২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ । সন্ধ্যা ৭:০৭ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
এস.এ.এম. মুনতাসির, চট্টগ্রাম ব্যাূরো :
দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারী সড়ক বিভাগের সদ্য বদলীর আদেশকৃত নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, তিনি দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন দূর্ণীতির আশ্রয় নিয়ে চট্টগ্রামের পটিয়ায় নিজ গ্রামে প্রায় ৫ কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। সেই বাড়িতে যাতায়াতের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি অর্থ ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করেছেন ব্যাক্তিগত দুটি রাস্তা। ২০০ মিটারের রাস্তাটির নামকরণ করা হয় তার দাদা যোগেন্দ্র সিংহ, দাদি মাধুরী সিংহের নামে এবং ১৫০ মিটারর আরেকটি রাস্তা তার বাবা প্রণব সিংহ, ও তার মা সুহাসিনী সিংহের নামে। যেখানে সরকারি দুটি সাইনবোর্ডও রয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকায় কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত পূর্বের দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাদ দিয়ে নিজের পরিবারের ৮ জনকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিয়ে তার পছন্দমত জায়গায় পদায়ন করেন।
নিয়োগকৃত তার দুই চাচাতো ভাই টিংকু ধর ও নিউটন সিংহের মাধ্যমে অবৈধ প্রক্রিয়ায় কমিশনের বিনিময়ে তাদের পছন্দের ঠিকদারকে কাজ ভাগিয়ে দিতেন। বিধিমালা ৩(ডি) ভেঙে কাজ শুরুর পূর্বেই টেন্ডার ভাগাভাগি করে পছন্দের টিকাদারের নিকট থেকে ৫% হারে অর্থ আদায় করেন সুমন সিংহ।
সূত্র জানায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার পরিবার থেকে যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, তার ভাবী নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয়া সিংহ, কম্পিউটার অপারেটর চাচাতো ভাই সুব্রত সিংহ, ভাগনী চৈতি দেব, চাচা স্বপন চৌধুরী ও মাধু সিকদারকে শ্রমিক পদে, আরেক চাচা পুলক সিকদার, চাচাতো ভাই অভি চৌধুরীকে গার্ড পদে এবং অপর আরেক চাচাতো ভাই প্রভাত মল্লিককে ড্রাইভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এলজিইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী কোনো ব্যাক্তির নামে বর্তমানে সড়কের নামকরণ করা যায় না। তিনি সরকারি পরিপত্রকে বৃদ্ধা আঙুলি দেখিয়ে তার বাবা মা ও দাদা দাদির নামে উক্ত সড়ক দুটি নির্মাণ করেন। নির্মাণকৃত রাস্তা দুটির নামকরণ নিয়ে এলাবাসীর আপত্তিও রয়েছে। তাদের দাবী আগে এই রাস্তা দুটির নাম ছিলো তালতলা টু অলির হাট সড়ক। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রী বরাবরে অভিযোগ করেন বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ বছর আগে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকায় দোহাজারী সড়ক বিভাগের নামে স্থাপনকৃত দোহাজারী সড়ক বিভাগের নামটি উক্ত প্রকৌশলী সুমন সিংহ কুটকৌশলে বাদ দিয়ে ‘দক্ষিণ সড়ক বিভাগ’ নামকরণ করেন এবং চার বছর ধরে তথায় অফিস করতেন। এই নিয়ে এলাকাবাসী পূর্বের নাম বহাল রাখার জন্য সড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ ঢাকা সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছেন এবং বর্তমানে তা চলমান রয়েছেন। উল্লেখিত অভিযোগের কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানের স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে গত ৭ ফেব্রুয়ারী তাকে নিজ কর্ম স্থল থেকে বান্দরবান সড়ক বিভাগে বদলির আদেশ করেন এবং একই আদেশে তৎস্থলে চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, সদ্য বদলিকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহকে দোহাজারী(দক্ষিণ চট্টগ্রাম) সড়ক বিভাগ থেকে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবান জেলায় বদলি করায় এলাকার সচেতন মহল তাকে শাস্তির পরিবর্তে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন।
এদিকে উক্ত প্রকৌশলী বদলির আদেশ স্থগিত করার জন্য উর্ধ্বতন মহলে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।দোহাজারী(দক্ষিণ চট্টগ্রাম) সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য তার মুঠোফোনে ফোন করে
বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন সব কিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে।
অপরদিকে দোহাজারীর সচেতন মহল সদ্য বদলির আদেশকৃত সুমন সিংহের দূর্ণীতির বিষয়গুলো তদন্ত পূর্বক গৃহীত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্ণীতি দমন বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Leave a Reply