1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর যেন টাকা বানানোর মেশিন-সকালে ঘুষ দিলে বিকালে পোস্টিং! - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ২:২৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
স্বতন্ত্র সাংসদ ওয়াহেদের বেপরোয়া আট খলিফা চৌদ্দগ্রামে পুকুরের মালিকানা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা ঋণ খেলাপী রতন চন্দ্রকে কালবের পরিচালক পদ থেকে অপসারন দাবি নীরব ঘাতক নীরব লালমাই অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি নিউজ করতে গিয়ে হুমকি, থানায় জিডি বিশ্বনাথের পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে সাত কাউন্সিলরের পাহাড়সম অভিযোগ বিশ্বনাথে ১১ চেয়ারম্যান প্রার্থী’সহ ২০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল মুখে ভারতীয় পণ্য বয়কট, অথচ ভারতেই বাংলাদেশি পর্যটকের হিড়িক শার্শায় সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের উপর হামলা গণপূর্ত অধিদপ্তরের মহা দূর্নীতিবাজ ডিপ্লোমা মাহাবুব আবার ঢাকা মেট্রো ডিভিশনে!
মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর যেন টাকা বানানোর মেশিন-সকালে ঘুষ দিলে বিকালে পোস্টিং!

মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর যেন টাকা বানানোর মেশিন-সকালে ঘুষ দিলে বিকালে পোস্টিং!

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর যেন টাকা বানানোর মেশিনে পরিণত হয়েছে। চলছে বদলি ও প্রশিক্ষণের নামে রমরমা বাণিজ্য। সকালে টাকা দিলে বিকালেই মেলে পোস্টিং। অবশ্য এর জন্য দিতে হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সাবেক এক মহাপরিচালকের সময় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এই তিন মাসেই প্রায় ৪ হাজার নার্স বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি হয়েছেন।

নজিরবিহীন ও অস্বাভাবিক এই বদলি শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থগিত করে। এর আগেই সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বদলি করা হয়েছিল এমন কয়েক জন নার্সের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো প্রক্রিয়াটিই নিয়ন্ত্রণ করেছে একটি ‘সিন্ডিকেট’। তার অন্যতম হোতা জামাল উদ্দিন, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার আত্মীয়। কোনো বদলি ঘুষ ছাড়া সম্ভব হয় না। অনেক মেয়ে প্রয়োজনে বদলির আবেদন করেছেন। মাসের পর মাস করেন অপেক্ষা। বদলির বিষয়ে অধিদপ্তরে খোঁজ নিতে গেলে মিলেছে দুর্ব্যবহার ও হয়রানি। এমনও হয়েছে আনসার গেট থেকে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এমন আচরণে নার্সরা ক্ষুব্ধ। ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, প্রতিটি বদলিতে দালালের শরণাপন্ন হতে বাধ্য করা হতো। তাদের দিতে হয়েছে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা। প্রতিবাদ করলেই পদেপদে হয়রানি করা হয়।

এসব বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের তথ্য যাতে ফাঁস না হয় সেজন্য দুই জন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে নিজ খরচে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য শিক্ষা ছুটি দিয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণের টাকা কোথায় পেলেন তারা। একসময় যাদের সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হতো।

ঐ দুই জনের একজন হলেন এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পিএ। যিনি জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউট থেকে এসেছেন। অন্যজন এসেছেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে। তারা দুই জনই সিন্ডিকেটের সদস্য। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এরা টাকা পাঠিয়ে দিয়ে সংকেত দিত। তখন নিচ থেকে ফাইল দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চলে যেত।

আরেক জন আছেন ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজের ইনস্ট্রাক্টর (নিজ বেতন)। তাকে সংযুক্তি দেওয়া হয় অধিদপ্তরে। এর বাইরেও তাকে সংযুক্তি দেওয়া হয় মুগদার নিয়েনারে। তিনি সব প্রশিক্ষণ এবং নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণকাজ করতেন। তিনি জামাল নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটের হোতা। এই সিন্ডিকেটের বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নেটওয়ার্ক রয়েছে। নার্সরা নেটওয়ার্কের বাইরে গিয়ে বদলি হতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে এই নেটওয়ার্কে আসতে হতো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা ছুটি দিয়ে ঐ দুই সিনিয়র স্টাফ নার্সকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে মূলত অবৈধ উপায়ে অর্জন করা কোটি কোটি টাকা পাচারের উদ্দেশ্যে। অপর দিকে সিন্ডিকেটের লেনদেনর তথ্য যেন ফাঁস না হয়। তাদের মাধ্যমে মূলত বদলি বাণিজ্যের লেনদেন হতো। ‘শিক্ষা ছুটিতে যাওয়া’ দুই জনের একজন চাকরিতে যোগদান করেন ২০১৬ সালে, আরেক জন ২০১৮ সালে।

এই দুই জনকে গ্রেফতার করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান নার্স নেতারা। তারা প্রশ্ন রাখেন, সিনিয়র স্টাফ নার্স হয়ে তারা এত টাকা পেলেন কোথায়?

অধিদপ্তরের আরেক জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চলতেন একজন নার্স নেতার কথায়। উনি যখন অধিদপ্তরে যোগদান করেন কিছু জানতেন না। এই সুযোগে ঐ নার্স তাকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একসময় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ঐ নার্স নেতা বর্তমান সরকারের আমলেও দোর্দণ্ড প্রতাপে চলছেন। ইতিমধ্যে তিনি চলে গেছেন অবসরে।

অধিদপ্তর হওয়ার আগে যখন পরিদপ্তর ছিল তখন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি । তখনো কিছু সমস্যা ছিল। তার কারণ ছিল মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা। তারা কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন, যা নার্সদের পেশার পরিপন্থি। উচ্চতর ডিগ্রিধারী নার্স ও সিনিয়র স্টাফ নার্সদের এক কাতারে মিলিয়ে ফেলতেন তারা। অথচ বিশ্বের অনেকে দেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী নার্সরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে নার্সিং সেক্টরকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রিধারী প্রায় ১ হাজার নার্স বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এন্ট্রি পয়েন্টে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং নার্সিং পরিদপ্তরকে অধিদপ্তর করেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নার্সিং পেশাকে নিয়ে যেতেই তিনি এই সংস্কার করেছিলেন। কিন্তু এটা চিকিত্সা বিজ্ঞানের একটি সাব-স্পেশালাইজড বিভাগ হলেও নন মেডিক্যাল পার্সন দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা শুধু নিয়োগ বদলি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। অথচ সারা পৃথিবীতে সাব-স্পেশালাইজড বিভাগগুলো এই বিভাগের অভিজ্ঞদের দিয়েই পরিচালিত হয়। চিকিত্সা বিজ্ঞানের সকল সংগঠনগুলো একই ধরনের অভিযোগ করে আসছিল।

তবে সত্ মানুষও দায়িত্ব পালন করেছেন নার্সিং অধিদপ্তরে। মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিয়ে এমন একজন অতিরিক্ত সচিব এসেছিলেন মাত্র কয়েক মাসের জন্য। মন্ত্রণালয় থেকে তাকে আবার দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা পাওয়ায় তিনি ঐ পদে আর ফিরতে রাজি হননি। সততার কারণে তার পদোন্নতিও হয়নি। তিনি কোন দল করেন না, নিরপেক্ষ ও সত্ মানুষ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা অবসরে গেছেন। তাকে বিদায় জানানোর জন্য নার্সদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে বড় গিফট তাকে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে একজন নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপাল হয়েছেন। নার্সিং কাউন্সিল আছে ঠিকই, কিন্তু কাজের কাজ করেন না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারাও প্রশিক্ষণের নামে বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। নার্সিং অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ আসছে। সত্যিকারের প্রশিক্ষণ তো হয়ই না। দুদকের সাবেক এক চেয়ারম্যান প্রায়ই বলতেন, সচিবালয়ে দুর্নীতি বন্ধ না হলে তার অধীনস্থ দপ্তর-পরিদপ্তর দুর্নীতিমুক্ত হবে না।

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার আশীর্বাদে নার্স বদলি বাণিজ্য করে মো. জামাল উদ্দিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এক সময় তিনি ছিলেন নিম্নবিত্ত। এখন তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া সদরের ইন্দিরা মোড়ে স্ত্রী শাকিরুন নেসার নামে কিনেছেন জমি। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কমলাপুরের নিজ গ্রাম দুধকুমড়ায় প্রায় মোটা অঙ্কের টাকায় তৈরি করেছেন আলিশান বাড়ি। এর পাশেই ‘বিশ্বাসবাড়ী’ নামে আরেকটি বাড়ি নির্মাণও করছেন জামাল বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

এ ব্যাপারে মো. জামাল উদ্দিন বলেন। তিনি বলেন, আমি কোন সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত না। আমি প্রতিহিংসার শিকার। দুদকের অনুসন্ধানে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের যে তথ্য আসছে—এ প্রসঙ্গে জামাল বলেন, আমি ব্যবসা করি এবং ব্যাংকের সঙ্গে লেদদেন করতে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »