1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
  2. dailysobujbangladesh@gmail.com : samiya masud : samiya masud
  3. editorsobujbangladesh@gmail.com : sumona akter : sumona akter
সরেজমিন সেই কুখ্যাত স্বর্ণকমল, বরফকল ও ইলিশ ঘাট - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । রাত ১:০০ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জোরালো থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই চলে ব্যাবসা দাবী ব্যাবসায়ীদের শ্যামপুরে নিষিদ্ধ পলিথিন সহ আটক এক প্রতারক হারিজের কারখানায় ভেজাল সার উৎপাদনে বহাল,খুঁটির জোর কোথায়? মোহনপুরে পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের পরিকল্পনা সভা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম আবারো  ঢাকায়! লন্ডনে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে, ইষ্ট লন্ডন শাখার প্রতিবাদ সভা কেরানীগঞ্জ খোলামোড়া লঞ্চঘাট টার্মিনাল টোল মুক্তির দাবিতে মানব বন্ধন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন আজ ডিপিডিসির ৬ কর্মকর্তা দুর্নীতি করেও বহাল তবিয়তে
সরেজমিন সেই কুখ্যাত স্বর্ণকমল, বরফকল ও ইলিশ ঘাট

সরেজমিন সেই কুখ্যাত স্বর্ণকমল, বরফকল ও ইলিশ ঘাট

সবুজ বাংলাদেশ ডেস্কঃ

কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার এরশাদ শিকদারের কথা মনে আছে? আপনি নতুন প্রজন্মের হলে শুনেছেন তার কথা? খুলনার সেই ভয়াবহ ইলিশ ঘাট কিংবা সাত নম্বর ঘাটের কথা শুনেছেন? চলুন, আজ নতুন কিছু দেখি সরেজমিনে। সঙ্গে তাকে নিয়ে যত কিংবদন্তি আছে, তারও সত্য-মিথ্যা খুঁজে দেখি।

আমি তো মরেই যাব, চলে যাব, রেখে যাবো সবি/ আছসনি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গে নি কেউ যাবি/ আমি মরে যাব…’ এটি এই সিরিয়াল কিলারের প্রিয় গান। নিজে গাইতেন খুলনার রহস্যঘেরা তার স্বর্ণকমলের জলসায়। রাজধানীর তিনতলা বাড়িতেও প্রতি মাসে জলসা বসত, সেখানেও গাইতেন গানটি।

মানুষ হত্যার পর পবিত্র হওয়ার জন্য দুধগোসল করতেন এরশাদ শিকদার। তার নামে একটি গরু কোরবানি দিলে তিনি বেঁচে যেতেন ফাঁসির মঞ্চ থেকে, এমন বিশ্বাস জন্মেছিল মৃত্যুর আগে।

একদা শহরের সবচেয়ে সুন্দর এবং ভীতিকর রাজপ্রাসাদ স্বর্ণকমল তার ছোট বউ শোভার জন্য নির্মাণ করেন বাইরের কারিগর এনে। বিয়ের পর এখানেই তোলেন তাকে। এখনো রহস্য হিসেবে থেকে গেলেও এখন শ্রীহীন স্বর্ণকমল। পরিবারের সদস্যদের মালিকানা ভাগাভাগিতে এর একটি অংশ ভাঙা হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠবে হাইরাইজ ভবন।

এরশাদ শিকদারের বরফকল নামটি বিভীষিকার প্রতীক স্থানীয় মানুষের কাছে। তাকে নিয়ে যত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা পাওয়া গেছে, তাতে আমরা এভাবে বলতে পারি- সন্ধ্যা নেমে এলে ভৈরব নদের তীরে শত শত স্থাপনা আর জলযানে জ্বলে ওঠে হাজারো বাতি। আলোঝলমলে এই পরিবেশের আড়ালে তার বরফকলের চারপাশ তখন নিস্তব্ধ। ভেতরে পৈশাচিক আনন্দে উন্মত্ত এরশাদ শিকদার। শান্ত নদীর জল ছুয়ে সিমেন্টের বস্তায় বাঁধা মানুষের নিষ্প্রাণ দেহ ডুবে যায় ভৈরবে, সেই বরফ কল থেকে।

এই নদীতে কত মানুষকে ডুবিয়েছেন পিশাচ এরশাদ শিকদার, তার ইয়ত্তা নেই। সেসব খুনের বর্ণনা ভয়ংকর। খুনের পর দুধগোসল দিয়ে বসতেন গানের জলসায়। নিজে গাইতেন তার সেই গান- ‘আমি তো মরেই যাব, চলে যাবো, রেখে যাবো সবি’। খুনের মামলায় আদালতে ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর কারাগারের কনডেম সেলের ভেতরেও গুনগুন করে ওই গানের কলি ভাজতেন ভয়ংকর এরশাদ শিকদার।

বিশ্বাস হয়, এই মানুষটি ফাঁসির মঞ্চ বানান তার বরফকলে? সেখানে যার ডাক পড়ত, তার আর ফেরা হতো না কখনো। তার সঙ্গে দ্বিমত করায় এমনকি এই ফাঁসির মঞ্চ থেকে বাদ যাননি তার আপন ভাগ্নেও। বলছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সাতটি হত্যা মামলায় এই এরশাদ শিকদারের ফাঁসির রায় হয় আদালতে। নিজের মৃত্যু হয় ফাঁসিমঞ্চে, একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করেন ফাঁস দিয়ে। এরশাদ শিকদার আর তার স্বর্ণকমল নিয়ে খুলনা অঞ্চল ও সারা দেশে নানা ধরনের মিথ ও কিংবদন্তি প্রচলিত।এ নিয়ে আমরা সরেজমিনে কথা বলি নানাজনের সঙ্গে। কী বলছেন তারা?

তার স্বর্ণকমলে গুপ্তপথ আছে। দেখে এসেছেন তারা। গুপ্তপথে এখান থেকে ওখানে যাওয়া যায়। কেউ বলেন, ছোটবেলায় শুনেছেন স্বর্ণকমলে অনেক সোনাদানা জমা করেন এরশাদ শিকদার। তবে গ্রেপ্তারের পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব কিছু পায়নি।

একজন বলেন, এরশাদ শিকদারের নৃশংসতা আর স্বর্ণকমলের রহস্য শুনতে শুনতে তারা বড় হয়েছেন। এখনো মানুষ সে কথা শুনলে ভয় পায়। যাকেই অপছন্দ করেছে, তাকেই মেরে নদীতে ফেলেছে বস্তায় বেঁধে।

আর হত্যার পর গাড়িসহ নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া লাশ উদ্ধারের খবর তো একসময় পত্রিকা জুড়ে সয়লাব ছিল। সেটি ছিল যুবলীগ কর্মী খালিদের। তাকে মেরে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলার সময় তার গাড়িটিও ফেলা হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বললেন আরেকজন।

তবে এরশাদ শিকদার গরিব মানুষদের কিছু করতেন না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আর সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে বাধা পেলে কাউকে ছাড়তেন না। তাকে ভয় পেত না এমন কেউ ছিল না শহরে। বলেন এক যুবক।

যত কিংবদন্তিই থাকুক, একজন যুবক বলেন, তিনি স্বর্ণকমলের ভেতরে ঢুকেছেন। কিন্তু ব্যবহারের কিছু আসবাব ছাড়া আর কিছু দেখেননি সেখানে। বাড়িতে এরশাদের কেউ থাকে না। ভাড়াটে আছেন কেউ কেউ, তবে না থাকার মতো।

মামলার রাজসাক্ষী এরশাদের সহযোগী নূরে আলমের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, অন্তত ৬০ জনকে খুন করেন এরশাদ শিকদার। সেই বরফকলে মৃত্যু হতো বেশির ভাগ হতভাগ্যের। মানুষের কাছে এখনো নৃশংসতার প্রতীক এরশাদ শিকদার।

নূরে আলমই বলেছিলেন, এরশাদের কাছে ৭০টির বেশি অস্ত্র ছিল। তবে তার স্বর্ণকমল থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল তখন। স্থানীয়দের ধারণা পুলিশের কাছে ধরা পড়ার আগেই অস্ত্র সরিয়ে ফেলেন এরশাদ।

তার গানের কথাগুলোই যেন ধরা দেয় নিজের জীবনে। ঐশ্বর্যের প্রদর্শনী স্বর্ণকমলে থাকে না কেউ। দুই ছেলের বাস শহরের দুই প্রান্তে। ছোট বউ শোভার অবস্থান ঢাকায়। আদালতে তার ফাঁসির রায়ের পর পরিবারের কাছে আফসোস করেছিলেন, শত কোটি টাকার সম্পদ রেখে গেছেন, কিন্তু তার নামে একটা গরু কোরবানি দিতে পারেনি পরিবার। এরশাদ শিকদারের বিশ্বাস ছিল তার নামে গরু কোরবানি হলে বেঁচে যেতেন তিনি।

১৯৯৯ সালের নভেম্বরে যখন গ্রেফতার হন এরশাদ শিকদার, তার বিরুদ্ধে তখন ৪৩টি মামলা বিচারাধীন। বিচারিক আদালতে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির রায় হয়। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হয় ভয়ংকর খুনি এরশাদ শিকদারের মৃত্যুদণ্ড।

জন্মস্থান ঝালকাঠির নলছিটি থেকে খুলনায় এসে এরশাদ শিকদার কিছু দিন রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখানে রেললাইনের পাত চুরির দলে যোগ দেন তিনি। পরে নিজেই একটি দল গঠন করেন, যাকে সবাই চিনত ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে। এরপর গঠন করেন ‘রামদা বাহিনী’। এই বাহিনী নিয়ে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এরশাদ। মালিককে তাড়িয়ে দিয়ে দখল করেন সেই বরফকলও।

জাতীয় পার্টি দিয়ে রাজনীতি শুরু এই ভয়ংকর খুনির। বিএনপি হয়ে আওয়ামী লীগেও তার নাম ওঠে। ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার। তার হাতের মুঠোয় তখন জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও বোঝাপড়া ছিল তার। যাকে পথের কাঁটা মনে করেছেন, তাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন দেশের শতাব্দীর কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদার ।

সবা:স:জু- ৫৬৫/২৪

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »
error: Content is protected !!