৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৮:১৫ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
রায়হান হোসাইন, , চট্টগ্রামঃ-
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী রেলগেটে ভয়াবহ দুর্ঘটনার দুমাস যেতে না যেতেই এবার ‘অবৈধ রেলক্রসিংয়ে’ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে সাগরিকা এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন আহত হয়। রোববার এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমি আক্তার (২২) নামে এক তরুণীর মৃত্যুর পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
তবে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও ঘটনা তদন্তে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। উল্টো অভিযোগ উঠেছে— দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় রেলগেট ও রেলক্রসিং না থাকার বিষয়টি সামনে উঠে আসার ‘ভয়ে’এ দুর্ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে যেহেতু কোন লেভেল ক্রসিং নেই। সেহেতু গেট ম্যান থাকার প্রশ্নই আসেনা। সেখানে গেটের কোন অনুমোদনও নেই। কিভাবে সেদিনের মাইক্রোটি রেললাইনের উপর উঠে এল, তার তদন্তভার বর্তায় রেলওয়ে পুলিশের উপর।’ এ দুর্ঘটনা তদন্তের দায় এভাবেই রেলওয়ে পুলিশের উপর চাপিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দুর্ঘটনার পর মাইক্রোর অজ্ঞাত চালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে রেলওয়ে পুলিশ। সেই মামলায় গেট না থাকার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ‘একমাত্র’ আসামি করা হয়েছে সেই মাইক্রোবাস চালককে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আপাত দৃষ্টিতে মাইক্রো চালকের দোষই ছিল বলে মনে হচ্ছে। তবে সেখানে গেট বা গেটম্যান ছিল না এটাও সত্য। সব মিলিয়ে আমরা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েছিলাম। তবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে অন্যান্য দুর্ঘটনার মতো এবারেরও টাও উনারা খুব সিরিয়াস ভাবে নেয়নি। কিন্তু সেদিন ওই গাড়িতে একই পরিবারের ৯ জন ছিল। সবাই গাড়ি থেকে নামতে না পারলে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।’
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বিদেশগামী যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের দিকে যাচ্ছিল একটি মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাসটি সাগরিকা স্টেডিয়াম (পেছনে) সংলগ্ন রেললাইনে বেপোয়াভাবে উঠে পড়ে। এ সময় চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ছুঁটে আসা মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে পরিবারের বাকি সদস্যরা একে একে দৌঁড়ে মাইক্রো থেকে নেমে গেলেও আটকা পড়েন সুমি আক্তার (২২)। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) চমেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তদন্ত কমিটি না হওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওখানে কোন লেভেল ক্রসিং নেই। কোন গেট থাকার তো কথাই আসছে না। ওখানে কিভাবে মাইক্রোবাস এসে রেল লাইনের উপর উঠিয়ে দেয়া হয়েছে— সেটা রেলওয়ে পুলিশ দেখছে। যেহেতু লেভেল ক্রসিং নেই সেহেতু রেলওয়ের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।’
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর জব্দ করা হয়েছে কালো রংয়ের মাইক্রোবাসটি। পুলিশের দায়ের করা মামলায় ট্রেনের ইঞ্জিনের ক্ষতি উল্লেখ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর সুমি আক্তার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল। গত পরশু তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মাইক্রোচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত চালকের খোঁজে অভিযান চলমান আছে।’
Leave a Reply