১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৭:২৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
মৎস্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অফিসের ভেতরে সন্ত্রাসী লালনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, তিনি ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে কোটি টাকার প্রকল্প হাতিয়ে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে, অফিসের ভেতরে সন্ত্রাসী ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছেন, যেখানে সাংবাদিকসহ বহিরাগতদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।
সম্প্রতি সবুজ বাংলাদেশ –এর নিজস্ব প্রতিবেদক তথ্য যাচাইয়ের জন্য শামসুল আলমের অফিসে গেলে ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হন। অফিসে প্রবেশ করতেই তিনি দেখতে পান, কাজী লিমন নামে এক ব্যক্তি প্রকৌশলীর কক্ষে বসে ঘুমাচ্ছেন। কাজী লিমন একজন ঠিকাদার হলেও নিজেকে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।
প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পরপরই কাজী লিমন তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল আলম এই ঘটনা নীরবভাবে প্রত্যক্ষ করলেও প্রতিবাদ তো দূরের কথা, বরং নিরব সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন। এ সময়ের ভিডিওচিত্র ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের অধীনে রামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, গাজীপুর ও সাভারে বছরে দু’বার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বরাদ্দ হয়। অভিযোগ উঠেছে, এসব কাজের বড় অংশ ঠিকাদার শহীদ ও মিরাজের হাতে তুলে দেন শামসুল আলম। উভয়ের বাড়ি নোয়াখালী হলেও তারা ঢাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত।
অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদার শহীদ ও শামসুল আলমের সম্পর্ক গভীর। অফিসের কাজ ছাড়াও শহীদের ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়তে দেখা যায় শামসুল আলমকে। এমনকি, মৎস্য ভবন থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে বৈঠকেও যান শহীদের গাড়িতে করে। অভিযোগ রয়েছে, দরপত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পরিবর্তে শামসুল আলম গোপনে ইস্টিমেটের তথ্য ঠিকাদার শহীদের কাছে সরবরাহ করেন। এর বিনিময়ে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন।
শামসুল আলমের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নতুন নয়। এর আগে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আলিমুজ্জামান অনিয়মের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু শামসুল আলম ডিজি মাহবুবুল হককে ম্যানেজ করে একই পদে পুনর্বহাল হন। বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে।
দায়িত্ব পালনের আড়ালে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন শামসুল আলম। মিরপুরে তার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে, যেখানে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। এছাড়া, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট এবং টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “স্যার (শামসুল আলম) প্রায়ই ঠিকাদার শহীদের গাড়িতে ঘোরাফেরা করেন। শহীদ ও মিরাজ ছাড়া অন্য কেউ কাজ পায় না। দরপত্র আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়।”
শুধু দুর্নীতি করেই থেমে থাকেননি শামসুল আলম। নিজের অপরাধ ঢাকতে অফিসের ভেতরেই সন্ত্রাসী লালন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজী লিমন নামের এক চিহ্নিত অপরাধী প্রায়ই তার অফিসে অবস্থান করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং তাদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগে তার ভূমিকা স্পষ্ট।
অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, “আমাদের অফিস এখন আর সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, যেন গ্যাংস্টারদের আড্ডাখানা। কাজী লিমনের মতো সন্ত্রাসীদের এখানে নিয়মিত যাতায়াত। সাংবাদিকরাও এখানে নিরাপদ নন।”
শামসুল আলমের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং অফিসকে সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে পরিণত করার অভিযোগ নিয়ে অধিদপ্তরে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী তার অপসারণ এবং বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার বক্তব্য পেলে প্রতিবেদনটি হালনাগাদ করা হবে।
Leave a Reply