তারিখ লোড হচ্ছে...

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চট্টগ্রাম

রাইসুল ইসলাম

এমন সময়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলাপ করছি, যখন আজারবাইজানের বাকুতে চলছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন- কপ২৯। বাংলাদেশ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অনেকেই সেখানে অংশগ্রহণ করেছেন। আমরা জানি, বাংলাদেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভূমিকা না রাখলেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি শিকার। উন্নত বিশ্ব এবং শিল্পোন্নত দেশগুলোর গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বই হুমকিতে। বাংলাদেশ তার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়েই জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে নজর দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের মধ্যে চট্টগ্রাম বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম। সমুদ্র-তীরবর্তী শহর ও বন্দরনগরী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন এই শহরের জন্য চরম বিপদ ডেকে আনছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতায় চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকা বিপর্যস্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর পাঁচটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অন্যতম, যেখানে উপকূলীয় অঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিবছর কোনো না কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, নদীভাঙন, পাহাড়ি ঢল/ধস ছাড়াও বড় বড় দুর্যোগ আঘাত করেছে।
প্রতিবছর চট্টগ্রামে হাজার হাজার মানুষ সাগরের ভাঙন, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুহারা হচ্ছে। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম-ইউএনডিপির তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হতে পারে। এসব উদ্বাস্তুর মধ্যে অধিকাংশই শহরের বিভিন্ন বস্তিতে অস্থায়ী আশ্রয় নেয়। ফলে শহরের অবকাঠামো ও পরিষেবাগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পায়।

চট্টগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘নেকটেন চট্টগ্রাম প্রকল্প’ অন্যতম, যা নগরাঞ্চলের দুর্যোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে। ‘কক্সবাজার পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্প’ এবং ‘বেশি দুর্যোগ কমানো কর্মসূচি’ নামে প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের পুনর্বাসন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে এসব প্রকল্পের সাফল্য পরিমাপ করতে আরও দীর্ঘমেয়াদি মনিটরিং ও পরিকল্পনা প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের সাগর এবং উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক হুমকির মুখে। বিশ্ব পরিবেশ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সাগরের জীববৈচিত্র্য ৩৫-৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যদি বর্তমান প্রবণতা বজায় থাকে। ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপকূলীয় বনাঞ্চল ৩০ শতাংশ কমে গেছে এবং উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যেও বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বনাঞ্চল বর্তমানে ব্যাপক সংকটের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ বন বিভাগ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বনাঞ্চল প্রতিবছর প্রায় ০.৫ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিপর্যস্ত হচ্ছে। বনাঞ্চল কমে যাওয়া থেকে পশুপাখির বসবাস, মাটির ক্ষয় এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
চট্টগ্রামের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নতুন কর্মসূচি এবং পুনর্বাসন কৌশল গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকার একসঙ্গে কাজ করে নতুন উদ্বাস্তু পুনর্বাসন কৌশল প্রণয়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য জাতীয় রেজিস্ট্রেশন প্রকল্প’, যা স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতা করে উদ্বাস্তুদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের জন্য প্রাথমিক সহায়তা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে সহায়তা করছে।
চট্টগ্রামের জন্য এই সংকট মোকাবিলায় একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে চট্টগ্রামে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করে নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য এবং স্থিতিশীল একটি শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
চট্টগ্রামের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় নিবেদিতভাবে কাজ করলে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও টেকসই শহর নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমার দুর্ভাগ্য,আমি সাংবাদিক!

 

রোস্তম মল্লিকঃ

কিছু অপ্রিয় সত্য কথা আছে । সেই কথাগুলো লিখতে বড্ড কষ্ট হয়। সে কথায় কেউ কষ্ট পায়। কেউ আবার তুষ্টও হয়। তবে কথাগুলো অবশ্যই জাতির জন্য ধর্তব্য। তিন দশক চলছে আমার সাংবাদিক জীবন। এই সময়ে বেশ কয়েকটি সরকার বদল হয়েছে। বদলেছে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা। এনালগ যুগ ধেকে আমরা এখন ডিজিটাল যুগে। কালেরধারায় বদলে গেছে সাংবাদিকতাও। এখন অনেকেই ঘরে বসে সাংবাদিকতা করছেন। যেতে হচ্ছে না খবরের উতসের দ¦ারে। ছুটতে হচ্ছে না পথ থেকে পথে। নিতে হচ্ছে না অবাঞ্চিত ঝুঁকি। জাপানের ইয়াসিকা ক্যামেরা আর সনি ব্রান্ডের টেপরেকর্ডারেরও প্রয়োজন হচ্ছে না। এমনটিই হয়। যুগের পরিবর্তনে সব কিছু বদলে যায়। পুরাতনের স্থলে আসে নতুন। এক সময় সেটিতেই অভ্যস্ত হয়ে যায় মানুষ।
বাংলাদেশ তথা এশিয়া অঞ্চলের সাংবাদিকতা ঝুকিমুক্ত নয়। উন্নয়নশীল দেশ উন্নতশীল দেশের ভাষায় কথা বলে না। এখানে অকেগুলো বিষয় মাথায় রেখে সাংবাদিকতা করতে হয়। দেশের ক্ষতিসাধিত হয় এমন বিষয়গুলো ওভার লুকিং করা অত্যন্ত জরুরী। অগ্রজ সাংবাদিকরা এ বিষয়টি সব সময় অগ্রাধিকার দিতেন। তারা প্রকৃত অর্থেই জাতির বিবেকের দায়িত্ব পালন করেগেছেন। ইতিহাস চিরদিন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

এবার মুল বিষয়ে আসি। আমি কেন সাংবাদিকতায় এলাম? ৮০‘র দশকে সাংবাদিকতার একটা মোহে পড়েছিলাম আমি। তখন আমি একজন প্রতিবাদী যুবক। দেখতাম সাংবাদিকরা যেখানেই যান একটা আলাদা সম্মান পান। এমন কি প্রশাসনের হর্তাকর্তারাও তাদেরকে সমীহ করে চলেন। কোন সুপারিশ করলে না করেন না। সরকারী সব ধরণের প্রোগ্রামেই তারা ডাক পান। সামনের কাতারে তাদের আসনও রিজার্ভ থাকে। এই যে সম্মানের জায়গাটা সেটি আমাকে মোহগ্রস্থ করেছিলো। অবশ্য রাজনীতি করলেও এমন সম্মান অর্জন করা য়ায় তবে সেটা হয় দল কেন্দ্রীক। দল ক্ষমতাচ্যুত হলে আর সেই সম্মান পাওয়া যায় না। আর সাংবাদিক হলে তার কোন মুল্যায়ণ বত্যয় ঘটে না। যুগের পর যুগ এই সম্মান একই ধারায় পাওয়া যায়।
আরেকটি বিষয় আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিলো। সেটি হলো: কলমের শাসনে সমস্ত প্রকার অন্যায়,অপরাধ,অনিয়ম,দুর্নীতি নির্মূল করা। এলাকার উন্নয়নে শরিক হওয়া। নির্যাতীত নীপিড়িত মানুষকে ন্যায় দেওয়া। মানবিক সেবা দান করা। অসহায় মানুষের ছায়াবৃক্ষ হওয়া। তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। মনে মনে আমি আরেকটা স্বপ্নও লালন করতাম। সেটি হলো: আমি হবো সবার সেরা সাংবাদিক। সবার মুখে আমার নাম থাকবে। আমার সম্মানে আমার পরিবারের সদস্যরাও সম্মানিত হবেন।
এই ভাবনা আমাকে প্রচন্ডভাবে গ্রাস করেছিলো। ফলে আমি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি লোভনীয় হয়ে পড়েছিলাম। ছেড়ে দিয়েছিলাম বেসরকারী চাকুরীও। ৮০ র দশকের সেই শারীরীক সক্ষমতা এখন আর নেই। তবে অধ্যায়টা সোনালী স্মৃতি হয়ে আমার মনের এ্যালবামে জ¦লজ¦ল করছে। সেটা নিয়ে আমি গর্ব করি।
৮০‘র দশক থেকে বিংশ শতাব্দীর চলমান সময় আমার জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত,হামলা,মামলা,পুলিশী নির্যাতন,বারবার কারাবরণ,পুলিশ রিমান্ড,এমন কি ১৯৭৪ সালের কালা কানুনে (রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ) এ আমাকে বার বার গ্রেফতার করে ডিটেনশনে রাখা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা, অসত রাজনৈতিক নেতা, চোরাকারবারি ব্যবসায়ী, সুদখোর ,ঘুসখোর এমন কি আমার অগ্রজ কিছু কুলীন সিনিয়র সাংবাদিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও ষড়যন্ত্রে আমি ছিলাম জর্জরিত। মহান আল্লাহুর অশেষ কৃপায় আমি এককভাবে তাদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে আমার চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছে গেছি। আপনারা হয়তো বিশ^াস করবেন না, সাহসী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি রাতের পর রাত বাড়ীতে থাকতে পারিনি। আত্মীয় স্বজনের বাড়ীতে রাত কাটাতে হয়েছে। পরিবার পরিজন দুরে রেখে অন্য শহরে নির্বাসনে থাকতে হয়েছে। এমন কি না খেয়ে রাতও কাটাতে হয়েছে।
যাই হোক , সবই বিধাতার খেলা। তিনি হয়তো আমাকে বড় করবেন তাই শত বিপদ দিয়ে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন। আমিও আমার খ্যাতি অর্জনের জন্য জীবন বাজী রেখে অদম্য থেকেছি।

এবার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আসি। এখন ডিজিটাল দেশে হাজার হাজার অনলাইন নিউজ পোর্টাল, দৈনিক ,সাপ্তাহিক পত্রিকা,ইউটিউব চ্যানেল, স্যাটেলাইট চ্যানেল ও আইপি টিভি রয়েছে। এসব গণমাধ্যমে লক্ষাধিক সংবাদকর্মী কাজ করছেন। জীবন জীবিকার সংস্থানও হয়েছে।
কিন্তু সাংবাদিকতার মানদন্ড নীচে নামতে নামতে এখন এমন এক পর্যায়ে পৌছেছে যে, তা আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন বেশিরভাগ সাংবাদিকই অপ্রশিক্ষিত,সঠিক শিক্ষা সনদবিহিন, অপগেশাদার ও ভিন্নপেশার লোক। বিশেষ করে বেশিরভাগ অনলাইন সাংবাদিকতার মান অরুচীকর,পেশাদারিত্বহীন এবং সাংবাদিক পেশাকে ধ্বংস করার মানষিকতা সম্পন্ন।
মেইন স্ট্রিমের শতাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা মূলধারায় অবিচল থাকলেও সারা দেশে হাজার হাজার অনিয়মিত পত্রিকা ও নিবন্ধনহীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক পেজ ইয়োলো জার্নালিজমকে স্থায়ী রুপ দিতে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এসব অখ্যাত অনিয়মিত পত্রিকা,নিউজ পোর্টাল,ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ বন্ধে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিক এবং সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় জোরালো পদক্ষেপ না নিলে গোটা সাংবাদিক সমাজই জাতির কাছে বিরাট এক প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। এক সময় গোটা জাতি তথ্য সন্ত্রাসে আক্রান্ত হবে বলে আমি মনে করি।

আবারও আমার প্রসঙ্গে আসি। এ নিবন্ধের শিরোনাম: আমার দুর্ভাগ্য, আমি সাংবাদিক। এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন; আমি আমার সাংবাদিক জীবনে সফল হয়েও একথা কেন বলছি। আমার উত্তর: সাংবাদিকতা পেশা একটি অলাভজনক ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। এ পেশায় ভোগ বিলাশী জীবন যাপনের কোন সুয়োগ নেই। পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল থেকে যে বেতন ভাতা পাওয়া যায় তা দিয়ে জীবন ধারণ করা অতি কষ্টকর। সম্মানে অতি উচু হলেও বেতন ভাতায় অতি নীচুতা গ্রাস করে আছে এই পেশাটাকে। মুল ধারার হাতে গোনা কিছু জাতীয় দৈনিক ও টিভি চ্যানেলে পেশাদার সাংবাদিকদের বেতন ভাতা সুনিশ্চিত থাকলেও অন্যান্য হাজার হাজার পত্রিকা এবং কিছু টিভি চ্যানেলে সেই নিশ্চয়তা একদমই নেই। ফলে অনেক পেশাদার সাংবাদিক জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে কোন না কোন বেসরকারি কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম জব করছেন। কেউ কেউ আবার যৌথভাবে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হচ্ছেন।
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, পেটে ক্ষুধা থাকলে মাথায় শুভচিন্তা আসে না। পেশার সম্মান বজায় রাখতে হলে সাংবাদিকদের মানিব্যাগের স্বাস্থ্য ভালো রাখা অত্যন্ত জরুরী। আর সেটার নিশিচয়তা দিতে পারেন কেবল পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের মালিক পক্ষ। সরকার আন্তরিক হলে পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য মাসিক ভর্তুকি ভাতার ব্যবস্থাও করতে পারেন।
আরেকটি বিষয় হলো ঝুঁকি ভাতা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা প্রতি নিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রান নাশের হুমকি পান। পথে প্রান্তরে শারীরীকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাদের নিরাপত্তার জন্য দেশে কোন “সাংবাদিক সুরক্ষা আইন“ বা বীমা ব্যবস্থা নেই। এ কারণে কোন সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নন। তাদের কিছু হয়েগেলে পরিবারের দায়িত্ব নেবার কেউ নেই। ফলে এই পেশাটিকে বেশিরভাগ শিক্ষিত যুব সমাজ এড়িয়ে চলেন। আর এই সুযোগে ক্লাস ফাইভ পাশ, এইট পাশ ,মেট্রিক পাশ অর্ধ শিক্ষিতরা বিনা বেতনে সাংবাদিক বনে যাচ্ছেন। তাদের না আছে অভিজ্ঞতা,না আছে দক্ষতা,না আছে সাংবাদিকতার আইন কানুন সম্পর্কে সাম্যক কোন ধারণা। এমন কি কোনটা নিউজ আর কোন ভিউজ সেটাও তারা জানে না।
এ দিকে কিছু অখ্যাত দৈনিক পত্রিকা আছে যাদের কাজই হলো ৫শত বা ১ হাজার টাকার বিনিময়ে সাংবাদিক তৈরী করা। তারা নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ ও বাজারজাত না করে সারা দেশে ফাইভ পাশ, এইট পাশ ,মেট্রিক পাশ সাংবাদিক প্রডাকশন দিচ্ছেন। এই শ্রেণির পত্রিকার মালিক ও সম্পাদকদের কার্ড বাণিজ্য ও সাংবাদিক প্রডাকশনের কারণেই সারা দেশে সাংবাদিক পেশার মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদের কারণেই অজাত-কুজাত,মুর্খ টাকাওয়ালা ব্যবসায়ী,রাজনৈতিক,সরকারী আমলা ,কালো ব্যবসায়ী,ভোটকাটা জনপ্রতিনিধি সাংবাদিকদের “সাংঘাতিক“ বলে উপহাস করতে সাহস পাচ্ছে। বলছে,দ‘ুটাকার সাংবাদিক। এ কারণেই আমি এই নিবন্ধের শিরোনাম দিয়েছি: আমার দুর্ভাগ্য,আমি সাংবাদিক!
পরিশেষে আমার একটাই অভিমত: সাংবাদিক পেশাকে কলংকমুক্ত করতে এখনি একটা সরকারী নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সেখানে সাংবাদিকতার সর্ব নিন্ম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিগ্রী পাশ নির্দ্ধারণ করে দিতে হবে। কমপক্ষে ১ মাসের পিআইডি প্রশিক্ষন বাধ্যতামূলক করতে হবে। যে নীতিমালায় পেশাদার সাংবাদিকদের যুক্তিসংগত বেতন ভাতার নিশ্চয়তা থাকবে। তাদের আবাসন ও যানবাহনের ব্যবস্থা থাকবে। তাদের জীবন ও পরিবারের ঝুঁকি ভাতার (বীমা) এর নিশ্চয়তা থাকবে। ৩ বছরের অভিজ্ঞতা পেশাদার সনদধারী সাংবাদিক ব্যাতীত রাজনৈতিক তদবীর বা টাকার বিনিময়ে কেউ যেন দৈনিক,সাপ্তাহিক পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ,আইপি টিভি বা টিভি চ্যানেলের সরকারী নিবন্ধন বা লাইসেনস যেন না পান সে উদ্যোগ গ্রহন করা হোক। তথ্য মন্ত্রী মহোদয় এই উদ্যোগটি নিতে পারলে সাংবাদিক পেশার মান বজায় থাকবে এবং দিনদিন উন্নত হবে বলে আমি মনে করি।

রোস্তম মল্লিক
সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট

language Change
সংবাদ শিরোনাম