১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১০:০৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
বিশেষ প্রতিবেদক
সেগুন বাগিচাস্থ নিউ ভিশন টাওয়ারের বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স ক্লাবে হচ্ছে কী ? এ প্রশ্ন এই আবাসিক ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাট ওনারের। তারা জানান, বিকাল থেকে গভীর রাত অবধি এই অফিসার্স ক্লাবে নানা কিসিমের লোকজন আসা যাওয়া করেন। তাদের গাড়ীগুলো এমন ভাবে পার্কিং করা থাকে যে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের গাড়ীগুলো ঠিকমত পার্কিং করতে পারেন না।
এ ছাড়া যে সব লোকজন এই অফিসার্স ক্লাবে আসা যাওয়া করেন তাদের গতিবিধিও সুবিধাজনক মনে হয় না। অনেক সময় ক্লাবের ভেতরে উচ্চস্বরে মিউজিক বাজানো হয়। আবার চিল্লাচিল্লি চেচামেচিও শোনা যায়। অফিসার হিসাবে অনেকে এসে রাত্রীও যাপন করেন। এতকরে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বিরক্ত হন। ছেলে মেয়েরাও আতংকিত হয়ে পড়ে। তাদের প্রশ্ন, আসলে কী হয় এই অফিসার্স ক্লাবটিতে ?
খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, বিআইডব্লিউটিএ অফিসারদের মানষিক রিক্রিয়েশনের জন্য সেগুন বাগিচাস্থ নিউ ভিশন টাওয়ারের ৯ তলায় বিশাল আকৃতির এই ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেন বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশন। যার মুল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এরপর এর ভেতরে অত্যাধুনিক ডেকোরেশন করা হয়। ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের সময় তারা আবাসিক চুক্তিতে আবদ্ধ হলেও পরে গিয়ে সেটাকে ক্লাবে রূপদান করেন। অফিসারদের থাকার জন্য তিনটি ডিল্যাক্স কক্ষও তৈরী করা হয়। এ ছাড়া কার্ড ও ক্যারাম খেলার জন্য আলাদা স্পেস রয়েছে।
ডেকোরেশন শেষ হতেই সেখানে অফিসারদের আনাগোনা বেড়ে যায়। শোনা যায় এই ক্লাবটি তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকাদারদের সাথে গোপন লেনদেন ও আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। শুধু তাই নয়, এই ক্লাবে জামায়াত ও বিএনপিপন্থি অফিসাররা দলের বড় বড় নেতাদের নিয়ে গোপন সভা করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে এই ফ্ল্যাটটি কেনার অর্থের উৎস নিয়ে। এত টাকা কি বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশনের ব্যাংক হিসাবে ছিলো ? নাকি অন্য কেন অবৈধপথে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে ? সেটি তদন্তের দাবী রাখে।
আরো অভিযোগ যে, তারা এটাকে বাইরের সংগঠনের কাছে ভাড়াও দিয়ে থাকেন। অফিসের আগতদের সেবা দান করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং ্িবভাগের দুজন সরকারি কর্মচারীকে ওই ক্লাবে ডিউটি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
বর্তমানে ক্লাবটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারীর দায়িত্বে আছেন ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলী মো: ছাইয়েদুর রহমান, অন্যান্য দায়িত্বে আছেন উপ পরিচালক (মানব সম্পদ) মো: সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক মো: কবিরুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী নানা প্রকার কর্মকান্ডও এই ক্লাবটিতে চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চোখে ফাঁকি দিয়ে আবাসিক ভবনে অফিসার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড ও ওয়ানটেন জাতীয় জুয়ার বোর্ড পরিচালনা,ওয়ানটেড ব্যাক্তিদের নিরাপদে রাত কাটানোর সুব্যবস্থা করার নিরাপদ স্থান হিসাবে এই ক্লাবটি এখন ব্যবহার হচ্ছে মর্মে অনেকেই সন্দেহ করছেন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিব তালুকদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সব বাজে কথা। আপনারা তদন্ত করে দেখুন। এটা মূলত অফিসারদের আবাসিক সমস্যা সমাধান ও কর্মকর্তাদের নানাবিধ কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকেও রেজিষ্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আইন শৃংক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারী ও দুদকের পদক্ষেপ কামনা করেছেন এই টাওয়ারের অধিকাংশ ফ্ল্যাট ওনারগন। (চলবে)
Leave a Reply