1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
যাত্রাবাড়িতে তিতাস গ্যাস এখন স্থানীয় সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ২:১৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

যাত্রাবাড়িতে তিতাস গ্যাস এখন স্থানীয় সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি

যাত্রাবাড়িতে তিতাস গ্যাস এখন স্থানীয় সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি

মোঃ রাজু :

বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে রান্নাবান্না ও কলকারখানার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ শহরে এই গ্যাসের চাহিদা মেটাতে গ্যাস বিপণন এর কাজ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৭০% গ্যাস বিপণনকারী এই প্রতিষ্ঠানটির বৈধ গ্রাহক সংখ্যা ২৮লক্ষ৭৮হাজার৭৫৭ টি হলেও অবৈধ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি রয়েছে।দেশের সর্বোচ্চ মজুদকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড হলেও উৎপাদনের দিক থেকে রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে চতুর্থ স্থানে। গ্যাসের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম যাওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০মে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন গ্রাহক বৃদ্ধির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এই প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের দিকে বাংলাদেশ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় নতুন করে বৈধ গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ানোর একটি সিদ্ধান্ত নিলে স্থানীয় ঠিকাদাররা সহ কিছু অসাধু মহল গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের গ্যাস সংযোগ গুলো অনেকটা গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন করে, এবং গ্যাস সংযোগ দেওয়া শুরু হলে গ্যাসের বৈধতা এনে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। এভাবে তৈরি হয়ে যায় কয়েক লক্ষ অবৈধ সংযোগ। পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে নতুন সংযোগ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত বাতিল হলেও তৈরীকৃত সংযোগ গুলো আর বাজেয়াপ্ত হয়নি।এই দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ী। যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার মাতুয়াইল, মৃধা বাড়ি, কাজলা, নয়ানগর, কুতুবখালী, ভাঙ্গা প্রেস, সামাদনগর,হালটপাড়,বিবির বাগিচা এলাকা গুলোতে বেশি তৈরী হয়েছে অবৈধ সংযোগ।একদিকে যেমন কলকারখানা গুলোর গ্যাস প্রয়োজন অন্যদিকে নতুন করে তৈরি হওয়া আবাসিক ভবন গুলোতে গৃহস্থালীতে গ্যাসের চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পাওয়াতে প্রায় এই এলাকা গুলোর অধিকাংশ বাড়িতে চুলা বৃদ্ধি সহ সম্পূর্ণ বাড়ি অবৈধভাবে সংযোগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সংবাদকর্মীদের স্বচিত্র প্রতিবেদন ও তথ্য থেকে অনুমান করা হয়ে থাকে যে যাত্রাবাড়ি এলাকায় প্রায় ১০হাজারের অধিক অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে।স্থানীয় কিছু নেতা, কিছু সমিতি/সংস্থা সহ কতিপয় অসাধু ঠিকাদারদের কারনে যাত্রাবাড়ি এলাকার গ্যাসের এই বেহাল অবস্থা। যাত্রাবাড়ী ঢাকা মেট্রো বিপণন বিভাগ-০১ এর অধীনে রয়েছে।বিভিন্ন সময় ঢাকা মেট্রো বিপণন বিভাগ -০১ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করনের নাটকীয়তা চালালেও হয় না কোন জরিমানা। ফলে অবৈধ সংযোগ পূর্বের চেয়ে আরো শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যায়।হয়রানি হতে হয় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের।তার কারন তিতাসের কর্মকর্তারা রেগুলেটর খোলাতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।আজকে কর্মকর্তাদের দ্বারা বিচ্ছিন্নকৃত লাইনগুলো সন্ধ্যা হতেই নতুন রাইজার কিনে পূনরায় স্থাপন করে গ্রাহকরা। অবৈধ এই গ্যাস সংযোগ দিয়ে ভাড়াটিয়াদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও বাড়ির মালিকদের বিল দিতে হয় প্রকৃত বিলের সমান বা তার বেশি। সরকারি রাজস্ব খাতে এই বিল না গেলেও চলে যায় স্থানীয় বিভিন্ন মহল ও তিতাসের ঠিকাদারদের কাছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নিজস্ব কোন ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় অভিযান পরিচালনার জন্য ডিসি মহোদয়ের মাধ্যমে আবেদন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিতে হয়। ফলশ্রুতিতে প্রয়োজনের তুলনায় কম অবৈধ গ্যাস বিচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে। বাকি সময়গুলোতে ডিজিএম এর নির্দেশে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এসে অবৈধ সংযোগ গুলো বিচ্ছিন্ন করে গেলেও জরিমানা করতে অক্ষম হয়।তিতাস গ্যাস কোম্পানির বিধান অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া অভিযান পরিচালনা করলে জরিমানার কোন বিধান নেই, তারই সুযোগ গ্রহণ করে অসাধু একটি চক্র।এছাড়াও বিভিন্ন সময় ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা হলেও অজানা কোন এক কারণে জরিমানা হয় না যাত্রাবাড়ী এলাকার কাজলাতে। নতুন তৈরি হওয়া ভবনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে এই কাজলাতেই বেশি। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করনের জন্য কাজলা এলাকায় ২০২৩ এর ১৯ জুন তিতাসের মেটাবিবি-০১ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্বে একটি অভিযান সম্পন্ন করেন।ঐ দিনের অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট থাকা শর্তেও হয়নি কোন জরিমানা।তাই ঐ অভিযানে বিচ্ছিন্ন করা মোট ১৮টি ভবনের লাইন,১০টি বাড়ির চুলাবৃদ্ধি,২টি ওয়াশিং ফ্যাক্টরী সহ ১০০মিটার টানা চোরাই লাইন সহ আরো প্রায় হাজারটি অবৈধ বাড়ি এখনও গ্যাস ব্যবহার করছে বহাল তবিয়তে।কাজলায় অবস্থিত কাজলারপাড় সমাজ কল্যান সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো:হারুনর রশীদ,সাধারন সম্পাদক মো:উজ্জ্বল সহ নামে বেনামে আরো কয়েকজন স্থানীয় পাতি নেতাদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সমিতি অত্র এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ পরিচালনা ও এর বন্টক ভোগ দখল করে।তিতাস গ্যাস এর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার দ্বায়িত্ব ঠিকাদার জাহাঙ্গীর, লাইন ম্যান স্বপনের উপর।এছাড়াও বাটোয়ারা বুঝে নিতে ভূল করে না স্থানীয় নেতা প্রকৃতির লোকজন।অবৈধ এই সংযোগের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছে বৈধ সকল গ্রাহকরা। প্রয়োজনের তুলনায় গ্যাসের সাপ্লাই কম থাকায় বাড়িওয়ালারা পড়েছেন চরম বিপাকে। একদিকে গুনতে হচ্ছে গ্যাস বিল, অন্যদিকে কমাতে হয়েছে ভাড়া। পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস না থাকার কারণে অনেক সময় ভাড়াটিয়াদের কাছে হেনস্থা হতে হয় ভাড়া চাইতে গিয়ে। কাজলা এলাকায় প্রায় সকলের জানা গ্যাস নিয়ে এই চোর পুলিশ খেলার বিষয়ে।একদিক থেকে লাইন কাটা অপর দিকে লাইন জোড়া লাগানো যেন রুটিনে পরিনত হয়েছে।বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০এর ৪০নং এর ৬ অধ্যায়ের দণ্ডাদেশ অনুযায়ী আবাসিক/বানিজ্যিক যেকোন ধরনের গ্যাস সংযোগ অবৈধ শনাক্ত হলে সেই গ্রাহকের ১২মাসের সমেরিমান(চূলা অনুযায়ী) জরিমানা হওয়ার বিধান রয়েছে।এছাড়াও কোন ঠিকাদার অবৈধ সংযোগের সাথে জড়িত থাকলে তার লাইসেন্স বাতিল সহ অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান থাকলেও এই আইনের দেখা মেলে না যাত্রাবাড়ি এলাকায়।সকলের মুখে মুখে সংযোগ দেওয়ার কাজে জাহাঙ্গীর এর ও স্বপনের নাম জড়িত থাকলেও হয়না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।এছাড়াও একই সংযোগ বারবার বিচ্ছিন্নকরনের ক্ষেত্রে জরিমানা দ্বিগুন হওয়ার বিধান থাকলেও মাঝে মাঝে জরিমানা বিহীন অভিযান নামক নাটকীয়তা চলে।ফলে অবৈধ সংযোগ পূর্বের জায়গায় থেকে যায়।বৈধ গ্রাহকদের ভেতরে চলতে থাকে বুকফাটা হাহাকার।এভাবেই প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ টাকা চলে যায় অসাধু চক্রের হাতে।ফলে তৈরী হচ্ছে অবৈধ টাকার প্রভাবে নানারকম অরাজকতা।
তাই তাই সচেতন মহল দাবি করে বৈধ গ্রাহকদের গ্যাসের ভোগান্তি কমাতে ও অবৈধ গ্রাহকদের স্বমূলে বিনষ্ট করতে কতৃপক্ষের আরো কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি। এছাড়াও অসাধু ঠিকাদারদের লাইসেন্স বাতিল করে আইনত বিচারের আওতায় আনা অত্যাবশক বলে মনে করেন অত্র যাত্রাবাড়ী এলাকার বৈধ গ্রাহকগণ। অবৈধ গ্যাস সংযোগদাতা সকল অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে আরো কঠিন ও জোরালো ভূমিকা পালন করার দরকার বলে মনে করে স্থানীয় বাসিন্দারা,ও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে জরিমানা করার জন্য জোর দাবি জানায় স্থানীয় লোকজন। (চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »