৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১:০৬ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
সাঈদুর রহমান রিমনঃ
দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ‘ভয়ঙ্কর স্থান’ খ্যাত সাতক্ষীরায় রঘুনাথ খা নামের এক সাংবাদিকের উপর ভয়ঙ্কর নীপিড়ন, নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। রঘুনাথ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভি এবং বাংলা ৭১ পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাকে আটকের পর প্রথম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এবং পরে দেবহাটা থানায় নিয়ে ইলেকট্রিক শক দেয়াসহ নানা বর্বরতা চালানো হয়। আদালতে আনা সাংবাদিক রঘুনাথের উদ্বৃতি দিয়ে তার স্ত্রী সুপ্রিয়া রানী জানিয়েছেন, রঘুনাথের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। তার কানে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে, ঘাড়ে আঘাত করা হয়েছে। হাতের আঙুল ভেঙে দেয়া হয়েছে। হাতের তালু, পায়ের তালু মেরে ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্যাতন বর্বরতায় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় থানা হাজতের মেঝেতে ফেলে রাখা হলেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত করা হয়নি।
কিন্তু সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ-র বিরুদ্ধে পুলিশ পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছে, তিনি সাতক্ষীরার ভয়ঙ্কর সাংবাদিক। দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, ‘সাপমারা খাল ব্রিজ এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সোমবার সকালে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে পুলিশ রঘুনাথ খাঁ-সহ তার অপর তিন সহযোগীকে আটক করে।’ একই ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যক্তিও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি। যদিও সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের ডে নাইট কলেজের সামনে থেকে সাদা পোশাকধারীরা তাকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে জোরপূর্বক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু সন্ধ্যায় তাকে সাপমারা থেকে আটক দেখানো হয়।
সাংবাদিক রঘুনাথ খাকে আটক করে প্রথমত নিরুদ্দেশ রাখা এবং পরবর্তীতে বর্বর নির্যাতন চালানোসহ নানাকান্ডে পুলিশ রীতিমত ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। যে কারণে তার সহায়তায় কোনো সাংবাদিকও এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি আদালতে জামিন আবেদন জানাতে কোনো আইনজীবী পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক স্ত্রী সুপ্রিয়া রাণী।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের অতিউৎসাহী সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা সাংবাদিকদের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পাঁয়তারায় লিপ্ত থাকছেন। এমন অনেক অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনা একত্রিত করলেই ‘পরিকল্পিত সাংবাদিক নিধন’ হিসেবে ছড়িয়ে বেড়াবে কেউ কেউ। জের হিসেবে কর্মকর্তাদের কিছু যায় আসে না, সব দায় আওয়ামীলীগ সরকারের উপর চাপাতেই ব্যস্ত তারা।
সাংবাদিক রঘু টার্গেট হলেন যে কারণে۔۔۔
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী খালের বিপুল পরিমান জায়গা জমি হটাৎ করেই ক তফসিল ভুক্ত খাস খতিয়ান হিসেবে ঘোষিত হয়! এরপর থেকেই পুলিশের সহায়তায় ভূমিহীনদের হটিয়ে সে খাস জমি জোতদারদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছিলো দফায় দফায়! শুধু পুলিশ নয়, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, জেলা প্রশাসন, দাপুটে সন্ত্রাসী বাহিনী থেকে শুরু করে এলাকার জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত কাজ করতো জোতদারদের পক্ষে, ভূমিহীদের বিরুদ্ধে!
এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকগণও জোতদারদের অনুকূলে থাকা কাগজপত্রের আলোকেই প্রতিবেদন ছাপাতেন! সেখানেই ব্যতিক্রম ছিলেন সাংবাদিক রঘুনাথ খা! তিনিই শুধু ভূমিহীনদের পক্ষে কলম ধরতেন, লিখতেন জোতদার ও পুলিশের বিরুদ্ধে! দেবহাটা থানা থেকে শুরু করে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ কর্তার জন্য তা চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়! আটক হওয়ার দিনও রঘুনাথ দেবহাটার খলিশাখালী এলাকায় যান সরেজমিন তথ্য উপাত্ত ও ফুটেজ সংগ্রহের কাজে! তার এ অনুসন্ধান থামাতেই পুলিশ ও জোতদার গোপন বৈঠকে বসে এবং এক জোতদারকে বাদী বানিয়ে রঘুনাথের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে চাঁদাবাজির! বাকি কাজও চলতে থাকে নীলনকশা ও পরিকল্পনা মাফিকই!
সাংবাদিক রঘুনাথকে ‘সাইজ’ করতে সাতক্ষীরার পুলিশ এমনই ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে চলছে যে, সাংবাদিকরা পর্যন্ত টু শব্দটি করতেও সাহস পাচ্ছেন না! আর কথিত কয়েকজন সাংবাদিক তো সরাসরি পুলিশি মুখপত্র’র ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় নেমেছে! ছি: সৌহার্দপূর্ণ সাংবাদিকতা, ছি: জোতদারদের গোলামী করা!
Leave a Reply