1. md.zihadrana@gmail.com : admin :
প্রকৃত মুসলিম শাসকের প্রতিকৃতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু - দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ

২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । বিকাল ৫:৫৯ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।

সংবাদ শিরোনামঃ
বেনাপোলে পাচারকারীর পায়ূপথে পাওয়া গেল ৭০ লাখ টাকার স্বর্ণেরবার, পাচারকারী আটক বুড়িচংয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ইউএনও’র! এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ এর উদ্যোগে ইফতার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ ও দোয়া মাহফিল রাজধানীর খিলগাঁও সবুজবাগ ও মুগদা থানা জুড়ে মাদকের সয়লাব জবিস্থ হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে শাকির-তানিম দুর্গন্ধযুক্ত গরুর মাংসে কাপড়ের রং মিশিয়ে করা হয় তাজা লন্ডনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে’র মতবিনিময় ও ইফতার সম্পন্ন নবীনগরে পুকুরে ডুবে দুই চাচাতো বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু মোঃ কায়সার হোসেনে কর্তৃক বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে হুমকির অভিযোগ বাংলাদেশ মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
প্রকৃত মুসলিম শাসকের প্রতিকৃতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু

প্রকৃত মুসলিম শাসকের প্রতিকৃতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু

নূর আহমাদ ॥
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডকে নানা প্রতিকূলতা ঠেলে ধ্বংস্তূপ থেকে টেনে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দেখেন চারদিকে দুর্নীতির মহোৎসব। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশে দুর্নীতির চিত্র আরও প্রকট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন ও রাষ্ট্রচিন্তায় ধর্মীয় প্রভাবের কারণেই দুর্নীতিবাজ ও ঘুসখোরদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অনমনীয়।

তার ব্যক্তিত্বে একজন সত্যিকার মুসলিম শাসকের গুণাবলির ছাপ ছিল। বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করেছেন দেশবরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ ও কুরআন গবেষক মাওলানা শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন।

তিনি জামালী তালিমুল কুরআন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ২৪ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা মেথডের আবিষ্কারক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নূর আহমাদ

দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু। এ নিয়ে আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাই।

: একটি দেশ পিছিয়ে যায় দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের কারণে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হলো। এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা কম সময় নয়। আমাদের অনেক পরের দেশ মালয়েশিয়া এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এগোতে পারিনি দুর্নীতির কারণে। দুর্নীতি, ঘুস, কালোবাজারি এগুলো আজকের সমস্যা নয়। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই একটি মহল হারাম উপার্জনের মহোৎসবে নামে। তাই তো আফসোস করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন হলে অন্যরা পায় তেলের খনি, স্বর্ণের খনি, আমি পেলাম চোরের খনি। এই চোরদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আফসোসের সীমা ছিল না। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, আজ মনে হচ্ছে আমাদের কোথায় যেন গণ্ডোগোল রয়ে গেছে। মানুষ এত টাকা দিয়ে করবেটা কী। শুধু টাকা কামাইয়ের ধান্ধা।

আমি প্রায়ই আফসোস করে বলি, এ দেশে অশিক্ষিত চাষাভুষারা দুর্নীতি করেন না, দুর্নীতি কারা করেন? শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরা। আপনারা মন খারাপ করবেন না। এটাই সত্য কথা। কালোবাজারি কারা করে? খাদ্যে ভেজাল কারা মেশায়? ভেজাল ওষুধ তৈরির মেধা কি কৃষকের আছে? আপনাদের মতো একশ্রেণির শিক্ষিত মানুষই এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আমরা যারা লেখাপড়া শিখি, দামি গাড়িতে চড়ি, স্যুট টাই পরি, তারাই বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে বিদেশি এজেন্ট হই। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা মহাবিপদে আছি।

আপনারা যারা বুদ্ধিজীবী, শিক্ষিত, দেশকে নেতৃত্ব দেন, তাদের দায়িত্ব হবে আত্মসমালোচনা করা। আর আওয়ামী লীগের সহকর্মী ভাইয়েরা, তোমরা কালোবাজারিদের পেছনে লাগো, ঘুসখোরদের পেছনে লাগো। তোমরা আমার কথায় আগেও ঝাঁপিয়ে পড়েছ, এখনো ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু আইন দিয়ে, শক্তি দিয়ে দুর্নীতি দমন করা যায় না, এ জন্য জনগণকে জাগতে হবে। দেশ স্বাধীনের পর এখন আমাদের সংগ্রাম দুর্নীতিবাজ-ঘুসখোর ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে। এরা হলো মুনাফেক। আর মুনাফেকরা কখনোই নিজের দেশের ভালো চায় না। এরা দেশের অমঙ্গলে খুশি হয়। এদের ব্যাপারে সাবধান তোমরা থাক।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম তো আসলে হারাম উপার্জনের বিরুদ্ধেই জিহাদ ঘোষাণা করা, তাই নয় কি?

: তা তো অবশ্যই। যে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। নয়তো ফাঁকা বুলিতে পেট ভরবে না। বঙ্গবন্ধু বিষয়টি বুঝেছেন। তাই তিনি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। আওয়ামী লীগের কর্মীদের দুর্নীতিবাজ-ঘুসখোরদের পেছনে লাগতে বলেছেন। শুধু তাই নয়, সুদিনে কেউ যেন আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কালোবাজারি না করে সে ব্যাপারেও তিনি আমাদের সতর্ক করে গেছেন। আফসোস! আজ চারদিকে কালো মানুষদের জয়জয়কার।

একজন নিুবিত্ত শ্রমিক থেকে শুরু করে ওপরের লেভেলের সবাই যার যার অবস্থান থেকে অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। হারাম উপার্জনের সঙ্গে জড়িত। ব্যবসায়ী ব্যবসায় ভেজাল দিয়ে, মজুতদারি করে নামাজে দৌড় দেয়। কর্মকর্তারা কাজে ফাঁকি দিয়ে, অবৈধ সুবিধা দিয়ে টাকা কামিয়ে বছরে বছরে হজে যায়। অর্থাৎ, আমরা কালোটাকাও উপার্জন করছি, ধর্মও ঠিক রাখছি।

কী বোকার রাজ্যে বসবাস আমাদের! হারাম উপার্জনের ইবাদত কবুল হবে না এ সত্যটি যেন আমরা ভুলেই গেছি। মনে রাখতে হবে, আমরা ভুলে গেলে বা এড়িয়ে গেলে আল্লাহ কিন্তু ভুলে যান না। আজ দেশে যে জ্বালানি সমস্যা, লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডাকাতি, প্রাণনাশ, অশান্তির আগুন-সব সমস্যা আসলে আমাদের হারাম উপার্জন তথা দুর্নীতির শাস্তি। এ জন্য কোনো দল, সরকার বা ব্যক্তি বিশেষকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে সরকারই থাকুকন না কেন, হারাম উপার্জন বন্ধ না হলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না।

বঙ্গবন্ধুর জীবনে ধর্মের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাই।

: বঙ্গবন্ধু ছিলেন আগাগোড়া ধর্মীয় মানুষ। তার লেখা, বক্তৃতা এর উজ্জ্বল প্রমাণ। সমস্যা হলো, যারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে তারা বঙ্গবন্ধুকে পড়ে না। তিনি ধর্ম বুঝতেন বলেই অন্যায়-অনাচার-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলেন। ভারতবর্ষে তখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চরমে। মুসলমানরা ইসলামের শত্রু মনে করে ইংরেজদের থেকে দূরে থাকার মতো মারাত্মক ভুল করে বসে। এ সুযোগে ইংরেজ সরকারের পা-চাটা গোলাম সেজে শিক্ষিত হিন্দুরা কারণে অকারণে মুসলমানদের পিঠের চামড়া তুলে নিত। বঙ্গবন্ধু বলেন, বিষয়টি আমার খুবই খারাপ লাগত। তখনো তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েননি।

স্কুলের হিন্দু সহপাঠীদের ছুৎমার্গ আচরণ দেখে বেজায় কষ্ট পেতেন। এক মুসলিম ছাত্রকে মারার প্রতিবাদের হিন্দু সহাপাঠীদের মেরে জেলও খেটেছিলেন স্কুল জীবনেই। তবে ধর্র্মীয় গোঁড়ামি যাকে বলে তা বঙ্গবন্ধুর মাঝে কখনোই ছিল না। তিনি বলেন, ওই সময় হিন্দুরা যেমন মুসলমানদের দেখতে পারত না, মুসলমান নেতারাও বক্তৃতা শুরু করত হিন্দুদের গালিগালাজ করে। এসব আমার মোটেই ভালো লাগত না। এরপর আল্লামা ইকবাল, শহিদ সোহরাওয়ার্দীর প্রভাবে তিনি পাকিস্তান আন্দোলন শুরু করেন। মুজিব নিজেই লিখেন, ‘তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষণভাবে। সভা করি, বক্তৃতা করি।

খেলার দিকে আর নজর নেই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে, নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই।’ শুরু হয়ে গেল মুসলমানদের বাঁচানোর জেহাদ। বঙ্গবন্ধু লিখেন, ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার বাঙালি মুজাহিদরা কীভাবে জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সিপাহী বিদ্রোহ, ওহাবি আন্দোলন, শরিয়ত উল্লাহ ও তিতুমীরের জেহাদের ইতিহাস আমার জানা ছিল। ওইসব ঘটনা বলেই বাংলার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতাম।

বঙ্গবন্ধুর এসব ইতিহাস আজ খুব একটা শোনা যায় না কেন?

: পড়াশোনার অভাব। যারা বঙ্গবন্ধুকে নাস্তিক-মুরতাদ বলে অপপ্রচার চালিয়েছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারা দুই লাইনও পড়েনি। আফসোস! ইতিহাস বুঝি এভাবেই বিগড়ে যায়। আগাগোড়া ইসলাম মানা মানুষটিকে নিয়ে আজ কী সব কাণ্ডকারখানাই না হচ্ছে। চাঁদাবাজের মুখেও বঙ্গবন্ধু, ধর্ষকও ধর্ষণ করে বঙ্গবন্ধুর নাম করে। চোর-বাটপার দেশের সম্পদ লুট করছে নামের পাশে বঙ্গবন্ধু সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে। যেন বঙ্গবন্ধু জীবন-যৌবন পানি করে চোর-বাটপারদের জন্য সোনার বাংলা গড়ে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর আমৃত্যু স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা সোনার মদিনার মতো সুখী-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও মদিনার সনদে দেশ চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আজ যারা কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলে মুখে ফেনা তুলছে, তাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ইসলাম, শান্তি, সম্প্রীতি। তিনি ছিলেন আগাগোড়া একজন দ্বীনদার, ইমানদার, সাচ্ছা মুমিন মুসলমান। প্রকৃত মুসলিম শাসকের সব গুণাবলির সন্নিবেশ ঘটেছিল বঙ্গবন্ধুর মাঝে। আল্লাহ তাকে জান্নাতের মহান সম্মানিত আসনে সমাসীন করুন।
সূত্রঃ যুগান্তর

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved © 2021
ভাষা পরিবর্তন করুন »