২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । রাত ৪:৩১ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টারঃ
অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রধান কার্যালয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক সিনিয়র সাংবাদিক। ওই প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আবুল হোসেনের নেতৃত্বে তারিকুল আলম খান নামের এই সিনিয়র সাংবাদিককে বেধড়ক মারপিট করা হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির মধ্যেই। যদিও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি। তবে বিচার চেয়ে ওই সাংবাদিক গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেছেন। মামলা নং ১৫,সিআর মামলা নং ৪৫৪/২০২৩। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবিতে) পাঠিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। তারা অনতি বিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও বিভাগীয় শাস্তির দাবী তুলেছেন। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ বিআইডব্লিউটিএর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিষ্ঠানটির সমস্ত প্রকার সংবাদ পরিবেশন বর্জন করবেন।
মামলার এজাহারে সিনিয়র সাংবাদিক তারিকুল আলম খান অভিযোগ করেন, তিনি দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। পেশাগত কাজে গত ১৯ মার্চ তিনি বিআইডব্লিটিএর প্রধান কার্যালয়ে যান। একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন। ওই সময় ওই কর্মকর্তার রুমে থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ও সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেন তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “তুই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিস, তোকে আমি মেরেই ফেলবো“। এ কথা বলে তাকে শারিরীকভাবে আঘাত করেন। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মিলে তাকে (সাংবাদিক তারিকুল আলম) লোহার রড, লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহতও করেন। এ সময় আশেপাশে থাকা লোকজন (মামলার সাক্ষীগন) তাকে রক্ষা করেন।
মামলায় তিনি আরো অভিযোগ করেন, সিবিএ সভাপতি আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে আবুল হোসেন বিআইডব্লিউটিএতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেন। গত ১৩ মার্চ এ নিয়ে সাংবাদিক তারিকুল আলম খান দৈনিক মুক্তখবর পত্রিকায় “বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেও গ্রেপ্তার হয়নি আবুল হোসেন“ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন। ওই সংবাদে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার ওপর হামলা করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, আসামি আবুল হোসেন তার পকেট থেকে ৩ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেন এবং তাকে গুম ও খুন করার হুমকি দেন। পরে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পেয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। মামলার বিষয়ে সাংবাদিক আলম বলেন, আসামি আবুল হোসেন একজন দূর্ধষ প্রকৃতির লোক। আকর্¯ি§ক তার ওপর হামলা করেন। তিনি গতকাল মামলা করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সুবিচার আশা করছেন। তিনি সাংবাদিক নেতাদেরও বিষয়টি অবহিত করেছেন। গত কয়েকদিন অসু¯’ থাকায় তিনি বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ করতে পারেন নি।
আবুল হোসেন বিআইডব্লিটিএর অর্থ বিভাগের উ”চমান সহকারীর পদে কমর্রত আছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র সিবিএ সভাপতি পদে আছেন। বিআইডব্লিউটিএতে শ্রমিক কর্মচারীদের সংগঠন সিবিএ থাকলেও আবুল হোসেনের নেতৃত্বে আরেকটি সিবিএ সংগঠন তৈরি করা হয় অবৈধপথে। সম্প্রতি আদালত আবুল হোসেনের তৈরি করা সিবিএ সংগঠনটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায়ও দিয়েছেন। তবুও ওই সিবিএ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মচারীদের বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে। আবুল হোসেনের সিন্ডিকেট বিআইডব্লিউটিএতে অসীম আধিপত্য বিস্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, কর্মচারীদের মারপিট, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো, অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে করছে। কর্মচারী হয়েও আবুল হোসেন বিআইডব্লিটিএর গাড়ি ব্যবহার করছেন। অথচ কোন কর্মচারীর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ নেই। অর্থ বিভাগের উ”চমান সহকারির পদে থেকে বেতন ভাতাসহ যাবতীয় সুবিধা নিলেও আবুল হোসেন দাপ্তরিক কোন কাজ করেন না। প্রতিদিন তিনি এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে আড্ডা ও কর্মচারীদের বদলি (পছন্দের লোকদের বদলি) করার তদবিরে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারি আবুল হোসেন গত কয়েক বছরে বিআইডব্লিটিএ নিয়ন্ত্রণে রেখে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের গায়ে হাত দেয়া রীতিমতো ফৌজদারী অপরাধ। কোন সরকারি অফিসে সরকারের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। ভুক্তভোগী সাংবাদিক আমাদের কাছে লিখিতভাবে বা মৌখিকভাবে ঘটনা জানালে আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবো। আমরা বিষয়টি খোঁজ খবর নি”িছ। তবে এ বিষয়ে অবগত করা হলেও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কোন বিভাগীয় ব্যব¯’া না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক মহল।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক মুক্তখবর পত্রিকার চীফ রিপোর্টার নূর আলম প্রিন্স নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামালের সাথে কথা বললে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া নিতে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
Leave a Reply