1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. mursalin1982@gmail.com : Protiva Prokash : Protiva Prokash
  3. reporting.com.bd@gmail.com : news sb : news sb
  4. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
  5. mahtabur0@gmail.com : Daily Sobuj Bangladsesh : Daily Sobuj Bangladsesh
  6. editorsobujbangladesh@gmail.com : sumona akter : sumona akter
পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে মাহফুজ, লাবণীদের আত্মহত্যা কেন - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৬:৫৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে মাহফুজ, লাবণীদের আত্মহত্যা কেন

পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে মাহফুজ, লাবণীদের আত্মহত্যা কেন

স্টাফ রিপোর্টার:

আবারও শুনলাম অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিতে গেছে রংপুরের পীরগাছার মাহফুজুর রহমান। পাঁচটা বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর একসময় স্কুল কর্তৃপক্ষের মনে হলো, মাহফুজ তো পরীক্ষার ফি দেয়নি। হয়তো আগেও তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফি দিতে হবে।

কোত্থেকে পরীক্ষার ফি দেবে, মাহফুজ যে গরিব বাবার ছেলে। দেউতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার রুম থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে এসে ছেলেটা আত্মহত্যা করে।

মাহফুজের বাবা হাফিজুর রহমান আলুখেতে কাজ করেন। পরীক্ষার ফি জোগাড় করার জন্য তিনি পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম নয়।

চাঁদপুর বাগাদি গণি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তারকে স্কুলের বেতন আর পরীক্ষার ফি মিলিয়ে ৪০০ টাকা দিতে হবে। সে ৩২০ টাকা দিতে পেরেছিল। ৮০ টাকা বাকি। স্কুলে যাওয়ার আগে সেই টাকা মা-বাবার কাছ থেকে চেয়ে সে পায়নি। এ জন্য স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাকেসহ আরও কয়েকজনকে রোদের মধ্যে এক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন। পরদিন সাথী মায়ের কাছে ৮০ টাকা চায়। মা টাকা জোগাড় করতে বেরিয়েও ছিলেন। এরই ফাঁকে সাথী আত্মহত্যা করে।

‘টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করতে পারায় শিক্ষকের বকাঝকা শুনে এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। গত সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার দশমিনার আরোজবেগী এসএ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।’

‘জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্রী লাবনী আক্তারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারাকান্দি গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে না পারায় লজ্জা থেকে বাঁচতে সে আত্মহত্যা করেছে।’

‘পরীক্ষার ফিসহ পাওনাদি পরিশোধের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ অপমান করায় পূজা রানী (১৮) নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। পূজা বগুড়ার সুখানপুকুর নতুনপাড়া এলাকার প্রদীপ চন্দ্র সূত্রধরের মেয়ে এবং স্থানীয় সৈয়দ আহম্মদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।’

‘নড়াইলে বার্ষিক পরীক্ষার ফি ও কোচিংয়ের বকেয়া টাকা দিতে না পারায় আত্মহত্যা করেছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।’

‘ফতুল্লায় পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে লামিয়া (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

‘স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ ১ হাজার ৬৩০ টাকা না দিতে পারায় পান্না তার মা-বাবার সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে।’

এই রকম আরও অনেক খবর আছে। অর্থাৎ পরীক্ষার ফি দিতে না পেরে পরীক্ষার হল থেকে বিতাড়িত হয়ে বা শিক্ষকদের বকা খেয়ে আত্মহত্যা এই দেশে প্রায়ই ঘটছে। তার সব খবর নিশ্চয়ই আসে না। আর আত্মহত্যা না করে লড়াই করে টিকে থাকে যারা, পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এসে যারা লেখাপড়া ছেড়ে দেয় বা অতি কষ্টে গরিব সংসারে চাপ দিয়ে ফি জোগাড় করে যারা টিকে যায়, তাদের কথা তো আর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই না।

আমাদের দেশে ৯৮ ভাগের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যায় বলে প্রচারিত আছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এবং ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ চরম ও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই ৪ কোটি মানুষের পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েরা কীভাবে পরীক্ষার ফি দেবে?

হ্যাঁ, আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বিনা বেতনে দেওয়া হয়। ওপরের ক্লাসেও যারা বৃত্তি পায় বা উপবৃত্তি পায়, তাদের জন্য স্কুল-কলেজের মাসিক বেতন মওকুফ করা হয়। উপবৃত্তি দেওয়া হয় পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে। সমস্যা হয় সেশন ফি, পরীক্ষার ফি আর ফরম ফিলআপের সময়।

‘সম্প্রতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে “শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা” প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর এলাকার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকার বেশি আদায় করা যাবে না, আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নেওয়া যাবে। উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।’

ওই আবেদনে দরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঘোষিত ভর্তি নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করে অন্যান্য ফি হ্রাস করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই আবেদনের পাশাপাশি আরেকটা করণীয় আছে, তা হলো পরীক্ষার ফি ও সেশন ফির যন্ত্রণা থেকে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের রক্ষা করা। গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা ফি ও সেশন ফি মওকুফ করতে হবে। আমাদের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এমন ব্যবস্থা করতে হবে যে দরিদ্র শিশু-কিশোরেরা যেন একেবারেই নিখরচায় পড়তে পারে। উপবৃত্তির টাকার পরিমাণও খুব কম। এটা বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্বপ্ন দেখেন দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবীর। এখন আমাদের চার কোটি দরিদ্র মানুষের পরিবারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফির ফাঁদে পড়ে কষ্ট পাচ্ছে। কেউবা আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যা করছে না; কিন্তু লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে কত শিক্ষার্থী! এটা আর চলতে দেওয়া যায় না।

সবা:স:জু- ৩১২/২৪

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »