৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১১:৩২ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিআইডব্লিউটিএর একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস চাকুরি করেন হিসাব বিভাগের অফিস সহকারি পদে। সর্বসাকুল্যে বেতন পান ৩০/৩৫ হাজার .টাকা। লোন কাটারপর থাকে ২০/২২ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি থাকেন ৩০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ার অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে। অফিস ডিউটি করেন নামে মাত্র। ২/৩ দিন পর পর একবার নিজ কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় সহি করেই চলে যান চেয়ারম্যান কমডোব গোলাম সাদেকের দপ্তরে । সেখানেই তিনি কর্মদিবসের বেশি সময় ব্যয় করেন।
রাষ্ট্রপতি,মন্ত্রী,এমপি ও শীর্ষ আ:লীগ নেতা ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সাথে ছবি তুলে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করে নিজেকে মহাক্ষমতাধর হিসাবে প্রচার করেন। এবং কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন এদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। এমন কি চাকুরীও থাকবে না। দুদক এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কর্মকর্তাদের সাথে তার নাকি বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। অতএব হাজারটা অপকর্ম করলেও কেউ তার লোমটিও স্পর্শ করতে পারবে না।
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুরে তার বাড়ী বিধায় সেই দাপটে দাপিয়ে বেড়ান বিআইডব্লিউটিএর নীচতলা থেকে ওপরতলা পর্য়ন্ত। নিজেকে পরিচয় দেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতা হিসাবে। ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যায় তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, নৌযান শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরি সভাপতি,বঙ্গবন্ধু পরিষদের য়ুগ্ম সাংধারণ সম্পাদক। আর এসব পরিচয় ব্যবহার করে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে গড়ে তুলেছেন দহরম মহরম সম্পর্ক। ফলে চেয়ারম্যান এখন এই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির কথামত ফাইল ওয়ার্ক এমন কি নিয়োগ,বদলীও করছেন।
চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে পান্না বিশ^াসের এই ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে এখন বিআইডব্লিউটিএ ভবনে নানা রসালো কথা চালাচালি হচ্ছে । প্রশ্ন উঠেছে যে, বিআইডব্লিউটিএতে এতো উচ্চ পদস্থ সুশিক্ষিত কর্মকর্তা,কর্মচারি থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান কেন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারিকে তার রক্ষাকবচ হিসাবে বেছে নিয়েছেন? এর নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে জানাগেছে, গোপালগঞ্জের লোক হিসাবে পান্না বিশ্বাস আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রী,এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতার বাসায় আসা যাওয়া করেন। তাদের সাথে চেয়ারমানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের অনুমোদিত মামলা যাতে দায়ের না হয় এবং নৌবাহিনীর পদন্নোতি যাতে দ্রুত কার্যকর হয় সেই তদবীরের দায়িত্ব নিয়েছেন তুতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস। যে কারণে চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এখন পান্না নির্ভর হয়ে পড়েছেন। অফিসিয়াল কর্মকান্ডে যেখানেই যাচ্ছেন পান্না বিশ্বাসকে সঙ্গে নিচ্ছেন। চাকুরীর শৃংক্ষলাবিধি ভংগ করে একসাথে যৌথ ছবি তুলছেন আবার সেগুলো ফেসবুকে প্রচারও করছেন। এসব ছবি দেখে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা পান্না বিশ্বাসকেই চেয়ারম্যানের ডান হাত বলে মনে করছেন এবং তাকে সমীহ করে চলছেন। এমন কি নানা তদবীর নিয়েও পান্না বিশ্বাসের কছে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এ দিকে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ্বাস নিজেকে ভি-ভিআইপি প্রমানের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদের সাথে কর্মদনের ছবি তার ফেসবুকের প্রোফাইল কভারে ব্যবহার করেছেন। এটা আইসিটি আইনের অপরাধজনক কাজ হলেও তিনি অবলীলায় সেটা করছেন।
অন্যদিকে বিআইডব্লিইটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক তার পদ পদবীর মর্যাদা অবমাননা করে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির সাথে যৌথ ও গ্রুপ ছবি তুলে সেগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় প্রদর্শন করে স্বীয় পদের অমর্যদা করেছেন যা একটি সরকার প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি শুধু ক্ষুন্নই করেনি চেইন অব কমান্ডেরও অশেষ ক্ষতি সাধন করেছে। শুধু কি তাই? তিনি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সাথে তার অফিসে দেখা করতে গিয়েও তুতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্নাকে সাথে নিয়েছেন।
বিআইডব্লিউটিএতে অতীতে এমন কোন রেকর্ড নেই বলে মন্তব্য করেছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দ। তাদের প্রশ্ন: চেয়ারম্যান স্যার কেন একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির সাথে এ ধরনের “বন্ধু“ সুলভ সম্পর্ক গড়ে তুললেন? এতে যে প্রতিষ্ঠানটির চেইন অব কমান্ড ভেঙে গেল সেটি কি তিনি বুঝতে পারছেন না?
অভিযোগ উঠেছে যে, চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সাথে একটি বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ^াস কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য,টেন্ডারে কমিশন বাণিজ্য,কর্মচারি বদলী বাণিজ্য করে গত ২বছরে কোটিপতি বনেগেছেন। এছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্ষিক পিকনিকেও কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। এখন বিআইডব্লিউটিএতে তার একক আধিপত্য চলছে। এসব বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হওয়ায় তিনি ওই সব পত্রিকায় সম্পাদক বরাবরে উকিল নোটিশ পাঠিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্ঠা করছেন।
আরো জানাগেছে, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি পান্না বিশ^াসের নামে সুনির্দিষ্ট কিছু দুর্নীতির অভিযোগ দুদকে জমা পড়েছে। দুদকের যাচাই বাছাই কমিটির পরবর্তী সভায় সেটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হবে বলে দুদকের একটি সুত্র জানিয়েছে। মাত্র ১০ বছর চাকুরী করে পান্না এখন প্রায় ১০ কোটি টাকার মালিক । তিনি এই টাকা কোন পথে অর্জন করলেন তা দুদকের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার দাবী তুলেছেন বিআইডব্লিউটিএর দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
এ বিষয়ে পান্নার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ। ছবিগুলোর ব্যাপারে বলেন ,আমি রাজনীতি ও সিবিএ করি তাই এসব ছবি আমাদের বিভিন্ন কর্মসুচীতে তোলা। চেয়ারম্যানের সাথে তার কোন বিশেষ সম্পর্ক নেই বলেও তিনি দাবী করেন।
কথা বলার জন্য বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেকের অফিসে ফোন করলে জানান হয়-স্যার সরকারী ট্যুরে ঢাকার বাইরে আছেন।
Leave a Reply