৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১১:০৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
তাছলিমা তমাঃ
সকল প্রক্রিয়া শেষ করে সিঙ্গাপুর থেকে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী জৈব কীটনাশক বিটিআই আনতে সক্ষম হয়েছি। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সিঙ্গাপুরের একটি বিশেষজ্ঞ টিমের শুক্র ও শনিবার কনফারেন্স হবে। আমাদের কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞ টিমের কাছ থেকে জানবে বিটিআই কীটনাশকটি কিভাবে মিক্সিং হবে, কিভাবে ও কোথায় ব্যবহার হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আগামী রবিবার থেকে কীটনাশক বিটিআই প্রয়োগ করা হবে।’
বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট ২০২৩) দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তৃতায় মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় শুরুর আগে নগর ভবনের সম্মুখস্থল হতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ০৫টি নির্দেশনা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে জনসচেতনতামূলক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামসহ সকল কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম র্যালিতে অংশ নেন। র্যালিটি নগর ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুলশান-২ গোলচত্ত্বর হয়ে আবার নগর ভবনে এসে শেষ হয়।
সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা ডিএনসিসি থেকে কল সেন্টারের মাধ্যমে নগরবাসীকে কল করে সচেতন করছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্টুন বই বিতরণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষকদের সাথে এবং ইমাম ও খতিবদের সাথে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়াতে সভা করেছি। এখন কাউন্সিলররা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে সভা করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিএনসিসি তিন স্তরে কার্যক্রম শুরু করেছে। সাধারণ কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স মাঠে আছে। প্রতি মাসে কার্যক্রমের ছবিসহ অন্তত দুটি প্রতিবেদন পাঠাবে কাউন্সিলররা।’
মেয়র আরও বলেন, ‘এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আমরা অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করছি। সারা বছর জুড়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হবে। লার্ভা পেলেই জরিমানা। আমি মন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করছি দশটি অঞ্চলের জন্য স্থায়ীভাবে দশজন ম্যাজিস্ট্রেট পদায়ন করার জন্য। যেন তারা দীর্ঘদিন কাজ করে এডিসের লার্ভার উৎসস্থল সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এতে দক্ষতার সাথে কাজটি করা সম্ভব হবে।এসময় ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগের জন্যও স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেন্সিস (বিটিআই) হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই জৈবিক লার্ভিসাইড কার্যকরভাবে মশার লার্ভাকে ধ্বংস করে। এর বৈশিষ্ট্য হলো, এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই মানুষের শরীরে। শুধু তা–ই নয়, বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষা প্রাণী, জলজ প্রাণী, গবাদি পশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা যে পর্যায়েই কাজ করুন না কেন জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। করোনা কালীন সময়ে করোনাকে যেরকম সবাই গুরুত্ব দিয়েছিল এবং ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল তাতে করোনার যুদ্ধে আমরা সফল হয়েছিলাম। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ডেঙ্গুর মতো রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধেও আমাদেরকে সেরকম সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ সময় সমসাময়িক বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে ১২৯ টি দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সারা পৃথিবীতেই এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। তবে আসার কথা হল ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হ্রাস করা সম্ভব। সেজন্য প্রধান কাজ হচ্ছে এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করা। মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের নিজ নিজ এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন।’
এ সময় তিনি এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে বা লার্ভা জন্মানোর মতন উপযুক্ত পরিবেশ আছে এ রকম বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিস আদালতকে বড় অংকের জরিমানার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। মন্ত্রী বলেন, নানাভাবে সতর্ক করার পরও মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলার মত অসচেতনতাকে ক্ষমা করার সুযোগ নেই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে মতামত উল্লেখ করে মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস না করে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হ্রাস করার সহজ কোনো উপায় নেই কারণ মশা এমন একটি প্রাণী যা যে কাউকেই কামড়াতে পারে। এ সময় তিনি ডেঙ্গু মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসে বিটিআই প্যাকেটের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং তা সাংবাদিকদেরকে দেখান।
বক্তব্য শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসে বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং এ সম্পর্কিত নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী।
অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ এ.কে.এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেঃ জেনাঃ মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলরবৃন্দ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন
Leave a Reply