১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১২:২৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নে লিপ্তথাকা গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরগুলোর মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্যতম। কিš‘ গত প্রায় ২ বছরের মতো সময় ধরে দায়িত্ব পালনে সীমাহীন অদক্ষতার পরিচয় দি”েছন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার। তার নতজানু নীতি, জামায়াত-বিএনপি প্রীতি ও নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ভেঙে পড়েছে হণপূর্ত অধিদপ্তরের চেইন অব কমান্ড। এখন কোন প্রকৌশলীই তার আদেশ নির্দেশ পালন করেন না। এতেকরে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এক লেজেগোবুরে অব¯’ার বিরাজ করছে। দায়িত্ব পালনের ২ বছরে তিনি সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর পাশ করা প্রকল্পগুলোর কাজ ছাড়া নিজ প্রস্তাবনায় নতুন কোন প্রকল্প পাশ করাতে পারেন নি। এমন কি সরকারকে দিতে পারেন নি নতুন কোন পরিকল্পনা।
একাধিক সুত্রে জানাগেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজের সংস্কার কাজ এবং সাতক্ষীরা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল হাসপাতালের কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে না করিয়ে স্বা¯’্য মন্ত্রণালয় নিজেই সে কাজ করার জন্য লিখিত আবেদন করার পর থেকেই বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে সরিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীদের মধ্য থেকে একজন প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দানের জোর দাবী ওঠে।
সুত্রমতে,বতর্মান প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাজ কমিশনের মাধ্যমে পাইয়ে দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদ শামীম আখতারের আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে । তিনি নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড়ের হাকিমাবাদ খানকা-ই-মোজাদ্দেদিয়ার ‘পীর সাহেব’। পীর হিসেবে তার নাম আল্লামা হযরত মোহাম্মদ শামীম আখতার (মাদ্দাজিল্লুহুল আলিয়াহ)। কম্বোডিয়াসহ বাংলাদেশের কয়েকটি ¯’ানেও রয়েছে এ খানকার শাখা। পীরের মুরিদরা এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। বাস্তবায়ন করছেন মোটা অংকের উন্নয়নকাজ। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সং¯’া থেকে সুযোগ-সুবিধাও আদায় করে নি”েছন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের সর্বো”চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।
গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদে আসার আগে মোহাম্মদ শামীম আখতার ছিলেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালকের দায়িত্বে। সেখানে কখনো কখনো প্রকল্প পাস না করে, কখনো টেন্ডার হওয়ার আগে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ পেয়ে যান মুরিদ ঠিকাদাররা। মাসে লাখ টাকা বেতনে প্রকল্পের পরামর্শক, কর্মকর্তা-প্রকৌশলী থেকে বাবুর্চি-মালির মতো পদগুলোয় পান নিয়োগ। মুরিদদের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন মহাপরিচালকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে এইচবিআরআই থেকে একটি তদন্ত কমিটি। মুরিদদের ঠিকাদারিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে এইচবিআরআইয়ের এ তদন্ত প্রতিবেদন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এইচবিআরআইতে যেসব মুরিদ নিয়মবহির্ভূতভাবে সুবিধা পেয়েছেন, তারা এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরে সক্রিয়। মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্তের শীর্ষ পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর গণপূর্ত প্রশিক্ষণ একাডেমি, একটি পূর্ত ভবনের উন্নয়ন, প্রধান প্রকৌশলীর বাসভবন সংস্কারসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ পেতে শুরু করেন মুরিদরা। এরই মধ্যে তারা জায়গা করে নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতিতে। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে ঠিকাদারদের মতবিনিময় সভায়ও উপ¯ি’ত ছিলেন কয়েকজন মুরিদ।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইগড় বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্বদিকে কয়েকশ গজ দূরে হাকিমাবাদ খানকা শরিফের অব¯’ান। খানকা শরিফের এক পাশে একটি বহুতল নূরানী মাদ্রাসা ও আরেকটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা। অন্যপাশে মসজিদ। মাঝখানে বিশাল প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণ লাগোয়া একটি পুকুরও রয়েছে। জুমার নামাজ ও জুমা-পরবর্তী পীর সাহেবের বয়ানের জন্য খানকা প্রাঙ্গণে বানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। জুমার নামাজের পর পরই মসজিদের বারান্দা থেকে ভক্ত-আশেকান আর মুরিদদের উদ্দেশে বয়ানে বসেন পীর সাহেব মোহাম্মদ শামীম আখতার। কয়েকটি বিশাল পাতিলে আগত ভক্ত-আশেকান, মুরিদের জন্য ছিল ভোজনের ব্যব¯’াও। ৩ ডিসেম্বর খানকা শরিফে এইচবিআরআইয়ের তৈরি কয়েক হাজার ব্লক ইটও দেখা গেছে, যেগুলো খানকার উন্নয়নকাজে ব্যবহারের কথা রয়েছে।
এইচবিআরআই ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, খানকার মুরিদদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ‘পীর সাহেব’। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ। ঠিকাদারির পাশাপাশি নিয়ম ভেঙে মুরিদদের নানা সুযোগ-সুবিধাও দি”েছন গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী।
Leave a Reply