৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৮:৩০ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নিজের বাড়ি লুট হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছিলেন জবেদ আলী মিয়াজী (৮৬)। বুধবার এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেন। গত বৃ্হস্পতিবার সাত সকালেই সেই শংকাকে সত্যি করে লুট হয়ে গেল তার পৈতৃক বাড়ি। আর এই ঘটনার অনেকখানি ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মানিকদী নামাপাড়া এলাকায়।
জানা যায়, গত মঙ্গলবারই মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে সড়কের পাশের ঝুপড়ি ঘরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে নিজের বাড়িটি লুট হওয়ার আশংকার কথা বলেছিলেন অশীতিপর জবেদ আলী। বলেছিলেন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী নামাপাড়া এলাকায় ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া জমিতে নির্মাণ করা একটি টিনের ঘরসহ বাড়িটিতে যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে ভূমিদস্যুরা। সেটি ঠেকাতে পরদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে গিয়েছিলেন থানায়। কিন্তু ওসি থানায় না থাকায় জিডি নেওয়া যাবে না – এমন কথা শুনে আরো অসুস্থ হতে পড়েন তিনি। এরপর জিডি ও অভিযোগের দুটি কপি ডিউটি অফিসারকে দিয়ে বাড়িতে এসে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন জবেদ আলী। ঠিক তার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ভোরেই সত্যি হয় জবেদ আলীর শংকা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভাষানটেক এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ‘বিএনপি খোকনের’ নেতৃত্বে একদল লোক এসে প্রথমেই হামলে পড়ে তার বাড়ির সামনের হোল্ডিং নম্বর (২৫২/৮) লাগানো সাইনবোর্ডে। সেটা টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলার পর তাদের চোখ পড়ে বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে। তখন তারা সেখানকার দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলার পর শুরু করে তাণ্ডব। বাড়ির গেটে লাগানো দুটি তালা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভাংচুর চালায়। ভেঙে ফেলে প্লটের ভেতরে টিনের ঘরের সাথে থাকা সাইনবোর্ডও। তালা ভেঙে ভেতরে থাকা চার্জার লাইট-ফ্যানসহ আরো বেশকিছু মালামাল লুটে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় উপড়ে তুলে নিয়ে যায় বাড়ির সামনে থাকা লোহার সাইনবোর্ডটিও। এই ঘটনা জানার পর আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন জবেদ আলী।ছেলে সুমন থানায় বারবার ফোন দিলেও পুলিশ একবারের জন্য ঘটনাস্থলে আসেনি বলে অভিযোগ তার।
মিরপুর ১৩ নম্বর সেকশনে রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী সাহিদা খাতুনকে নিয়ে বসবাস করেন জবেদ আলী। এই বয়সেও ঘরের পাশে একটি চায়ের দোকান দিয়ে চলে সংসার। আলাপকালে জবেদ আলী জানান, ক্যান্টনমেন্টের মানিকদী এলাকায় প্রায় ৯০ বছর আগে থেকে তাদের পারিবারিক দেড় একর জমি ছিল কিন্তু সেগুলো স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করতে করতে অবশিষ্ট আছে মাত্র ৯ কাঠা জমি। সেখানে মাটি ভরাট করে টিনের ঘর নির্মাণ করেন তিনি। সেখানে পানি-বিদ্যুৎ এনে বসবাস শুরু করবেন— এমন প্রস্তুতি যখন নিচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ জানতে পারেন পার্শ্ববর্তী ভাষানটেক থানার দেওয়ানপাড়া এলাকার দেওয়ান পরিবারের লোকজন তার পৈতৃক ভিটাটি দখলের চেষ্টা করছে। জনৈক মনির দেওয়ান নাকি কোন ওয়ারিশদের সাথে এই জমি বায়না করেছেন।এ খবর শোনার পর তাৎক্ষণিক তিনি ছুটে যান তেজগাঁও রেজিস্ট্রি অফিসে। মূল দলিলসহ সমস্ত আসল কাগজপত্র তার কাছে থাকার পরও কিভাবে রেজিস্ট্রি বায়না হলো? এ কথা জানতে গিয়ে বেরিয়ে আসে কেঁচো খুঁড়তে সাপ। দলিল জালিয়াতি করে কিছু ওয়ারিশের কাছ থেকে বায়নানামায় স্বাক্ষর নিয়েছেন মনির দেওয়ান ও তার লোকজন। জবেদ আলী আরো বলেন, শুনেছি আমার বংশের কিছু লোক তাদের কাছ থেকে বায়না নিয়েছে। কিন্তু এই দাগে তো অনেক সম্পত্তি।তাদের জমি তারা খুঁজে নিক। আর বায়না দিলেই কি জমির মালিক হয়ে গেল! সব রেখে কেন আমার বাড়ি লুট করল? আমি গরিব বলেই কি আমার জানমালের ওপর এমন হুমকি! আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই। এই সময়েও যদি বিএনপির লোকজন এসে বাড়িঘর লুট করে তাহলে আমরা যাব কোথায়? ভিডিও ফুটেজ দেখে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই লুট-কান্ডে নেতৃত্ব দেন ভাষানটেক থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোকন। তার সাথে ছিলেন বিএনপি-যুবদলের কর্মী সোবাহান, জসিম, অপুসহ বেশ কয়েকজন। সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলার পর সেখানে ১০-১২ জনের আরেকটি গ্রুপ মনির দেওয়ান-আরিফ আহমেদ ও বিএনপির নেতা গোলাম কিবরিয়া স্বাধীনের নেতৃত্বে সেখানে যোগ দেয়। এ ঘটনার পর কোনো মামলা করেছেন কিনা জানতে চাইলে জবেদ আলী বলেন, মামলা নয়, ওসি সাহেবের পরামর্শে জিডি করেছি। তিনি বলেছেন, তদন্তের পর মামলা হবে। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার ৫০ বছরের অপেক্ষার ফল কি শুধুই কান্না? এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মনির দেওয়ান, ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি শাহীনুর রহমান ও গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) কে বারবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি সে কারনে তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।
Leave a Reply