১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । দুপুর ১২:৪০ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল উপজেলা ভালুকা। সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াহেদ বিজয়ী হওয়ার পর উপজেলা সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য আট জন ব্যাক্তিকে নিয়োগ করেন তিনি। এই আট ব্যাক্তিকে খলিফা ক্ষেতাব দিয়েছেন এমপি এমএ ওয়াহেদ।
এমপির নিযুক্ত খলিফারা হলেন, ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিঃ আবু সাহাদত সায়েম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এজাদুল হক পারুল, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক কেবিএম আসাদুজ্জামান সানা, ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খোকন হোসেন ঢালী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার আহাম্মেদ সুজন।
এই খলিফাদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শান্তির নগরী ভালুকা। উপজেলার বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এমপি ওয়াহেদ মনোনিত ৮ খলিফারা। আরও বেশ কিছু শিল্প কারখানার ব্যাবসা দখলে নিতে ওয়েস্টিজ ও জুট আটকে রেখেছে খলিফারা ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নানা রকম হুমকী ধমকি দিচ্ছেন। শিল্প কারখানা থেকে কোন প্রকার কাভার্ড ভ্যান বের হলে তা তারা চেক করে বের করে। গেটে অস্ত্রসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের পাহারায় বসিয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টিজ ও জুট আটকে থাকার কারণে তাপদাহে বা বৈদ্যিতিক শর্টসার্কিটে যে কোন সময় অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে শিল্প মালিকরা আতঙ্কে দিন পার করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অগ্নিকান্ডের মতো দূর্ঘটনা ঘটলে এ দায়ভার বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ ও তার খলিফাদেরই নিতে হবে।
গত রমজান মাসে একটি ইফতার মাহফিল পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ আট খলিফাদের নিয়ে একটি বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যের পর খলিফারা আরও উৎসাহিত হয়। তার পর থেকে খলিফারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। সেই বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই বক্তব্যের পর শিল্পপতিরা আরও শঙ্কিত হয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শিল্প কারখানার ব্যাবসা দখলঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ শপথ নেওয়ার পর উপজেলার সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যাবসা দখলের উৎসবে মাতে এমপি মনোনিত সেই আট খলিফারা। উপজেলার বিভিন্ন ফ্যাক্টরি গেটে দেশিও অস্ত্রসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী বসিয়ে কারখানার কর্মকর্তাদের নানা রকম হুমকী ধমকি ও মারধর করে। কয়েকটি ঘটনায় ভালুকা মডেল থানায় মামলা, জিডি ও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে শিল্প কারখানার ব্যাবসা। এমনকি যারা পূর্বে ব্যাবসা করতো তাদের বাড়িতে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর গ্রামের টিএম টেক্সটাইলের ব্যাবসা দখলের জন্য হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুনের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা জর্জ মিয়ার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এসময় জর্জ মিয়ার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হবিরবাড়ি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুন ও যুবলীগ নেতা নাঈমসহ চার জনকে আসামী করে ভালুকা মডেল থানায় ব্যাবসায়ী জর্জ মিয়া একটি মামলা রুজু করেন। এ মামলায় নাঈম নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।
তারপর একের পর এক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সন্ত্রাসী তান্ডব চালিয়ে দখল নেওয়া শুরু হয় শিল্প কারখানার ব্যাবসা। কনজুমার নিটেক্স লিঃ এর ব্যাবসা করা সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন ধনু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান মামুনের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলার ধামশুর গ্রামের সিমকো নামের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যাবসা করা যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মাহির ব্যাবসা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া করে দখল নেয় এমপি মনোনিত খলিফা ভালুকা আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকার। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আর্টি কম্পোজিটে ব্যাবসা করা স্থানীয় কাউন্সিলর ও আওামীলীগ নেতা হুমাউন কবিরের ব্যাবসা ও ইনডেক্স ফিড মিলের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ছানা। উপজেলার মাস্টারবাড়ি নারিশ পোল্ট্রি ফিড মিলের ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় এমপি ওয়াহেদ মনোনিত খলিফা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলী, উপজেলার ধামশুরের আওয়ামীলীগ নেতার কাছ থেকে বিষ ফ্যাক্টরির ব্যাবসা ছিনিয়ে নেয় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এজাদুল হক পারুল, উপজেলার মেহেরাবড়ির এপারেলস ডায়িংয়ের ব্যাবসা দখল করে নেয় এমপি মনোনিত খলিফা উপজেলা যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক খোকন হোসেন ঢালী, উপজেলা হাজির বাজারের তাইপে বাংলা ফেব্রিকসের ব্যাবসা দখল করে নেয় এমপি ওয়াহেদ মনোনিত খলিফা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইফতেখার আহাম্মেদ সুজন।
আরও বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওয়েস্টিজ মালামাল বের করতে দিচ্ছেনা এমপি ওয়াহেদের নিযুক্ত খলিফারা। ফলে এসব শিল্প কারখানার জুটে তিব্র তাপদাহ ও বৈদ্যিতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের মতো বড় ধরনের দূর্ঘটনা যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন শিল্প মালিকরা।
হাটবাজার ও সড়কে অবৈধ চাঁদাবাজিঃ
হাটবাজার ও পরিবহনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন এমপির নিযুক্ত খলিফা ভালুকা আঞ্চলীক শ্রমীকলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম সরকারের ছোট ভাই কামরুল সরকার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি জাকির হোসেন শিবলীর ছোট ভাই রাসেল সরকার। বর্তমান সংসদ সদস্যের অন্যতম নির্বাচনি ইসতেহার ছিলো হাটবাজার ও সড়কে চলাচলকারী ছোট বড় সব যানবাহন চাঁদাবাজি মুক্ত করা। এমপির কঠোরতার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনের পর কিছুদিন চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও খলিফা নজরুল ও জাকিরের হস্থক্ষেপে পুনরায় চালু হয়েছে এ চাঁদাবাজি। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এমপি ওয়াহেদের নির্বাচন না করায় হয়রানী ও মারধরঃ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচনে এমপি আব্দুল ওয়াহেদের ট্রাক প্রতিকের নির্বাচন যারা করেন নাই তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানী, হুমকী-ধমকী ও মারধর করা হচ্ছে। উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ট্রাক প্রতিকের নির্বাচন না করে নৌকা প্রতিকের নির্বাচন করায় তাকে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে দিচ্ছেনা বর্তমান এমপির সমর্থকেরা। গত পহেলা এপ্রিল সোমবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে গিয়ে ওই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামকে মারধর করে। এ ঘটনায় ভালুকা মডেল থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিল্পপতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সহায়ক সেক্টর হচ্ছে পোশাক শিল্প। বর্তমান সময়ে দেশে ডলার সংকট, গ্যাস সংকট, বিদ্যুৎ সকটের মধ্য দিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান চালিয়ে নেওয়াই আমাদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে। কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক শ্রমিকদের বেতন দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এমন সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজনের অন্যায় ভাবে নানা রকম হয়রানী আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা শিদ্ধান্ত নিয়েছি এ বিষয়ে আমারা সাংগঠনিক ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবো। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবো। আমরা সরকারকে টেক্স দিয়ে ব্যাবসা করি। আমাদের ব্যাবসায়ীক নিরাপত্তা ও পরিবেশ সরকারকেই দিতে হবে। এমপির লোকজনের কারণে যদি কোন কারখানার আটকে থাকা জুটে কোন রকম দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায় সংসদ সদস্যকেই নিতে হবে।
সংসদ সদস্য মোহাস্মদ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জুট ব্যাবসাগুলো সাধারণত স্থানীয় সংসদ সদস্যের লোকজনই করে থাকে। তাই মার আসনের ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদেরকে আমি দায়িত্ব দিয়েছি। ব্যবাসা থেকে আয়ের টাকা সকল পর্যায়ের নেতা কর্মী ও দুস্থ- অসহায় মানুষের পিছনে ব্যায় করা হবে।
Leave a Reply