৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:০৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
মাগুরা প্রতিনিধি
মাগুরা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণ মামলা করে জীবন আশংকায় পড়েছেন বাদী ফাতেমা খাতুন। তিনি এখন প্রতিনিয়ত হত্যা,গুম ও অপহরণের হুমকি পাচ্ছেন মর্মে অভিযোগ করেছেন। ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী পাঠিয়ে মামলার স্বাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের পক্ষে স্বাক্ষী করাচ্ছেন আসামী প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলেও সেটি গ্রহন করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে গণমাধ্যমের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন বাদী ফাতেমা খাতুন। অবশ্য এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেছেন মাগুরা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলাম।
মামলার বিবরণ ও বাদীর মৌখিক অভিযোগে জানাগেছে, মাগুরা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে ঢাকার একটি হাসপাতালে পরিচয় হয় ততকালীন ইডেন কলেজের ছাত্রী ফাতেমা খাতুনের। তার পৈত্রিক নিবাস- মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার ছোট কলমধারি গ্রামে। ওই সময় প্রকৌশলী মঞ্জুরুল নিজেকে অবিবাহিত পরিচয়ে ফাতেমার সাথে প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। মোবাইল ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমালাপ চালিয়ে মধুর সময় কাটান। মাঝে মাঝে হাত খরচের টাক, বাসা ভাড়া,পোষাক, কসমেটিকস ও নানা প্রকার উপহার প্রদান করে ফাতেমা খাতুনের মন জয় করেন।
এক পর্যায়ে তিনি ফাতেমা খাতুনকে বিয়ের আশ^াস দিয়ে ঢাকা,যশোরসহ মাগুরার বিভিন্ন এলাকার বাসা ও আবাসিক হোটেলে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এভাবে দীর্ঘদিন তাদের অবৈধ মেলামেশা চলার এক পর্যায়ে ফাতেমা খাতুন বিয়ের জন্য চাপাচাপি করলে প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলাম বিয়ে করতে অস্বীকর করেন এবং তাদের গোপন মেলামেশার ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবার হুমকি দেন। তখন প্রতারিত ফাতেমা খাতুন বাধ্য হয়ে গত ২১/১১/২০২০ ইং তারিখে মাগুরা সদর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৯ তাং ২১/১১/২০২০ইং। মামলাটির তদন্ত শেষে ঘটনা সত্য মর্মে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন মাগুরা সদর থানার এসআই (নি:) মো: জুলিয়াস রহমান।
মামলাটি বিচারের জন্য মাগুরার বিজ্ঞ নারী ও শিশু আদালতে বদলী হলে সেটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। আদালত আসামী নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করার আদেশ দেন। তখন তিনি মামলা থেকে বাঁচার জন্য গত ১৭/১২/২০২০ইং তারিখে বাদী ফাতেমা খাতুনকে এ্্যাফিডেভিট মুলে বিয়ে করেন। এ সময় তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিয়ের দলিল হবে বলে ৬খানা ষ্ট্যাম্পে ফাতেমার স্বাক্ষর করিয়ে নেন। সহজ সরল ফাতেমা প্রকৌশলীর চালাকি বুঝতে না পেরে ফাঁদে পড়ে যায়। আসামী পরবর্তীতে সেই স্ট্যাম্প দ্বারা বিয়ে,তালাক ও আপোষনামা তৈরি করে সেগুলো আদালতে জমা দিয়ে জামিন লাভ করেন। পরবর্তীতে সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে স্বাক্ষীদের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার পক্ষে স্বাক্ষী দিতে বাধ্য করেন। আসামী একই দিনে বিয়ের কথা বলে ৬টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে সেটি দ¦ারা বিয়ে,তালাক ও আপোষনামা তৈরী করে বাদী ফাতেমার জীবন নরকে পরিণত করেছেন।
এসব বিষয়ের নালিশ নিয়ে বাদী ফাতেমা খাতুন মাগুরার ডিসি,এসপি ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বারবার ধর্ণা দিলেও কোন প্রতিকার পান নি। প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলাম ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতার প্রশ্রয়ে বাদী ফাতেমা খাতুনের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। এতেকরে বাদীর জীবনের সামান্যতম নিরাপত্তাও নেই। একদল রাজনৈতিক সন্ত্রাসী সব সময় তাকে ছায়ার মত অনুস্মরণ করে যাচ্ছে। তারা হুমকি দিয়েছে যে, প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম মামলার রায়ে খালাস পেলেই বাদী ফাতেমাকে নুসরাতের মত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে।
বাদী ফাতেমার খাতুনের আরো অভিযোগ.আসামী মাগুরা বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ায় অবৈধ পথে উপার্জিত লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে সব কিছু কিনে নিচ্ছেন। ফলে আদালতেও তিনি নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। পুলিশ,ভাড়াটিয়া মাস্তান,কতিপয় নেতা এমন কি সরকার পক্ষের কৌশুলী (পিপি) ও আসামীর পক্ষে কথা বলছেন। বাদী ফাতেমা খাতুনের প্রশ্ন, সরকার পক্ষের পিপি যদি আসামীর পক্ষে কথা বলেন তাহলে তিনি কিভাবে ওই আদালতে ন্যায় বিচার আশা করবেন?
সর্বশেষ জানাগেছে, মামলাটি এখন মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে পরবর্তী সাফাই স্বাক্ষীর জন্য দিন ধার্য আছে। কিন্তু বাদী ফাতেমা খাতুনকে এমনভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যে, আসামীকে জেল হাজতে রেখে বিচার কার্য পরিচালনা না করলে তার পক্ষে স্বাক্ষী প্রমাণ হাজির করা সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে বাদী ফাতেমা খাতুন আদালতে পিটিশন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকার মানবাধিকার সংস্থাতেও আবেদন করেছেন। জীবনের নিরাপত্তা ও চলমান মামলায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য ফাতেমা খাতুন রাষ্ট্রপতি এড: আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা ও প্রধান বিচারপতির পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাদী ফাতেমা খাতুনের এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশলী মো: মঞ্জুরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি মিমাংশা হয়েগেছে, তাই এখন আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।
Leave a Reply