১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ২:১৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
আল-আমীন মল্লিক শ্যামল:
নারায়ণগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃতুবরণকারী ওই নারীর নাম ফারজানা আক্তার (৪০)।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোর ৬ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। মৃত ফারজানা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হোসেন আলম মেম্বারের মেয়ে।
মৃত ফারজানার স্বামী রুহুল আমীন দৈনিক সবুজ বাংলাদেশকে জানান, শনিবার রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটার সময় ফারজানার হঠাৎ বুকে ব্যাথা উঠলে দ্রুত তাকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডের প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর প্রথমে কর্তব্যরত ডাক্তার কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট মো: আসিফ মাহমুদ তাকে প্রথমে ইসিজি করান। এসময় ফারজানার অবস্থা স্বাভাবিক ছিলো বলে দাবী করেন তার স্বামী রুহুল আমীন। চিকিৎসার একপর্যায়ে ডাক্তার আসিফ তাকে বিভিন্ন ধরণের আটটি ইনজেকশন পুষ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই ফারজানার অবস্থার অবনতি হতে থাকে বলে জানান তার স্বামী। একপর্যায়ে ডাক্তার আসিফ ফারজানার অবস্থা ভালো না জানিয়ে দ্রুত তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। তখন আমরা ফারজানার কাছে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী মারা গেছে।
এদিকে এই মৃত্যুকে হত্যা দাবি করে ওই গৃহবধুর ভাসুরের ছেলে অনু খাঁন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কি কি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল? কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি। এরা এর পূর্বেও এমন অনেকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে ডা: আসিফ মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফারাজানার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। গতরাত আনুমানিক তিনটার দিকে তার হ্যার্ট অ্যাটাক হয় এবং তার হার্ট ফেইলিউর হয়। কিন্তু তার পরিবার আমাদের কাছে তাকে নিয়ে আসে ভোর পৌনে ছয়টায়। আমাদের কাছে যখন তাকে নিয়ে আসে তখন তার অবস্থা বেশি ভালো ছিলো না। এছাড়াও তিনি গত দুই তিন দিন যাবৎ ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছিলেন। তার ফুসফুসে অতিরিক্ত পানি জমা ছিলো। এছাড়া তার থাইরয়েডের সমস্যা ছিলো। যেহেতু হার্ট ফেইলিউর ছিলো তাই তার ফুসফুস থেকে পানি সরতে পারছিলো না। আমরা পানি বের করার জন্য ল্যাসিক ইনজেকশন দেই। এর পরেও রোগীর অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছিলো না। চিকিৎসার কোন ত্রুটি ছিলো না বলে দাবী করেন ডা. আসিফ মাহমুদ। ফারজানার অবস্থা আগে থেকেই আশংকাজনক ছিলো বলেও জানান এই চিকিৎসক। যার কারণে আর তাকে বাচাঁনো সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে ফারজানার মৃত্যুর খবর তার আত্মীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সকলেই গিয়ে জড়ো হয় হাসপাতালে। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বেশ বাকবিতন্ডা হয় তাদের সাথে। একসময় উত্তেজিত হয়ে পড়ে সকলে। পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এবিষয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যুর খবরে আমরা সাইনবোর্ডে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছি। ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়ে যদি তার পরিবারের লোকজন লিখিত কোন অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা আইনগত ব্যাবস্থা নিবো। তবে মৃত ফারজানার পরিবার থেকে এখনো আমাদের কাছে কোন লিখিত অভিযোগ দেয়া হয় নাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: এ এফ এম মুশিউর রহমান দৈনিক সবুজ বাংলাদেশকে বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলে থানায় অভিযোগ দিতে হবে এবং আমাদের বরাবর একটি লিখিত চিঠি পাঠালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিবো।
Leave a Reply