1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
  3. editorsobujbangladesh@gmail.com : sumona akter : sumona akter
রাজধানীতে টিআইদের বেপরোয়া চাদাঁবাজি - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৬:৫২ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

রাজধানীতে টিআইদের বেপরোয়া চাদাঁবাজি

রাজধানীতে টিআইদের বেপরোয়া চাদাঁবাজি

জাহিদ হাসান॥
রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল, গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডসহ রাজধানীর সর্বত্রই পরিবহন সেক্টর ঘিরে চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। টার্মিনাল-সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, সায়েদাবাদ থেকে দেশের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহের ৪৭টি রুটে চলাচলরত দুই সহ¯্রাধিক যানবাহন থেকে দৈনিক ফ্রিস্টাইলে পুলিশ চাঁদা আদায় করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুরসহ ৩২টি রুটে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ কোচ চলে। এছাড়া রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল, মহাখালী, উত্তরা, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়াসহ শহর ও শহরতলির অন্যান্য রুটে সহ¯্রাধিক বাস-মিনিবাসের চলাচল রয়েছে। যানবাহনের চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপাররা জানান, কোনো রুটের যানবাহনই চাঁদামুক্ত নয়। বরং চলাচলকারী সব গাড়িকে প্রতি ট্রিপেই নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা পরিশোধের পর টার্মিনাল ছাড়তে দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দূরপাল্লার কোচ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি দিতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে এর মধ্যে যাত্রবাড়ীর টিআই মেনন, শনির আখড়ায মিদুল, জুরাইন এ বিপ্লব ও মুছা কালিমুল্লা। লোকাল সার্ভিসের প্রতিটি গাড়ি থেকে ট্রিপে আদায় করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বিভিন্ন রুটে চলাচলরত গাড়ির মালিক-শ্রমিকরা জানান, কমিটি দখল ও মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজির অত্যাচারে মালিকরা পথে বসতে চলেছেন। শ্রমিকদের আয়ও কমে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মালিক বলেন, লাকসাম, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন রুটে এখন গাড়িপ্রতি ১২৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা মিলেমিশে এসব চাঁদার টাকা ভাগাভাগি করে। চাঁদাবাজির শিকার পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চাঁদা প্রদানের বিস্তাারিত তালিকা তুলে ওই বাস মালিক জানান, পরিবহন-সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের নামে ৫০ টাকা, মালিক সমিতি ৮০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন ৪০ টাকা, টার্মিনাল কমিটিকে ২০ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে পুলিশকে দিতে হয় ৫০০ টাকা করে।
ট্রাক থেকেই কোটি টাকা : বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন গড়ে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে পুলিশ। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিকরা জানান, সাংবাদিকদের এ বিষয়ে জানালে আরো অধিক হয়রানির শিকার হতে হয়। এর প্রতিবাদ করলে চাঁদার হার পুলিশ আরো বাড়িয়ে দেয়। দেশে প্রতিদিন ৯০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। এর কোনোটিই পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চলতে পারে না। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সড়ক বা মহাসড়কে এই ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি ট্রাফিক পুলিশও আদায় করছে।
রাজধানীর শতাধিক পয়েন্টে চলছে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি। একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন মহলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সম্মিলিত চাঁদাবাজ চক্র। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। ফলে বন্ধ হচ্ছে না ফিটনেসবিহীন যান চলাচল। ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে ট্রাফিক সার্জেন্টরা টাকা তুলে মাসোহারা হিসেবে। তাই এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বর্তমানে সবচেয়ে অধিক হারে চাঁদাবাজি করছে।
সায়েদাবাদ-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী একাধিক মিনিবাস চালক বলেন, নানামুখী চান্দা-ধান্ধার কবলে চালক, মালিক, শ্রমিক সবার জীবনই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যাত্রীরা হচ্ছেন নানা দুর্ভোগের শিকার। মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ সব বাস-ট্রাক টার্মিনালের অবস্থাই অভিন্ন। এসব স্থানে গাড়ি ঢুকতেও টাকা লাগে, বেরোতেও লাগে টাকা। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে পুলিশের চাঁদাবাজি। রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের যত্রতত্র পুলিশের বিশেষ চেকিং আর মাসোহারা আদায়ের প্রতিযোগিতা বন্ধের সাধ্য যেন কারো নেই। রাজধানীর এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যেতে ট্রাকপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা গুনতে হয়।
ট্রাফিক পুলিশের টোকেন বাণিজ্যও থেমে নেই। তবে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং নামী-দামি ব্র্যান্ডের জন্য পুলিশের মাসিক টোকেন সংগ্রহ না করায় প্রতিদিনই তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজপত্র দেখার নাম করে এসব গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক করে রাখে, তারপর টাকার বিনিময়ে রফাদফা হলেই পুলিশ তা ছেড়ে দেয়।
এছাড়া সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুলিস্তান টার্মিনাল ছাড়ার আগেই গাজীপুর চৌরাস্তা রুটের আজমেরী ও ঢাকা পরিবহনের দুইটি বাসের জন্য চাঁদা দিতে হয় সাড়ে ৫শ’ টাকা করে। ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী লাইনম্যানরা এ চাঁদা আদায় করছে। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদার ও সিরিয়ালের জন্য দিতে হয় আরো একশ’ টাকা। সব মিলিয়ে সাড়ে ৬শ’ টাকা পরিশোধের পর এ রুটে একটি বাস রাস্তায় নামে। এছাড়া টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত যেতে ৬টি স্থানে আরো তিনশ’ টাকা খরচ হয়। এই অর্থ ভাগাভাগি হয় সরকারি দল সমর্থিত বিভিন্ন মালিক-শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় পলিটিক্যাল ক্যাডার, পুলিশ ও সন্ত্রাসীসহ ৬ ধাপে। আর এ কারণে চাঁদা প্রদানকারী বাসচালকেরা দিনভর রাস্তার যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে পারে। পুলিশ কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। ঢাকা-গাজীপুর ও মতিঝিল-মিরপুরসহ রাজধানীর মোট ২৮টি রুটেও প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়া গুলিস্তান ও মতিঝিলসহ রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী- এ পাঁচ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বাস। প্রতিটি বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এ হিসাবে মাসে ১২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা আদায় করছে পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এটি মিথ্যাচার। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে মালিক সমিতির কাছ থেকে কেউ টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ এর প্রমাণ দিতে পারেন তবে তিনি ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »
error: Content is protected !!