১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ১১:০২ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
# চালকের বেতন ও জ্বালানি খরচও সরকারি কোষাগার থেকে
# অভিযোগ অস্বীকার করলেও বাড়িতে গিয়ে মিলেছে সত্যতা
# সরকারের জ্বালানি সাশ্রয়ের নির্দেশনা উপেক্ষিত
স্টাফ রিপোর্টারঃ
সরকারি পরিবহন প্রাপ্তির প্রাধিকার অনুযায়ী, ১ম থেকে ৪র্থ গ্রেডের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি পাবেন। অর্থাৎ দিনে-রাতে যে কোন সময়, যে কোন প্রয়োজনে গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন। গাড়ির চালকের বেতন এবং নির্দিষ্ট পরিমানের জ্বালানি খরচও বহন করবে সরকার। তবে এই কর্মকর্তারা কোনভাবেই একাধিক কিংবা পরিবারের জন্য সরকার থেকে গাড়ি পাবেন না। সেক্ষেত্রে সরকারি অর্থে বেতনভুক্ত চালক ও জ্বালানি খরচের প্রশ্নই আসে না। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক সকল নিয়ম-নীতি ভেঙে দিয়ে প্রাধিকার হিসেবে একটি গাড়ি ব্যবহারের পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের গাড়ি পরিবারের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য নিজ বাড়িতেই রাখছেন। আবার সেই গাড়ির চালকের বেতন ও জ্বালানি খরচও মেটানো হচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে। এমন নজিরবিহীন ঘটনার অনুঘটকের নাম ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ)। বর্তমানে সরকার যেখানে জ্বালানি খরচের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে নিয়ম বহির্ভুতভাবে পরিবারের জন্য সরকারি গাড়ি, তেল ও চালক ব্যবহার করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করছেন তিনি।
যদিও অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে পরিচালক নাজমুল ইসলামের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। লোক মারফৎ এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি প্রাধিকার অনুযায়ী প্রাপ্ত একটি গাড়িই ব্যবহার করেন। দ্বিতীয় কোন গাড়ি নিজে কিংবা পরিবার ব্যবহার করে না। তবে সরেজমিনে নাজমুল ইসলামের বসবাস করা উত্তর বাড্ডার স্বাধীনতা স্মরণী সড়কের ত্রি-মাত্রা রোকেয়া’স ড্রিম নামের ২৭৬ নং বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তার দাবি মিথ্যা। ওই বাড়ির নিচ তলায় অবৈধভাবে ব্যবহার করা গাড়িটি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতায় ম্যালেরিয়া বিষয়ক প্রকল্পের কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য প্রকল্পের টাকায় কেনা আনুমানিক অর্ধকোটি টাকা মূল্যের পাজেরো ভি-৬ মডেলের (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৫৬৯৩) গাড়িটি কয়েক বছর আগে দেওয়া হয়। ২০২১ সালের শুরুর দিক থেকে গাড়িটি ডা. নাজমুল ইসলাম নিজ বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। তার পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওই গাড়ি ব্যবহার করে থাকে। তবে চালক কিংবা জ্বালানি তেলের খরচ ব্যয় করতে হয় না তাদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক আমিনুল ইসলাম ওই গাড়ি নাজমুল ইসলামের পরিবারের প্রয়োজনে চালালেও তার বেতন হয় সরকারি কোষাগার থেকে। গাড়িটির জ্বালানি খরচ বাবদ আগে প্রতি মাসে ৩০০ লিটার অকটেন বরাদ্দ পেতেন। বর্তমানে তেলের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় ১৪০ লিটার পান।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট এক ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তারা গাড়ির অপব্যবহার করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাড়ি যত্রতত্র ব্যবহার না, যে কাজের জন্য তাকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে, সেই কাজের বাইরে যদি তারা গাড়ি ব্যবহার করে, যখনই আমাদের কাছে খবর আসবে তখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেই হিসেবে ডা. নাজমুল ইসলাম মন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছেন। প্রাধিকার অনুযায়ী তিনি সাদা রঙের টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার প্র্যাডো গাড়ি ব্যবহার করছেন। অপরদিকে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সরকারি টাকায় পরিবারের জন্য পরিবহন সুবিধা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইলে কল করলে ডা. নাজমুল ইসলাম রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি তাকে জানালে তার পরিচিত একজন সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জানান, অভিযোগ সত্য নয়। পরবর্তীতে ডা. নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে ভবনের নিচ তলায় গাড়িটি দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (প্রশাসন) এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন অনুবিভাগ) একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ না করায় কারো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
ক্ষুদে বার্তা পাঠালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জবাবে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।
Leave a Reply