1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
লুটপাট আর টাকা পাচারে কারা এগিয়ে? - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৯:৪৬ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
বরগুনার পাথরঘাটায় বেড়েছে বিএনপির নেতা কর্মীদের হুমকি ও চাঁদাবাজি গোপালগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, কথিত ডাক্তার রানা আটক মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে এগিয়ে আসুন – ডাঃ রাজ্জাক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতির আখড়া ঝিনাইদহের আদম ব্যবসায়ী সজলের খপ্পরে নিঃশ্ব শত শত পরিবার ভূয়া মেজর অভিযানের নামে টাকা লুট, গ্রেফতার ৪ দেবিদ্বারে মসজিদে মসজিদে বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বেগম খালেদা জিয়া ও বন্যার্তদের জন্য দোয়া মাহফিল চুয়াডাঙ্গায় লুটপাটের রাজপুত্র টগর,পাহাড় সমান অপকর্ম করেও  ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে!! সাতক্ষীরা বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ বিতরণ
লুটপাট আর টাকা পাচারে কারা এগিয়ে?

লুটপাট আর টাকা পাচারে কারা এগিয়ে?

সাঈদুর রহমান রিমন:

দেশে লুটপাট আর বিদেশে টাকা পাচারের অপকর্মে কারা বেশি এগিয়ে? দুর্নীতিবাজ আমলা, সর্বগ্রাসী নেতা? নাকি ব্যাংক লুটেরা শিল্পপতি-ব্যবসায়িরা? সাম্প্রতিক সময়ে লুটপাট, অর্থবিত্তের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা নিয়ে নানা কাহিনী প্রকাশ হতেই এ প্রশ্ন উঠেছে জনমনে।

আসলে নেতা, আমলা, ব্যবসায়িরা মিলেমিশে এদেশের সরকারি তহবিল, ব্যাংক, বীমা, বাণিজ্য সেক্টরগুলো ফোকলা বানিয়ে বিদেশে পাচার করছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। তাদের অনেকেই স্বপ্নের দেশ ইউরোপ আমেরিকায় পেট্রোল পাম্প, বৃহৎ আকারের শপিংমল, এমনকি রিয়েল এস্টেট বাণিজ্যও খুলে বসেছেন। দুবাই ও নিউইয়র্ক শহরে কয়েকশ’ বাঙালি রীতিমত ডাকসাইটের ডেভেলপার বনেছেন, তারাই নির্মাণ করছেন বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দন ভবন।

প্রজাতন্ত্রের একশ্রেণীর আমলা অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সহায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। অন্যদিকে রাজনীতিকে পুঁজি করে সরকার দলীয় নেতা-পাতি নেতার যতদূর চোখ যায় ততদূর পর্যন্তই দখলবাজি, চাঁদাবাজি, তদবিরবাজি, লুটপাটের মচ্ছব চালাচ্ছেন। শিল্পপতি-ব্যবসায়ি শ্রেণী ফোকলা করছে ব্যাংক-বীমা সেক্টর। এভাবেই রাষ্ট্রের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই চলছে বেশুমার লুটপাট। যে যেভাবে পারছে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থবিত্ত।

অতিসম্প্রতি এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রথম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি
দেশে জনপ্রতিনিধির চেয়ারে বসা চার শতাধিক ব্যক্তিও ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। এমনকি থানা পর্যায়ে গঠিত চতুর্থ শ্রেণীর পৌর মেয়রদেরও বেশিরভাগই মালয়েশিয়া নয়তো দুবাইয়ে সেকেন্ড হোম গড়েছেন।

একইভাবে সরকারের দপ্তর, অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও বড় অংশ লুটপাটের মিছিলে শামিল হয়েছে। তারা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারের সকল তহবিল থেকে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে, তেমনি যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে জনসাধারণের পকেট কেটে ঘুষ বাবদও হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতো রাতারাতি অবৈধ টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন তারা, বিত্ত বৈভবের অভাব নেই। দেশে চাহিদামাফিক সব সম্পদ গড়ে তোলার পর তাদের নজর বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, সহায়-সম্পদ গড়ে তোলার দিকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী আফজাল ও তার স্ত্রী শুধু ঘুষ উপহারের টাকায় অষ্ট্রেলিয়ায় সেকেন্ড হোম ও দুবাই’র সারজাহতে থার্ড হোম গড়েছেন। এই দম্পত্তি অবকাশ যাপনের জন্য সর্বশেষ নেপালে গড়ে তোলেন ফোর্থ হোম। এমন ফোর্থ হোম মালিক বনেছেন আরো বহু বাংলাদেশি আমলা, নেতা, ব্যবসায়িরা।

সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা জিএফআইয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়, অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার বেড়েই চলছে। গত ১০ বছরেই পাচার হয়েছে ১১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

তবে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়ে বরাবরই দলীয় নেতাদের নাম পরিচয় প্রচার হয়ে থাকে। সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো পরিচয় সহসা ফুটে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মিদের বক্তব্য হচ্ছে, টাকা পাচারের বিবরণ ও পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা শুধু লুটেরা নেতাদের নাম পরিচয় তালিকাভুক্ত করে তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠিয়ে থাকেন। এ কারণে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনে লুটেরা কর্মকর্তাদের তালিকা থাকে না বললেই চলে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, রাজনীতিবিদেরা নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকুরেরা। পাশাপাশি শিল্পপতি, ব্যাংক মালিকানায় যুক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং বেশ কিছু ব্যবসায়ির নামও আছে এ তালিকায়।

দেশের টাকা পাচার হয় যেভাবে
——–

টাকা পাচার ও কালো টাকার বিষয়াদি নিয়ে অর্থ-বাণিজ্য বিটের অভিজ্ঞ সাংবাদিকরা হয়তো বিশদ বর্ণনা দিতে পারবেন, তবে সীমিত জানা বুঝা একজন সংবাদকর্মি হিসেবে নিজের মতো করেই তুলে ধরার চেষ্টা এটা। টাকা পাচারের মাধ্যমেই দেশকে আর্থিকভাবে অচল করে দেওয়া হচ্ছে, পঙ্গু বানানো হচ্ছে। এই যে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় তারা কি ব্যাগ ভরে টাকা নিয়ে যায়? না, পাচারকারীরা বিভিন্ন কায়দায় ব্যাংক এর মাধ্যমেই সিংহভাগ টাকা বিদেশে পাঠায়। এই কাজটি সরকারকে ফাঁকি দিয়ে করা যায় না। সরকারকে জানিয়েই করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এটা না ঠেকিয়ে, উল্টো সহায়তা করে।

বাংলাদেশ থেকে প্রধান দুটি উপায়ে অর্থ পাচার হয়ে যায়। একটা হল আমাদানি অন্যটা রপ্তানি। পণ্য আমদানির সময় কাগজপত্রে বেশি দাম উল্লেখ করে টাকা পাচার হয়, আবার পণ্য রপ্তানি করার সময়ও কাগজপত্রে কম দাম দেখিয়ে পাচার হয় টাকা। বিদেশে কাড়ি কাড়ি টাকা পাচারের প্রথাসিদ্ধ হুন্ডির পথ তো আছেই।

‘হুন্ডি কারবারিরা’ আগে বাসাবাড়িতে গিয়ে গিয়ে নগদ টাকা পৌঁছে দিত। এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা গ্রাহকের এমএফএস হিসাবের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে ডিজিটাল হুন্ডি বলা যেতে পারে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সম্প্রতি বলেছে, বিকাশ-নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট অবৈধ উপায়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে অর্থ পাঠানোয় জড়িত। তাদের মাধ্যমে চার মাসেই প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বিতরণ হয়েছে। এভাবে দেশ বছরে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারা এসব এমএফএস এজেন্টদের টাকা দিচ্ছে। তাদের থামাতে পারলেই বন্ধ হবে হুন্ডি। তারাই মূলত অর্থ পাচারকারী।

অর্থ পাচার ঠেকাতে সব ধরনের লেনদেনের ওপর নিবিড় তদারকি জোরদার করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এ ব্যাপারে মূল দায়িত্ব হচ্ছে অর্থ পাচার রোধে কাজ করা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর। এখন দেখা দরকার ওই ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে কর্মরতরা অর্থবিত্তে কেমন ফেঁপে উঠেছেন। তা থেকে সর্বনাশের পরিমাণ বুঝে নেওয়া আরো সহজ হবে।

আর ফিরে না কালোটাকা
——–
সুযোগ দিলে কালোটাকা মূলধারায় ফিরে আসে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা গবেষণা নেই। এখন পর্যন্ত কালোটাকা বিনিয়োগ জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে কালোটাকার গন্তব্য মূলত অন্য দেশ। সুইস ব্যাংকে জমা হয় কিছু অংশ, কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো ‘ট্যাক্স হেভেন’ নামের পরিচিত দেশে কোম্পানি গঠন বা সম্পত্তি কেনা হয়।

যেমন আলোচিত সিকদার গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, আবুধাবি ও সিঙ্গাপুরে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কালোটাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরে পাঁচ তারকা হোটেল বা বাণিজ্যিক জায়গা কেনার উদাহরণও আছে। মূল কথা হলো কালোটাকা দেশে থাকে কম, পাচার হয় বেশি।

স্বাধীনতার পর থেকে এ কালোটাকা সাদা করার জন্য অসংখ্য বার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জরিমানাসহ বড়জোর ২৫/২৬ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। তাহলে বিপুল পরিমাণ কালোটাকা কোথায় যায়? কালো টাকায় এখন দুবাই, মালয়েশিয়া এমনকি আমেরিকাতে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তোলা যাচ্ছে। বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডাতেও। তবে কালো টাকার বড় একটি অংশ জমা হয় সুইস ব্যাংকে। দেশে বক্তৃতা বিবৃতিতেও বিষয়টি বারবার তুলে ধরা হয়। কিন্তু এটা বন্ধ করা যাচ্ছে না কোনভাবেই।

ভারত এরইমধ্যে সুইস ব্যাংকে কালো টাকা জমা করার দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিভাবে? সুইস ব্যাংকের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিনিময় কাঠামো নামের একটি চুক্তি ভারত করেছে ২০১৬ সালে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সাল থেকে যাবতীয় তথ্যও পাচ্ছে দেশটি। ফলে ওই দেশের নাগরিকদের কেউ সুইস ব্যাংকে গোপনে অর্থ জমা করলেই তাদের তথ্য সরকারের কাছে চলে যাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েন তারা। ফলে ব্যাংকটিতে কালোটাকা জমার পরিমাণ আশাতীত ভাবে কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশ অজ্ঞাত কারণে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিনিময় কাঠামোর চুক্তিটি করেনি, করছে না।

দেশদ্রোহী লুটেরাদের শ্বেতপত্র হোক
——–
রাতারাতি শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া লুটেরা দুর্নীতিবাজরাই গিলে খাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ। তারাই পাচার করছে দেশের কোটি কোটি টাকা।
ইউরোপ-আমেরিকা-দুবাই-কানাডায় গড়ে তুলেছে সেকেন্ড হোম, থার্ড হোম, ফোর্থ হোম। অতিদ্রুত এ লুটেরাদের ‘দেশদ্রোহী‘ ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবেই প্রকাশ করা হোক ‘শ্বেতপত্র’।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক
==========

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »