১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । সকাল ৭:৫৪ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ টেলিভিশন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যা জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়। একসময় এই প্রতিষ্ঠানের ছিল গৌরবময় ঐতিহ্য। বিশেষকরে ৭০ ও ৮০ এর দশকে বিটিভি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অনেক কালজয়ী গান, নাটক, বিখ্যাত শিল্পী ও কলাকুশলীর জন্ম দিয়েছে। আজকে যারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত তাদের একসময় প্রাণের জায়গা ছিল বাংলাদেশ টেলিভিশন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ৬০ বছর পেরিয়ে বর্তমানে বিটিভিতে নানা অব্যবস্থাপনা, কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, তদবির, অদক্ষতা ও জবাবদিহিতার অভাবে ডুবতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রেক্ষাপটে বিটিভির সাথে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার গানের শিল্পী, বাদ্যযন্ত্রী, সুরকার, গীতিকার, সংগীত পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিকার, চুক্তিভিত্তিক ক্যামেরাম্যান, প্রযোজকদের অনুষ্ঠান সহযোগী, কর্তব্যরতসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ আজ বিটিভিতে তাদের ন্যায্য পাওনা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে এই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে সরকার প্রতিবছর ৩০০ কোটি টাকা খরচ করছে। গত অর্থবছরে শিল্পী সন্মানী বা অনুষ্ঠান নির্মাণের পিছনেই ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই লুটপাট ও অপচয় হয়। এজন্য মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছেনা। ফলে বিটিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারণ দর্শক। বিটিভি ঢাকা কেন্দ্রের বর্তমান সাময়িক চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত অবৈধ (যার মেয়াদ অনেক আগেই শেষ) জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজার নেতৃত্বে একজন শিবির ও ছাত্রদল করা প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও ৮/৯ জন প্রযোজকদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেন্ড তৈরী করে চালানো হচ্ছে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাট। অনেক কাগুজে অনুষ্ঠানের (যা কখনো প্রচার হয়না) নামে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর এসকল সবকিছু জেনেও নিশ্চুপ নির্বিকার বিটিভির মহাপরিচালক ও তথ্য মন্ত্রনালয়। মনে হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের কোন কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবক নেই। এর ফলে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিটিভির সাথে সম্পৃক্ত হাজার হাজার শিল্পী ও কলাকুশলী। আর বিটিভি বঞ্চিত হচ্ছে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান থেকে।
বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিটিভির শিল্পী সন্মানী খুবই নগন্য। উপরোন্ত শিল্পী সন্মানী থেকে ১০% হারে ভ্যাট কেটে নেওয়া হয়। শিল্পীরা সময়মত চেক পায়না। অনেকক্ষেত্রে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। আবার চেক পেলেও ব্যাংক থেকে সামান্য টাকার চেকও বাউন্স হয়। যা শিল্পীদের জন্য মানহানিকর ও বিটিভির ভাবমূর্তিকে ব্যাপকভাবে ক্ষুন্ন করে। বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের হিসাব শাখা দুর্নীতি ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হওয়ার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে। শিল্পীদের গ্রেড ও নীতিমালা অনুযায়ী অনুষ্ঠানে ডাকা হয়না। অসংখ্য শিল্পী বছরের পর বছর ডাকের আশায় থাকেন। আবার অনেকে এক যুগেরও বেশী সময় ধরে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়না। অন্যদিকে টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের শিল্পীদের সুযোগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি গানের অডিশনে পাশ করিয়ে দেওয়ার নামে আগ্রহী শিল্পীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিটিভির একটি চক্র। এনিয়ে একটি অডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়ে তা ভাইরাল হয়েছে আর নিযে দেশের সকল পত্র পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার পরেও তথ্য মন্ত্রনালয় নিশ্চুপ।
এধরনের প্রেক্ষাপটে বিটিভির সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, অনিয়ম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষে “বাংলাদেশ সংস্কৃতি ও শিল্পী অধিকার সংরক্ষন পরিষদ” নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান গ্রহন করেছে। বিটিভি রক্ষায় “৬০ বছরে বিটিভি, ডুবছে বিটিভি, বাঁচাও বিটিভি” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বিটিভিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিটিভির সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী সমাজ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। এ বিষয়ে শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিটিভির সকল অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনে আপনার ও আপনার প্রতিষ্ঠানের সমর্থন, সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ আশা করছছেন তারা।
Leave a Reply