1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
  3. editorsobujbangladesh@gmail.com : sumona akter : sumona akter
পিডি হাচানুজ্জামানের ঘুষ আর সীমাহীন দূর্নীতি - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৯:২৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

পিডি হাচানুজ্জামানের ঘুষ আর সীমাহীন দূর্নীতি

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

পিডি হাচানুজ্জামানের ঘুষ আর সীমাহীন দূর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার:

হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার দেসরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্খানে বসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে করে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান। এই প্রকল্পে পূর্ণকালীন পিডি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন তিনি। কিন্তু পূর্ণকালীন পিডি হয়েও তিনি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে, নিজের উদ্দেশ্য ঠিকই বাস্তবায়ন করেছেন হাচানুজ্জামান!
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে সারাদেশে ৫২টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। বাস্তবায়ন মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের আওতায় রাজস্ব খাতে ৩২২ জনের নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও কোনো লোক নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে প্রকল্পে আওতায় বিভিন্ন ল্যাবে স্থাপন করা যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হলেও প্রকল্প পরিচালকের উদ্দেশ্য ঠিকই বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক বিভিন্ন টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত আসা অভিযোগপত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রকল্প পরিচালক হাচানুজ্জামানের দুই স্ত্রী। তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে বিভিন্ন জায়গায় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি গড়েছেন। যার মূল্য কোটি কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডি হাচানুজ্জামানকে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের আস্থাভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ডুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পরিচয় দেওয়া পিডি হাচানুজ্জামানের অবৈধ সম্পত্তি এবং দপ্তরীয় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ন্যূনতম শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর সঠিক অনুসন্ধান ও তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) এক ভুক্তভোগী ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, “বিবেকের তাড়নায় দেশের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে স্ব-উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের দুর্নীতির মহোৎসবের কিছু চিত্র তুলে ধরছি।
স্থানীয় সরকার বিভাগে সাবেক সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কথা বলে কাজ বাতিলের ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং নিজের কথা বলে ৮৩ লাখ টাকা গ্রহণের স্বীকারোক্তিসহ আরও দুই কোটি টাকার জন্য আমার প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজারকে চাপ প্রয়োগ করেন। প্রমাণস্বরূপ প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের সঙ্গে আমার প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার রাকিবুল হাসানের কথোপকথনের মোবাইল রেকর্ড পেন ড্রাইভের মাধ্যমে এই দরখাস্তের সঙ্গে আপনার নিকট প্রদান করলাম।
টেন্ডার/পারসোনাল আইডি : ৯১৩০৪৭-এর গ্লাস ওয়্যারস অ্যান্ড কেমিক্যালস সরবরাহের জন্য সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের প্রতিনিধি কুমিল্লার কামালের সঙ্গে যোগসাজশে চলতি বছরের ১৫ মে মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান টেন্ডারের মাধ্যমে সাত কোটি ১২ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেন। কোনো প্রকার মালামাল গ্রহণ না করে গত জুন মাসে দুই দফায় প্রকল্প পরিচালক মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করেন। এই অগ্রিম বিল থেকে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান নগদ দুই কোটি টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন। মালামালগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য পানির গুণগতমান পরিবীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফিরোজ আলমচৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। মার্কস ট্রেডিং লিমিটেডকে পাঁচ কোটি ৮০ লাখ টাকার বিল দেওয়া হলেও মালামাল ও বিলের ব্যাপারে কমিটি কিছুই জানে না।

মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর অনিয়ম-দুর্নীতি করতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রকল্পের সব ধরনের কেনাকাটায় সিএস পাস করাতে হয় এবং এটির ক্ষেত্রে প্রত্যেক ঠিকাদারের কাছ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে তিনি পাঁচ থেকে ছয় পারসেন্ট নগদ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন, মন্ত্রণালয়ের কেউ আমাকে কিছুই করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের সবাইকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই আমি প্রকল্প পরিচালক হয়েছি।
অভিযোগ আছে, এর আগে অনেকবার তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু তিনি টাকা খরচ করে প্রতিবারই পার পেয়ে যান। এভাবে পার পেতে পেতে তিনি এখন স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন।
বিভিন্নজনের নামে কোটেশন ও ভাউচার তৈরি করে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি। নিজ আত্মীয়ের নামে রূপম ট্রেডার্স, নাদিম ইকবাল ও রাজ ট্রেডার্সের প্যাড ব্যবহার করে টেন্ডার না ডেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অফিসের সাবেক পিয়ন ইমন, সিসিটি নার্গিস ও অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত তার আপন চাচাতো ভাই সিমোনকে দিয়ে কোটেশন তৈরি করে জাল স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ জি অফিস থেকে প্রকল্পের হিসাব তদন্ত করলেই তার লুটপাটের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
তিনি প্রকল্পের পিয়নকে বাদ দিয়ে আপন চাচাতো ভাই সিমোনকে মাস্টার রোলে পিয়ন হিসেবে নিয়োগ দেন। সিমোন হাচানুজ্জামানের বাসায় থাকেন এবং তার সঙ্গেই প্রকল্পের গাড়িতে অফিসে যাতায়াত করেন। সিমোনের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান সব অবৈধ লেনদেন করেন। ফরিদপুর মধুখালীতে আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে শত শত বিঘা জমি (হাউজিং প্রকল্প ও চাষের জমি) ক্রয় করেছেন। তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছেন কোটি কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক হাচানুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালীতে। সচিবের কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিডির চারতলা মার্কেট ও আলিশান বাড়ির ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া সেখানে তিনতলা একটি বাড়ির ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
ফরিদপুরের গোয়ালচামটে বড় বউ শাহানাজ বেগম ও শ্যালকের মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে পরিচর্যা হাসপাতাল লিমিটেড। এ ছাড়া ছোট বউ সুমাইয়া আক্তারের নামে পূর্বাচলের ডুপ্লেক্স সিটিতে রয়েছে পাঁচ কাঠার একটি প্লট। এর বাইরেও মিরপুরের ৬০ ফিট রোডে নয়তলা এবং নবীনগর ডিওএইচএসে সাড়ে নয়তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশের আরেকটি প্লটে ভবন নির্মাণাধীন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হলে সঠিক ও সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সেই অনুযায়ী সব কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে সব কার্যক্রম সমাপ্তির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মনিটর করা হয়। আইএমইডি থেকে প্রকল্পটির মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ/মতামত দেওয়া হয়। কিন্তু আইএমইডির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তার কোনো প্রতিবেদন আইএমইডিকে জানানো হয়নি।
প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতি আইএমইডির সুপারিশে বলা হয়েছে, ডিপিপির সংস্থান অনুযায়ী বরাদ্দ এবং রাজস্ব খাত হতে ল্যাব পরিচালনার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া না হলে প্রকল্পটি প্রস্তাবিত বর্ধিত সময়েও শেষ করা যাবে না। তাই এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার বিভাগের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। নির্মিত ল্যাবে রাজস্ব খাত থেকে জনবল নিয়োগপূর্বক ল্যাবের যন্ত্রপাতি/কেমিক্যাল ক্রয় সম্পন্ন করতে হবে। পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদসমূহে (বর্তমানে নবম ও তদূর্ধ্ব) সরকারি কর্মকমিশনে প্রস্তাব প্রেরণ করে দ্রুত নিয়োগের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যেসব পদে লোক নিয়োগ দেবে সেগুলোর কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা যেতে পারে।

বিষয়গুলো নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের কাছে  জানতে চাওয়া হয়। পিডি বলেন, ‘এগুলো সব ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। এর বেশি আপনাকে আর কিছুই বলা যাবে না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পেলে অধিদপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্পের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক বলেন, প্রকল্পের টাকা তছরুপ অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে। গত বছর প্রকল্পগুলোর ১৩ হাজার অডিট আপত্তি ছিল। এর আগের বছর অডিট আপত্তি ছিল ২২ হাজার। হয়তো প্রকল্পটা নিয়ে অডিট আপত্তিতে কিছু বলা আছে। কিন্তু কোনো অ্যাকশন হয়নি।

বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজ করার কথা। অডিট আপত্তি থাকলে তাদের (দুদক) দায়িত্ব তদন্ত করা। কিন্তু তারা তাদের কাজটা ঠিক মতো কোনো দিন করেনি। তারা যেন বিরোধী দল দমনের নীতিতে বিশ্বাসী। তারা কেন বসে থাকবে? তারা বসে থাকলে তো এই লোকগুলো অনিয়ম করবেই।’

তার মতে, দুর্নীতি হয়ে থাকলে দুদককেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তদের তো ফরমান দেওয়ার দরকার নেই। আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমতি নিয়েই দুদক ওই কর্মকর্তার বিষয়ে কাজ শুরু করবে। তাদের তো বসে থাকার সুযোগ নেই। আবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ওই পিডির অভিযোগ তদন্ত করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তদন্ত করে সর্বোচ্চ বদলি করতেপারে, তবে দুর্নীতির দায়ে এটা কোনো শাস্তি না। দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হবে তার (পিডি) দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »
error: Content is protected !!