও তার উপর নিপীড়ন করা হয়। তাদের আধিপত্য বিস্তার দীর্ঘদিনের। কলেজ মার্কেট এর দোকান বরাদ্দে দূর্নীতি, ভাড়াটিয়া পক্ষের
সাথে চুক্তি না করে মৌখিকভাবে ভাড়া উত্তোলন, পছন্দের ব্যক্তিদের দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। কলেজ মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান তার
পছন্দের কিছু বহিরাগত লোক দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন সরকারি নজরুল
কলেজের গেইটের সামনে প্রায় ৩০০টি অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকাল প্রায় ৯০,০০০/- (নব্বই হাজার) টাকা উত্তোলন করছেন। এ টাকা কলেজের সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেরাই ভাগ বাটোয়ারা করে নেন বলে অভিযোগ
রয়েছে।অবৈধ দোকানাপাটগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর কোন আবেদনপত্র জমা দেননি
বা কোন ধরণের উদ্যোগ নেননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে , প্রভাষক আজিজুর রহমান কলেজে আধিপত্য বিস্তার করে দূর্নীতি-অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন। প্রভাষক
আজিজুর রহমান ও প্রভাষক দিলীপ কুমারসহ তাদের পছন্দের কয়েকজন শিক্ষকের
স্বাক্ষর ছাড়া কোন বিল/ভাউচার পাশ হয়না। ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কয়েকজন কর্মচারি অভিযোগ করেন সরকারি কোষাগারের অর্থ ব্যয় করে স্টাফ কাউন্সিল এর
সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান, প্রভাষক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি)
ও একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার, প্রভাষক (পদার্থবিজ্ঞান) বেনসন সিগারেট ও পান সুপারি খান কিন্তু বিল উত্তোলন করেন
ডিম ও রুটির ভাউচারে আবার সেই ভাউচার তাদের গ্রুপের কয়েকজনের স্বাক্ষর ও অধ্যক্ষের স্বাক্ষরেই পাশ হয়। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় চাপ সৃষ্টি করে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শফিকুল ইসলাম দুলাল এর কাছ থেকে ভাউচার ছাড়াই
অগ্রিম টাকা নিয়ে নেন। পরে তা ভাউচারের মাধ্যমে পাশ করিয়ে নেন। প্রভাষক আজিজুর রহমান প্রভাব বিস্তার করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি আইন অমান্য
করে বার বার কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রায় সকল কমিটিতেই থাকেন এবং সস্মানি ভাতাসহ কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে নামে বেনামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে
নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজে ৩ জন এমপিওভুক্ত অফিস সহকারী থাকলেও তাদের কেউ কম্পিউটার কম্পোজসহ অনলাইনে ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারেন না।
তাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার কারণে বিগত অধ্যক্ষ মোঃ ফয়জুর রহমান এর সময় কম্পিউটরে পারদর্শী একজন কম্পিউটার অপারেটর মাস্টাররোলে নিয়োগ দেন। ২০১৪ সাল থেকে কম্পিউটার সংক্রান্ত সকল কাজ কলেজের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট মোঃ
হারুন অর রশিদকে দিয়ে করানো হচ্ছে। যার দরুন কলেজের কম্পিউটার ল্যাব
সবসময় বন্ধ থাকছে। কলেজের কোন শিক্ষার্থী কম্পিউটারের কোন সুফল পাচ্ছেনা
না। কম্পিউটার ল্যাবটিতে থাকা কম্পিউটারগুলো অযত্নে অবহেলায় ধূলো-বালোয় নষ্ট হচ্ছে। কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কলেজে ৪ টি গবেষণাগার
(কম্পিউটার, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান) থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর কোন ব্যবহারিক ক্লাশ নেওয়া হচ্ছেনা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, স্টাফ
কাউন্সিলের সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান এবং একাডেমিক কমিটির আহবায়ক
প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে প্রায় সময়ই হুমকি ধমকি দিয়ে কথা বলেন এবং মারধর করেন। কলেজে তাদের আস্থাভাজন কয়েকজন কর্মচারি
ছাড়া অন্য কর্মচারিদের সাথে তারা ধমক দিয়ে হুমকির স্বরে কথা বলেন।
সম্প্রতি প্রভাষক আজিজুর রহমান অহেতুক বিষয় নিয়ে কলেজে কর্মচারিদের সাথে অসদাচরণ করেন এবং এক পর্যায়ে বলেন কলেজের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিগণ
কলেজ লুটপাট করে খাচ্ছে। এ মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের পক্ষে একজন প্রভাষক আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ
করেন। অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) উক্ত অভিযোগের বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি গঠন বা পদক্ষেপ নেননি বলে কয়েকজন কর্মচারি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন। কলেজের
পূর্বপাশ্বের ঢাকা-ময়মনসিং মহাসড়ক সংলগ্ন সরকারি নজরুল কলেজের একটি
দ্বিতল মার্কেট ও কাঁচা বাজার রয়েছে। সেখানে ভিট দোকানসহ প্রায় শতাধিক দোকানপাট আছে। কলেজ মার্কেট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন
প্রভাষক আজিজুর রহমান। মার্কেটের দোকান বরাদ্দেও তিনি ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নামে বেনামে দোকানপাট বরাদ্দ ও সাবলেট ভাড়া দিয়েছেন যার কোন টাকাই সরকারি কোষাগারে জমা হয়না। সে ব্যক্তিভাবে লাভবান হওয়ায় মার্কেটের বকেয়া টাকা আদায় করছেন না। কলেজ
মার্কেট এর বর্তমান বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে যা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কারও সাথে
কোনরকম যোগাযোগ করেননি। কলেজ জাতীয়করণের পরিপত্র জারি হওয়ার পর কলেজ গেইটের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত অবৈধ দ্বিতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা হয় যা
সম্পূর্ণ সরকারি নীতির পরিপন্থী । কলেজ সরকারিকরণের পরিদর্শনের পত্রে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও ব্যাংকে থাকা অর্থ উত্তোলন এর নিষেধাজ্ঞা থাকা
সত্ত্বেও সরকারি আদেশ অমান্য করে কিভাবে ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় এর তথ্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে
জানতে চাইলে বর্তমান অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত) জয়নব রেখা বলেন আমি সে সময় দায়িত্বে ছিলাম না। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলেজের অভ্যন্তরীণ ও পাবলিক
পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি, ভর্তি কমিটি ও ফরম পূরণ কমিটি গঠন ও ভাতা বন্টনের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালার অনুসরণ করা হয় না। স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমানের পছন্দের শিক্ষক ও কর্মচারিকে টানা
একাধিকবার কমিটিতে রেখে বিভিন্নভাবে সরকারি অর্থের সুবিধা নিচ্ছেন।
একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারি রয়েছেন যাদেরকে গত কয়েক বছর ধরে কোন কমিটিতেই
রাখা হচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ত্রিশালের সরকারি নজরুল কলেজে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত নতুন ভবনে সরকারি বিদ্যুৎ
ও পানি খরচ করে শুক্রবার ও শনিবারসহ পুরো সপ্তাহজুড়ে কলেজের ছাত্র/ছাত্রী ও বহিরাগত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং বাণিজ্য করে আসছেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। স্টাফ কাউন্সিল এর সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান ও একাডেমিক
কাউন্সিল এর আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে রসায়নেরপ্রভাষক মোঃ রকিবুল হাসান ও পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক এ.কে.এম. ইয়াহিয়া
দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকান্ড করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজটি জাতীয়করণের পরিদর্শনের পত্রে ব্যাংকে জমা টাকা উত্তোলন ও উন্নয়নমূলক
কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় । সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের কক্ষ সংলগ্ন টয়লেট,
একটি কক্ষ ও ওযুখানা নির্মাণ করেছেন এবং কলেজের অভ্যন্তরীণ অডিট কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে স্টাফ কাউন্সিলের সেক্রেটারি প্রভাষক আজিজুর রহমান ও
একাডেমিক কমিটির আহবায়ক প্রভাষক দিলীপ কুমার সরকার তাদের সিন্ডিকেটকে অডিট কমিটিতে রাখেন এবং অডিট কার্য সম্পন্ন করেন। কলেজের অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী শফিকুল ইসলাম (দুলাল) বিগত কয়েক বছর আগে বাসা থেকে কলেজে
আসার পথে সরকারি কোষাগারের ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা হারানো হয়েছে মর্মে
তৎকালীন অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানকে মৌখিকভাবে জানান। এ বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি হয়নি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়নি । ওই টাকা
অদ্যাবধি সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কোনকিছু জানেন না বলে জানান।
প্রভাষক আজিজুর রহমান জানান আমাকে দেড় বছর আগে মার্কেটের আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকেই মার্কেট থেকে ভাড়ার টাকা উত্তোলন করে
কেরানির মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেই। আগে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতো লোকাল অধিদপ্তর। এখন মন্ত্রণালয় করেন আমার জানা নেই । তবে আমি জেনে নিবো।
আগের ইউএনও আক্তারুজ্জামান স্যার অনেকবার উচ্ছেদ অভিযান করেছেন কোন ফলাফল
পায়নি। কলেজের গেইটের সামনে প্রায় ৩০০ দোকান বসিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়ে বলেন দেখেন আমি আসলেও নেইনা। কে নেয় তা আপনিই ভালো করে জানেন। অযথা আমাকে এ বিষয়ে টানা কি ঠিক হচ্ছে ?
অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত), জয়নব রেখা জানান, কোচিং বাণিজ্য বন্ধ থাকবে কিন্তু প্রাইভেট পড়াতে পারবে। তিনি আরও বলেন কলেজের মার্কেটটি একটি
বিষফোড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মার্কেট কমিটির আহবায়ক প্রভাষক আজিজুর রহমান তিনি দায়িত্বে আছেন। আমি খুব শিঘ্রই চিঠির মাধ্যমে ভাড়া উত্তোলনেরকাজ শুরু করবো। কলেজের সামনে প্রায় ৩০০ দোকান থেকে প্রতিদিন টাকা উত্তোলন
করা হয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, আমি কয়েকবার স্থানীয় পুলিশকে বলেছিউচ্ছেদ করতে তারা করেনি। আমি একা কি করতে পারবো আপনারাই বলেন । তবে সবাই
আমাকে সহায়তা করলে আমি অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করতে পারবো ইনশাল্লাহ্। তিনি
আরও বলেন আমাদের কলেজের কেউ অনিয়ম-দূর্নীতিতে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে
তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply