১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সন্ধ্যা ৬:২৩ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
নিজস্ব প্রতিবেদক॥
দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া অন্যান্য পদেও নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের চিত্র পেয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি। এই অর্থ আদায়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি, এসএমসি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র তুলে ধরে টিআইবি। নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানসহ সংস্থাটির কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বদলিতেও নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেন চলছে।
টিআইবির ভাষ্য অনুযায়ী, অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে সাড়ে তিন থেকে ১৫ লাখ টাকা, এনটিআরসিএর সুপারিশকৃতদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা, সহকারী গ্রন্থাগারিক নিয়োগে দুই থেকে তিন লাখ টাকা, শিক্ষক এমপিওভুক্ত পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা, পাঠদান অনুমোদন এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, স্বীকৃতি নবায়ন পাঁচ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং শিক্ষক বদলিতে এক থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ লেনদেন হচ্ছে।
টিআইবি বলছে, মাধ্যমিক শিক্ষার প্রসার বা মানোন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের প্রত্যাশিত উৎকর্ষ অর্জনে এখনো ঘাটতি আছে। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি হলেও এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও নীতিগতভাবে প্রাধান্য না পাওয়ায় শিক্ষা আইনটি এখন পর্যন্ত পাস হয়নি।
গবেষণার ভিত্তিতে ২০টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। সেগুলো হলো-
১. শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. মাঠ পর্যায়ে সরাসরি রাজস্বখাতের আওতাভুক্ত সমন্বিত জনবল কাঠামো তৈরি করতে হবে।
৩. বয়স অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থীর জন্য কোভিড-১৯ টিকা প্রযোজ্য তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে। অনলাইনে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের শেখার ঘাটতি পূরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আর্থিক বরাদ্দ সংক্রান্ত
৪. ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৫. এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধা সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে বৃদ্ধি করতে হবে। দ্রুত অবসর ভাতা প্রদানে বাজেটে বরাদ্দ রাখা এবং নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের অধিকতর দক্ষ করে তুলতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতে বৈষম্য দূরীকরণে প্রয়োজনীয় অর্থ ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকৃত ল্যাপটপ, প্রজেক্টরসহ অন্যান্য উপকরণ রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
মানবসম্পদ
৭. উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খসড়া নিয়োগবিধি দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে।
৮. বেসরকারি সকল নিয়োগ এনটিআরসিএ/বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
৯. শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধিতে পদক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রশিক্ষণ
১০. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণকালীন প্রশিক্ষণের ওপর কার্যকর মূল্যায়নে নিবিড় পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. প্রশিক্ষণের ওপর পরিপূর্ণ দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনে প্রদেয় প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়াতে হবে।
অবকাঠামো ও লজিস্টিকস
১২. সব ধরনের কেনাকাটা ই-জিপির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
১৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহকৃত আইসিটি উপকরণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার থাকতে হবে।
১৪. সরকারিভাবে/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পর্যায়ক্রমে স্থায়ী মাল্টিমিডিয়ার আওতায় আনতে হবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
১৫. দরপত্র, কার্যাদেশ, প্রকল্পের ক্রয় ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত সকল হালনাগাদ তথ্য সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
১৬. মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান উইংয়ের প্রকাশিত বার্ষিক পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং দুর্বলতার কারণসমূহ সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
১৭. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বার্ষিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা থাকতে হবে।
অনিয়ম-দুর্নীতি
১৮. শিক্ষক ও কর্মচারী এমপিওর অনলাইন সফটওয়্যারটি আরও সহজবোধ্য এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে।
১৯. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করতে হবে।
২০. বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে।
Leave a Reply