৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১১:১২ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
ফিচার ডেক্স॥
ভারতীয় সিনেমার ঝান্ডা একসময় বলিউডের হাতে ছিল। তবে সেই বলিউড দুনিয়া এখন রীতিমতো কোণঠাসা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কাছে। একের পর এক বড় বাজেট আর তুমুল দর্শকপ্রিয় সিনেমা দিয়ে সেই ঝান্ডা নিজেদের কাছে নিয়ে এসেছে দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। তামিল, কন্নড়, তেলেগু, মালায়লামসহ দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয়তা নিজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বৈশ্বিকতায় রূপ নিয়েছে। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির সিনেমায় বেশিরভাগ সময়ই নায়ককেন্দ্রিকই থাকে। নায়কদের প্রাধান্যের বিষয়টি নিয়ে সমালোচকরা সোচ্চার থাকেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। কিছু নায়িকা আছেন, যারা নায়কদের পাশাপাশি রূপ-লাবণ্য, কমনীয়তা, অভিনয় আর প্রতিভা দিয়ে নিজেরাও আসন করে নিয়েছেন দর্শকহৃদয়ের অন্তস্তলে। সম্প্রতি কয়েকজন অভিনেত্রী দুর্দান্ত অভিনয়শৈলী আর জমকালো পারফরম্যান্স দিয়ে সাড়া ফেলেছেন সব মহলে। দক্ষিণী সিনেমার সেই সুপার প্রতিভাবান সাত সুন্দরীকে নিয়েই এই আয়োজন।
রাশ্মিকা মান্দানা
এই মুহূর্তে ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সর্বাধিক চর্চিত নাম রাশ্মিকা মান্দানা। ‘পুষ্পা :দ্য রাইজ’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন প্যান-ইন্ডিয়া তারকা। ছাব্বিশ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর জয়জয়কার সব জায়গায়। ভারতজুড়ে তিনি এখন ‘কর্ণাটক ক্রাশ’ নামেই পরিচিত। দক্ষিণ ভারতীয় ছবি ‘ডিয়ার কমরেড’ মুক্তি পাওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন রাশ্মিকা। সেই ছবিতে বিজয় দেবরাকোন্ডার বিপরীতে অভিনয় করে জাতীয় ক্রাশে পরিণত হন তিনি। রাশ্মিকা মান্দানা কর্ণাটকের কোড়গু জেলার বিরাজপেটে ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মডেলিং এবং বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার ফ্রেশ ফেস অব ইন্ডিয়া খেতাব অর্জন করেন এবং ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যুক্ত হন। তারপর লামোডে বেঙ্গালুরুর টপ মডেল হান্টে নির্মাতাদের মুগ্ধ করে তিনি ২০১৪ সালের প্রথম দিকে অভিনয়ে নাম লেখান। চমৎকার অভিনয়শৈলী দিয়ে নবাগত সেরা অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে তিনি ২০১৭ সালে ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। সাইকোলজির ছাত্রী ও সাংবাদিকতায় স্নাতক রাশ্মিকার প্রেমজীবন বেশ ঘটনাবহুল। অল্প বয়সেই বাগদান, বিচ্ছেদ, ফের প্রেমে পড়া- এক কথায় উথালপাথাল রঙিন ও রোমাঞ্চকর জীবন। সম্প্রতি রাশ্মিকার সঙ্গে নাম জড়ায় বিজয় দেবরাকোন্ডার। শোনা যায়, তারা নাকি ডেট করছেন এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সবকিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন রাশ্মিকা, ‘আমি জানি না কী বলব। বিয়ের জন্য আমার বয়স অনেক অল্প। আমি বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবছিও না এখন। আর এখন সিনেমা নিয়েই থাকতে চাই।’
সাই পল্লবী
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা যদি দিতেই হয়, তবে তা ‘মালার’কে দিয়ে দাও। কে এই মালার? সাই পল্লবী সেন্থামারাই- ২৭ বছর বয়সী তরুণী। যিনি আজ লাখো তরুণের কাছে মালার নামে পরিচিত। তার সাই পল্লবী থেকে মালার হওয়ার কাহিনি ছিল অনেকটা হঠাৎ করেই। সাই পল্লবী ওরফে মালার সৌন্দর্যের অনন্য এক রূপ। কী অদ্ভুত মায়াময় চোখের চাহনি দিয়ে মনের ভেতরের প্রচ দাবদাহের মাঝে শীতল ঠান্ডা সুবাতাস বইয়ে দেয়। আবার কখনও কখনও ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে দর্শকহৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়, হৃদয়কে পরিণত করে বরফে। আসলে বিশেষণের সবগুলো ব্যবহার করলেও তার অমলিন হাসি আর কৃত্রিম লাবণ্যের কমতি হয়ে যায়। বর্তমানে যে ক’জন নায়িকা ভারতের সব শ্রেণির দর্শকের হৃদয়জুড়ে আসন গেড়েছেন, সাই পল্লবী তাদের অন্যতম। ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া সাই পল্লবী জর্জিয়ার তিবিলিস স্টেট মেডিকেল ইউনির্ভাসিটিতে ডাক্তারি পড়াকালে বিখ্যাত পরিচালক আলফানসো পুথরেন তাকে ‘প্রেমাম’ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। এতে রাজি হয়ে দুলকার সালমানের বিপরীতে ‘মালার’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকহৃদয়ে সাড়া ফেলেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ‘মিডল ক্লাস আব্বায়ি’, ‘মারী ২’, ‘কানা’সহ বেশকিছু হিট সিনেমায় সাবলীল অভিনয় করেন। এরই মধ্যে ফিল্ম ফেয়ারসহ বেশকিছু পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তিনি কৃত্রিমতায় বিশ্বাসী নন। অভিনয় করার সময় অন্য নায়িকাদের মতো বেশি মেকআপ নিতে দেখা যায় না তাকে। চরিত্রের প্রয়োজনে যতটুকু দরকার না হলেই নয়, ঠিক ততটুকু মেকআপ নিয়েই পর্দার সামনে দাঁড়ান। এমনকি তার মুখে কিছু ব্রণ থাকার পরও সেগুলো ঢাকতে অতিরিক্ত কিছুই ব্যবহার করেন না। আর এভাবেই তিনি অভিনয় করতে চান বাকি সময়। তার এই কৃত্রিমতাই তাকে না চাইলেও ভালোবাসতে বাধ্য করে।
পূজা হেগড়ে
বর্তমান সময়ের অন্যতম আবেদনময়ী তারকা পূজা হেগড়ে। মেধার ছাপ ও অভিনয় দক্ষতা ফুটিয়ে তুলে নিজেকে এরই মধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছেন তিনি। দক্ষিণী সিনেমাসহ বলিউডেও রয়েছে তার দৃপ্ত পদচারণা। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণী সিনেমায় যে ক’জন অভিনেত্রী বিশেষ খ্যাতি পেয়েছেন পূজা হেগড়ে তাদের অন্যতম। ইদানীং অভিনয় ক্যারিয়ারে বেশ ভালো সময় পার করছেন পূজা। সর্বশেষ সিনেমা ‘রাধে শ্যাম’-এ প্রভাসের সঙ্গে স্ট্ক্রিন শেয়ার আর অনবদ্য অভিনয় করে রীতিমতো আলোড়ন তোলেন। এরই মধ্যে দক্ষিণী সিনেমার বড় তারকা থালাপতি বিজয়, আল্লু আর্জুন, রাম চরণসহ বলিউডের মহাতারকা অক্ষয় কুমার ও হূত্বিক রোশনের সঙ্গেও জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। পূজা হেগড়ে অভিনীত বেশকিছু সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। দক্ষিণী অঙ্গন ছাড়াও বলিউড দুনিয়ায় তার রয়েছে দৃপ্ত পদচারণা। অখিল আক্কিনেনির সঙ্গে ‘মোস্ট এলিজিবল ব্যাচেলর’, সালমান খানের বিপরীতে ‘কাভি ঈদ কাভি দিওয়ালি’, রণবীর সিংয়ের সঙ্গে ‘সার্কাস’ এবং রাম চরণের সঙ্গে ‘আচার্য’ সিনেমায় রোমান্স করবেন এই অভিনেত্রী। কিছুদিনের মধ্যেই সিনেমাগুলো মুক্তি পাবে। ২০১০ সালে মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়ায় দ্বিতীয় রানারআপ হয়ে প্রযোজকদের নজরে পড়েন। মুম্বাইয়ে জন্ম নিলেও তার মূল পদচারণা তামিল ও তেলেগু সিনেমায়। ২০১৪ সালে নাগা চৈতন্যের বিপরীতে তেলেগু সিনেমা ‘ওকা লাইকা কোসাম’ দিয়ে তার পথচলা শুরু। প্রথম সিনেমা বক্স অফিসে খুব বেশি সফল না হলেও তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়। কিন্তু হূত্বিকের বিপরীতে ‘মহেঞ্জোদারো’-তে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি।
নয়নতারা
বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণী সিনেমার অন্যতম শক্তিশালী মুখ নয়নতারা। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সব মহলেই ব্যাপকভাবে নন্দিত কেরালায় জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী। শুধু দক্ষিণী সিনেমাই নয়, বলিউডে রয়েছে তার দুর্দান্ত পদচারণা। সাম্প্রতিক সময়ে বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানের বিপরীতে একটি নতুন সিনেমায় মূল নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করছেন নয়নতারা। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন তিনি। ভারতীয় সিনেমা দুনিয়ায় একটি কথা বহুল চর্চিত, তার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সী অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করে বেশি স্বস্তি বোধ করেন নয়নতারা। আর সেসব সিনেমা রাতারাতি সুপারহিট তালিকায় জায়গা করে নেয়। আর এর সত্যতা কিছু হলেও মেলে যখন দেখা যায়, জয়রাম, মোহনলাল বা রজনীকান্তের বিপরীতে অভিনয় করে বক্স অফিসে ঝড় তুলছেন তিনি। সাম্প্রতিক শাহরুখের সঙ্গে পর্দায় ভাগ বসানোও এর ব্যতিক্রম নয়। আসলে বলা ভালো, বয়সী তারকারা তাদের পড়তি ফর্মকে জাগিয়ে তুলতে নয়নতারার শরণাপন্ন হন। ২০০৩ সালে কলেজে থাকাকালীন অভিনয়ে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি তামিল আর তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন, যার বেশিরভাগই সমালোচক মহলে সমাদৃত হয়েছে। ২০১১ সালে ‘শ্রী রামা রাজ্যম’ ছবিতে সীতার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন। এ ছাড়াও ‘রাজা-রানী’তে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার (সেরা তামিল অভিনেত্রী) পদক বগলদাবা করে নেন।
Leave a Reply