১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:৪৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
#এ সব মিথ্যা অভিযোগ -অধ্যক্ষ
#লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো – সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
#অভিযোগ প্রমানিত হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে- আবু জাহের এমপি
মুহা: শরীফ সুমন:
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার সদরে অবস্থিত ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল কলেজ অব টেকনোলজির অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা আবু তাহেরের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল ০৩ জুলাই বুধবার সরেজমিনে গিয়ে বিগত দিনে তাহার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আবু তাহের দীর্ঘ দিন এ প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালন কালে তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। বিভিন্ন নামে একাউন্ট করে টাকা আত্মসাৎ, চেক জালিয়াতি, কলেজের সম্পত্তি নিয়ে জালিয়াতিসহ রয়েছে ১৬ কলা পূর্ণ দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
গত ২৭ মার্চ ২০২২ সালে তাহার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের বরাবর করা একটি অভিযোগে বলা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন সময়ে প্রেরিত টাকা কলেজের নামে করা একাউন্টে মাধ্যমে গ্রহণ না করে অধ্যক্ষের নিজে নামে করা হরিপুর আদর্শ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে সুকৌশলে ৪টি চেকের মাধ্যমে ৫১,৬৩৫/- (একান্ন হাজার ছয়শত পয়ত্রিশ) টাকা আত্মসাৎ করে। ৪২৬৮১৬৫ চেক নাম্বারে গত ১৯ জুন ২০১৭ সালে ১৩ হাজার ২শ টাকা, ৪২৬৮১৯৫ চেকে ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৪শ পয়তাল্লিশ টাকা, ৬৬০৯৮১৭ নাম্বার চেকে ৫ এপ্রিল ২০২১ সালে ২৩ হাজার ৬শ চল্লিশ টাকা, ৬৬০৯৮২০ নাম্বারের চেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে ৯ হাজার ৩শ পঞ্চাশ টাকা, ৪টি চেকের মধ্যে ২টি চেক উত্তোলন করে।
আরেকটি অভিযোগে জানা যায় ২০১৭ সালে মো. মিনহাজ নামের এক ছাত্রকে ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততা থাকার অপরাধে কলেজ থেকে বহিষ্কার করেন অধ্যক্ষ আবু তাহের। অভিযোগে তার বাবা তানভীর আহমেদ বলেন, এ কলেজের অধ্যক্ষ শুরু থেকেই অনিয়মের সাথে জড়িত। তিনি ঘষামাজা করা একটি জাল অভিজ্ঞতা সনদ দিয়ে এখানে অধ্যক্ষ হয়। সে জামায়াতের একজন সক্রিয় রোকন। যার কারণে কলেজে সকল শিক্ষক এবং ছাত্রদেরকে বাধ্য করেন জামায়াত অনুসারী হওয়ার জন্য। অধ্যক্ষের কথা মতো না চললেই শুরু হয় হয়রানি এবং ষড়যন্ত্র। আমার ছেলে তার কথায় সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড যেতে রাজি না হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করেন। আমি এবিষয়ে বুড়িচং উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের সাহায্য চাইলে তিনি আমার প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হন। পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ন্যায় বিচার চেয়ে আবেদন করে তার ছেলের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করান।
অন্য এক অভিযোগে জানা যায়, ২০২০ সালে করোনার কারণে একাদশ শ্রেণির ভর্তি ফরম ফিলাপ এবং অটো পাসের কারণে দ্বাদশ শ্রেণির ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ফেরত না দিয়ে এ টাকা নিজে আত্মসাৎ করেন।
এ কলেজের সহকারী অধ্যাপক্ষ মো. আখতারুজ্জামান ভূইয়ার এক অভিযোগে জানা যায়, এ কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের একজন সক্রিয় জামায়াত নেতা। সে কলেজে বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়ম করে আসছে। আমি তার প্রতিবাদ করলে অথবা কোন কিছুর হিসাব জানতে চাইলে সে আমাকে প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দেয়। আমি এ কলেজে কিভাবে চাকরি করি এটা সে দেখবে। আমার নামে কমিটির কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে। সর্বশেষ ২০২২ সালে ১৭ মার্চ কলেজে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের ব্যানার টানাতে চাইলে সে আমাকে বাধা দেয়। এছাড়াও সকল রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম শটকাট করে নাম মাত্র পালন করে। আমি এগুলোর প্রতিবাদ করলে সে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে। আমাকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়
ফজলুর রহমান মেমোরিয়াল কলেজ অব টেকনোলজির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ কলেজের অধ্যক্ষ আবু তাহের সে বিভিন্ন সময় কলেজের টাকা প্রতারণা করে আত্মসাৎ করে আসছে। আমি বিষয়টি জানার পরে প্রতিবাদ করি এবং তার হিসাব চাই। আমি তার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় সে বিভিন্ন ভাবে কলা কৌশল করে আমাকে সভাপতি থেকে সরায়। আমি তার অনিয়ম এবং দূর্নীতি বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করি। অভিযোগের ভিত্তিতে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় সে এখন আরো বেপরোয়া হয়ে গেছে। আমি প্রশাসনকে বলবো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, আপনার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে। এগুলো সব মিথ্যা। আপনার কাছে কি কি অভিযোগ আছে নিয়ে আসেন আমি আপনার সাথে সরাসরি দেখে কথা বলবো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি ও বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, আমি কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি লিখিত অভিযোগ পাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার) সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবু জাহের এমপি বলেন, তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আছে আমাকে দিয়েন। আমি ইউএনও কে বলে দেবো বিষয়টি দেখার জন্য । যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a Reply