১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১:২৭ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
পর্ব নাম্বার ২
—————-
স্টাফ রিপোর্টারঃ
চুয়াডাঙ্গা জেলার দুর্নীতির বরপুত্র চুয়াডাঙ্গা -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ- সভাপতি হাজী আলী আজগার টগর,যে কিনা মানুষকে উন্নয়নের বানী শুনিয়ে চুয়াডাঙ্গা -২ আসনের সাধারণ মেহনতী মানুষদের ঠকিয়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতি করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা, এই দুর্নীতিবাজ হাজী আলী আজগার টগর জীবননগর -দামুড়হুদা উপজেলা এবং তিতুদহ বেগমপুর ইউনিয়নের প্রতিটি স্থানকে পরিনত করেছিলেন দুর্নীতির আতুর ঘর।
এই হাজী আলী আজগার টগর জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের সুটিয়া – পাথিলার মধ্যবর্তী বিরাট একটি পদ্মবিল ১৫০ টি জেলে পরিবারকে উৎখাত করে সন্ত্রাসীদের দিয়ে দখল করে নিয়েছিলেন। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত ওই ১৫০ টি পরিবার সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে তারা সংসার চালাতো।কিছু লাঠিয়াল, চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা এদের সহায়তায় ঐ জেলেদের নিঃস্ব করে তিনি তার নিজের লোকদের কাছে বিলটি হস্তান্তর করেন, যদিও বিলটি ১৫০ পরিবারের নিকট সরকারিভাবে লিজ দেয়া ছিল। অমানবিক, দুর্নীতিবাজ, চোর বাটপার এমপি প্রায় সকল স্থানে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে অর্থ উপার্জন করেছে বিগত বছর গুলিতে।
কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে থানায় ডেকে ওসি সাহেবকে দিয়ে ধমক দিয়ে ছেড়ে দিতেন। তিনি আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে বিভিন্নভাবে সন্তুষ্ট করতেন অর্থ দিয়ে, নারী দিয়ে ও মদ দিয়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য তার কেনা গোলামে পরিণত হয়।
এবার তার অর্থ আত্মসাৎ এর কিছু নমুনা দেওয়া হলো-
১। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এমপি সাহেব নিজস্ব টি আর কাবিখা কাবিটাতে প্রায় ১.৫ কোটি টাকা পেয়েছিলো। সমুদয় অর্থ কেরানি উপজেলার পিআই ও অফিসের সহায়তায় একটি টাকারও কাজ না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
২। ২০১০-১১ অর্থবছরে এমপি সাহেবের নিজস্ব টিআর কাবিখা কাবিটা বাবদ ২ কোটি টাকা তার নিজস্ব তহবিলের সরকার প্রেরণ করেছে যা তিনি সম্পূর্ণ বিক্রি করে দিয়েছেন এবং অর্থটি আত্মসাৎ করেছেন।
৩। ২০১১-১২ অর্থবছরে এমপি সাহেবের নিজস্ব টিয়ার কাবিখা কাবিটাতে তিনি ২ কোটি টাকা পেয়েছেন এর ভিতর ২০ লক্ষ টাকা কিছু প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছেন বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
৪।২০১২-১৩ অর্থবছরে এমপি সাহেবের নিজস্ব টিআর কাবিখা কাবিটার মাধ্যমে ৪ কোটি টাকা পেয়েছেন। তিনি চাল গম ২৫ লক্ষ টাকা জীবননগর ও দামুড়হুদার
কয়েকজন চেয়ারম্যান কে দিয়ে বাকি টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
৫। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এমপি সাহেবেরা গম চাল টিআর কাবিখা কাবিটার মাধ্যমে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন সরকার থেকে যার সমুদয় অর্থ তিনি নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
৬। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এমপি সাহেব জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে টিয়ার কাবিখা কাবিটা বাবদ ৪ কোটি টাকা পেয়েছিলেন তিনি সমুদয় অর্থ মাস্টার রোলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
৭। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমপি সাহেব নিজস্ব টি আর কাবিখা কবিটাতে ৩ কোটি টাকা পেয়েছেন উপজেলার কেরানী,পিআই এদের সহায়তায় সমুদয় অর্থ জীবননগর দামুড়হুদার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন একটি কাজও তিনি করেন নাই টাকা এনে আত্মসাৎ করাই ছিলো তার মুল কাজ।
৮।২০১৬-১৭ অর্থবছরে একইভাবে চাল -গম বাবদ ৪ কোটি টাকা ভুয়া মাস্টার
রোলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
৯। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একইভাবে চাল গম বাবদ চার কোটি টাকা ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন, দপ্তর গুলো সঠিক তদন্ত করলে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যাবে।
১০। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সেম পন্থায় চাল গম বাবদ ৫ কোটি টাকা ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে তিনি একাই আত্মসাৎ করেছেন,জোরালো ভাবে প্রশাসন একটু তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
টেন্ডারবাজি :-
জনাব আলী আজগর টগর ও তার ভাই আলী মুনসুর বাবু(গোল্ড বাবু)আরেক ভাই আরিফের মাধ্যমে এল জিএডি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে রাস্তা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকার কাজ উপরোক্ত আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে করিয়েছেন। উপরোক্ত অফিসগুলোতে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে তার ভাই আলী মনসুর বাবু ও আরিফ সড়ক ও জনপথের প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাজ কমিশন নেয়ার মাধ্যমে একজন ঠিকাদারকে পাইয়ে দিয়েছিল আবার সেই কাজই ঠিকাদারের কাছ থেকে জোর পূর্বক হাজী আলী আজগার টগর এমপি সাহেব নিয়ে নিয়েছিলেন, এবং সেই কাজ তার দুই ভাই ও তিনি নিজে করেছিলেন।ফলে সেই ঠিকাদার বিরাট অংকের টাকা লোকসানে পরেছিলেন ।
গত ১৫/১৬ বছর শাসনামলে আত্মীয়-স্বজন ছাড়া অন্য কাউকে তিনি কোন কাজ করতে দেননি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গা জেলার একজন নেতা তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে দর্শনা পৌরসভা এলাকায় সোলার লাইট লাগানোর জন্য একটি কাজ তিনি বরাদ্দ করান।কাজটি জলবায়ু প্রজেক্টর। কাজটি মেসার্স সাউদান রিনিয়বল এনার্জি লিমিটেড সর্বনিম্ন ১কোটি ২৬ লক্ষ টাকায় । মেয়রের কাছে (মরহুম মতিয়ার রহমান) নোয়া নিতে গেলে মেয়র সাহেব জানান এমপির ছোট ভাই গোল্ড বাবু ও আরিফ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মেসার্স ও আর এন্টারপ্রাইজ কে সর্বোচ্চ মূল্যে ১ কোটি ৩৫ লক্ষ কাজটি দিয়ে দেন । মেয়র কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি অসহায় এমপির আদেশে এই অবৈধ কাজ করতে আমি বাধ্য হয়েছি। তৎকালীন সময়ে মেয়র সাহেব অসুস্থ ছিলেন নিয়মিত অফিসে আসতেন না এবং প্রচুর মদ্যপান করতেন এই সুযোগে মেয়রকে দিয়ে এই অবৈধ কাজটি করিয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গা দুই আসনের এমপি মাফিয়া ডন আলী আজগর টগর।
নিয়োগ বাণিজ্য :-
১। দামুড়হুদা জীবননগর সকল ডিগ্রী কলেজ সরকারি করার অজুহাতে শিক্ষক থাকার পরও বেআইনি ও নিয়ম বহির্ভূত ১৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। উক্ত নিয়োগ দেওয়াতে তিনি প্রতি শিক্ষকের নিকট হইতে ১০ লক্ষ টাকা করে নেন অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে দেন। উক্ত শিক্ষকরা বেতন ভাতা কিছুই পান না এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি উক্ত শিক্ষকদের নিয়োগ অবৈধ বলেছেন। এছাড়াও কলেজ সরকারী করে দেবার বিনিময়ে সকল শিক্ষকের নিকট হতে তিনি ৫ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা দুই উপজেলা থেকে নিয়েছিলেন।
২।তার ২ আসনে যত স্কুল কলেজ মাদ্রাসা আছে বিগত ১৫ বছরে শিক্ষক নিয়োগ বাবদ তিনি কমপক্ষে ৫ লক্ষ টাকা করে এবং প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ নিয়োগ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন হিসাব করলে সর্বমোট প্রায় ২০ কোটি টাকার সমতুল্য।
৩। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে দপ্তরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি জনার নিকট হতে ৫ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলায় বাকি ১৯ টি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য প্রতিজনার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে অগ্রিম নিয়েছেন। যা সরাসরি চাকুরী প্রত্যাশিদের নিকট থেকেই জানা গিয়েছে।
৪। এমপির সরাসরি নির্দেশনায় প্রান্তিক চাষীদের কার্ড থাকা সত্ত্বেও একজন কৃষকও এমপির পোষা ক্যাডারদের ভয়ে খাদ্য গোডাউনের আশেপাশে যেতে ভয় পেতো। শুধুমাত্র এমপির আত্মীয়-স্বজন ও পোষা ক্যাডাররা ধান গম সরবরাহ করতো যা অত্যন্ত নিম্নমানের। তার কথাটা শুনলেই বদলি হতো উক্ত গোডাউনের তত্ত্বাবধায়করা। প্রায়ই তিনি বদলি করে দিতেন বিভিন্ন অজুহাতে।
৫। সব সরকারি নিয়োগ বাণিজ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতেন যার ফলে গত কয়েক বছরে তিনি কয়েকজন ইউএনও ,ওসি হঠাৎ করে বদলি করিয়াছেন।
৬। এছাড়াও এমপি নিজে এবং নিজস্ব লোকের মাধ্যমে সমুদয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন যা বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা সমতুল্য বিগত ১৫ বছরে ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
১। হাট-বাজারের আয় :-
এমপি আলী আজগর টগর ও তার ভাই গুলো সবে একত্রে মিলে ২০০৯ থেকে ২০১০ ও ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর জীবননগর ও দর্শনা পরশুর হাট থেকে গড়ে প্রতিবছর ৪৫ কোটী টাকা লুটপাট করেছেন যার কারণে সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব লাভ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কোন সাধারণ মানুষ হাটের ধারে কাছে যাওয়ার সাহস করতেন না।
২। চুয়াডাঙ্গা জেলার সব থেকে বড় হাট শিয়ালমারি ও ডুগডুগি পশুর হাট যার বাজার মূল্য বাৎসরিক ৩-৪ কোটি টাকা প্রতি হাট। এই হাট মাত্র ১০ লক্ষ টাকায় এমপি টগর লিজ নিয়ে নিয়েছিলেন।
৩। জীবননগর ও দামুড়হুদা ছাগলের হাট ও সাইকেলের হাট থেকে প্রতি বছর সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে ২ কোটি টাকা যে টাকা সম্পূর্ণই এমপি সাহেব আত্মসাৎ করেছেন।
৪। মজার ব্যাপার হলো ডুগডুগি হাট ও শিয়ালমারি গরুর হাট দুটি ১৫ বছর যাবৎ আলী আজগর টগর ডিসিকে জোরপূর্বক হাট
ডাকতে না দিয়ে হাইকোর্টের একটি ভুয়া মামলা দিয়ে এমপি টগর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার এক প্রভাবশালী নেতা সম্মিলিত ভাবে বছরে ১০ কোটি ১০ কোটি টাকা করে ১৫ বছর নগদে গ্রহন করেছেন ২ হাট থেকে। যেখানে সরকার প্রতিবছর ৬ কোটি টাকা করে রাজস্ব লস করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক যখনই হাইকোর্টে কেস পরিচালনা করতে চেষ্টা করেন তখনই এমপি ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মিলে তাকে বদলি করার ও অন্যান্য ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন। এই হাঁট বাণিজ্যে করে এমপি ও প্রভাবশালী নেতা মিলে বিগত ১৫ বছরে প্রায় আড়াইশো থেকে ৩০০ কোটি টাকার উপর আত্মসাৎ করেছেন। প্রয়োজনে আপনারা একটু ক্যালকুলেটরে হিসাব করে দেখতে পারেন, দেখবেন একটি টাকাও কম বলি নাই।
৫। জীবননগর দামুড়হুদায় মোট বিলের সংখ্যা ২৬ টি বাউরের সংখ্যা ৩টি প্রতিবছর টেন্ডারের মাধ্যমে লিজ দেওয়ার নিয়ম কিন্তু এমপি ও কাজল নামের এক সাংবাদিক সারাদিন উপজেলা অফিসে বসে যাবতীয় টেন্ডার সম্পাদন করেন একাই, কেউ টেন্ডার দিতে গেলে তাকে মারধর করে – চুয়াডাঙ্গা ২ আসনকে তিনি তৈরি করেছিলেন হীরক রাজার দেশ।
৬। এমপি সব থেকে বড় বাণিজ্য করেছেন মনোনয়ন বাণিজ্য তিনি উপজেলায় কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে তার নিজের লোকদের বিদ্রোহী হিসেবে জয়লাভ করিয়েছেন দুটি উপজেলাতেই।একটিতে তার ভাই ও অপরটি ১.৫০ কোটী টাকার বিনিময়ে বিদ্রোহীকে পাশ করান। বিগত ১৫ বছরে তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিয়েছেন। জীবননগর পৌরসভা ও দর্শনা পৌরসভা ও ব্যতিক্রম নয়। প্রতিটা ইউনিয়নে তিনি ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিলেন ও সেই প্রার্থীকে পাশ করিয়ে নিয়ে আসতেন। এই চেয়ারম্যানরা প্রত্যেকে এমপি টগরের সিন্ডিকেটে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার প্রমান দু-একটা চেয়ারম্যানকে প্রশাসন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।
পরবর্তী টগর কাহিনী ৩ পর্ব পড়ুন ====
Leave a Reply