১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১১:১৭ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি॥
ঘুস লেনদেনের ফোনালাপ ভাইরাল হওয়া পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সেই পরিদর্শক ধনরাজ দাসকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ (তাৎক্ষণিক কর্ম অবমুক্তকরণ) করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোনা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাশ।
তিনি সোমবার বিকালে জানান, ধনরাজ দাসকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তার নতুন কর্মস্থল কিশোরগঞ্জে পিবিআই পুলিশে। তিনি (ধনরাজ দাস) সোমবার সকালে ছাড়পত্র গ্রহণ করে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
শংকর কুমার দাশ বলেন, ফোনালাপের বিষয়টি তদন্ত করতে পিবিআই পূর্বাঞ্চলের উপ-মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. সায়েদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুজন হলেন, পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস ও পিবিআই সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সায়েদুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, পিবিআই বিভাগের প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার স্যারের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। কমিটির সদস্যরা আগামী বুধবার নেত্রকোনায় এসে সরাসরি সম্পৃক্ত লোকজনদের সঙ্গে কথা বলা হবে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না।
ঘটনায় অভিযুক্ত পরিদর্শক ধনরাজ দাসের সঙ্গে বিকাল ৫টার দিকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জার্নিতে আছি। আপনার কথা বোঝা যাচ্ছে না।’ এ কথা বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ফোনালাপে শোনা যাচ্ছে, একটি ভাঙচুর মামলার আসামিপক্ষের লোকের কাছ থেকে পরিদর্শক ধনরাজ দাস ঘুস হিসেবে বেশ কিছু টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু কথামতো কাজ না হওয়ায় ঘুসদাতা তার টাকা ফেরত চাচ্ছেন। আর ঘুসগ্রহীতা ধনরাজ দাস নেত্রকোনায় এসে টাকা ফেরত নিয়ে যেতে বলছেন।
যিনি টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন, তার নাম আবুল হোসাইন। অভিযোগকারী আবুল হোসাইন সোমবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, ধনরাজ দাস আমাকে আটকিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে তিন দফায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সব তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। তাকে ঘুষ দিতে আমি বাধ্য হয়েছি। জমি বিক্রিসহ ধারদেনা করে ওই কর্মকর্তাকে ঘুষের টাকা দিতে হয়েছে। এ ঘটনায় ডাকযোগে পিবিআই সদর দপ্তরে গত ২৩ মে আমি একটি লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি।আমি টাকা ফেরতসহ ঘটনার বিচার চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ জুলাই কেন্দুয়ার ডাউকি গ্রামের মসজিদের সামনে থেকে ওই গ্রামের সাবিজ মিয়ার ছেলে জুয়েল মিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে ওই মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।
তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি গত ৪ ডিসেম্বর সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ছয় দিন পর ১০ ডিসেম্বর ওই মামলার আসামি জিয়াউল ও পলাশের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটে অভিযোগ তুলে তাদের ভাই জুলহাস মিয়া গত ২০ জানুয়ারি কেন্দুয়া থানায় মামলা করেন।
মামলায় ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মালামাল লুট ও ভাঙচুর করার কথা উল্লেখ করে এতে আসামি করা হয় খুন হওয়া জুয়েলের মা ললিতা আক্তার, বোন ডালিয়া আক্তার, ভগিনীপতি আবুল হোসাইনসহ ছয়জনকে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার এসআই নোমান সাদেকীন গত ২ ফেব্রুয়ারি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনা মিথ্যা উল্লেখ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। নোমান সাদেকীনের দেওয়া প্রতিবেদন বাদী প্রত্যাখ্যান করে পুনতদন্তের আবেদন করায় আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। এবার মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান পরিদর্শক ধনরাজ দাস। তদন্ত শেষে গত ১৩ এপ্রিল তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
তিনি এবার মিথ্যা মামলা করার বিষয়টি এড়িয়ে উল্লেখ করেন, রাতের আঁধারে মালামাল লুট হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি।
পিবিআইয়ের কর্মকর্তা ধনরাজকে ঘুস দেওয়ার অভিযোগ আনা আবুল হোসাইনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সেকান্দরনগর গ্রামে। তিনি খুন হওয়া জুয়েল মিয়ার ভগিনীপতি। ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগে দায়ের করা মামলাটির প্রধান আসামি তিনি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপের অডিও ক্লিপে আবুল হোসাইনকে বলতে শোনা যায়, আপনার অফিসে গিয়া আমি টাকা দিয়া আসছি, আপনি এখন আমার বাড়িতে আইসা টাকাটা দিয়া যান।
জবাবে অপর প্রান্ত থেকে শোনা যায়, আপনি আসেন। মেম্বরকে নিয়ে বসে বিষয়টি শেষ করি। আমার নামে অভিযোগ দিয়ে ক্ষতি করে আপনার কি লাভ হবে? আপনি নেত্রকোনা এসে নিয়ে যান।
তখন আবুল বলেন, আমি নেত্রকোনা আসতে ভয় পাই। আমি টাকা দিয়েছি, আপনি টাকা নিয়েছেন। আমার টাকা বাড়িতে এসে ফেরত দিয়ে যান। এভাবেই ৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ডে উঠে আসে ঘুষের টাকার লেনদেনের বিষয়টি।
Leave a Reply