নতুন গুড়ের ঘ্রাণে গাছিরা ভুলে যান ঘাম ঝরানো কষ্ট

স্টাফ রিপোর্টার: 

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস, গুড় আর তা দিয়ে বানানো পায়েস ও নানা ধরনের পিঠা পুলি। গাছ কেটে একফোটা রস বের করতে যে ঘাম ঝরে তার মূল্য সহজে ওঠে না। কিন্তু রস জ্বালিয়ে গুড় হলেই তার ঘ্রাণে কৃষক ভুলে যায় সেই ঘামের কষ্ট।

নতুন প্রজন্মের কৃষকরা কষ্টের কারণে খেজুর গাছ কাটতে চায়না ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস। তবে এলাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় বয়স্ক গাছিরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রতি বছর শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের পায়েস আর পিঠা পুলির।

তাই এখন ভরা মৌসুমে খেজুরের রস পেতে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের গাছিরা।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চটকাবাড়িয়া গ্রামে খেজুরের রস আহরণ শুরু করেছেন ৬৫ বছর বয়সের কৃষক মন্টু মিয়া। তিনি নিয়মিতভাবে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। জমির আইলে ও পতিত জায়গায়ও রয়েছে অসংখ্য খেজুর গাছ। বিশেষ করে উপজেলার তাহেরহুদা, বোয়ালিয়া, বিরামপুর, শীতলী, ভাতুড়িয়া, কেষ্টপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা মেলে এ দৃশ্য। গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কেটে পরিষ্কার করেন।

এর কিছুদিন বিরতির পর গাছের পরিষ্কার করা অংশ শুকিয়ে নিয়ে আবার কয়েক দফায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয় গাছের ছাল। গাছ কাটার এ কাজে গাছিরা ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করেন। গাছ কাটার সময় খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের কোমরে থাকে বাশেঁর তৈরি ঠোঁঙ্গা, (স্থানীয় ভাষায়) যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার দাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়।

এরপর গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরি একটি নলি ও দুপাশে দু’টি চোখা বা খুঁটি পোতা হয়, যার সাথে রস সংগ্রহের পাত্র ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুরের রস।

তারা আরও জানান, সপ্তাহের নির্ধারিত দিন বিকালে গাছের মাথা হালকা ভাবে ছেঁটে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে দুই থেকে চার কেজি হারে রস পাওয়া যায়, যা থেকে এক থেকে দেড় কেজি গুড় হয়। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।

রস জ্বালিয়ে গুড় বানাতেও কৃষকদের ভোগান্তি কম নয়। কারণ খেজুর গাছের ডাল ও অন্যান্য খড়ি সংগ্রহ করে এ রস থেকে গুড় বানাতে হয়। কাঁচা রস ২কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং এক কেজি গুড় বাজারে বর্তমান ২৫০ থেকে ৩০০টাকায় বিক্রি হয়।

অসৎ ব্যবসায়ীরা অনেক সময় রসের মধ্যে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরি করে। ভালো গাছিরা এগুলো করে না, এই দাম কম হলেও গাছিরা সন্তুষ্টচিত্তে প্রতিদিন তাদের গাছ পরিচর্যা ও রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন।

 

সবা:স:জু- ৪৮৯/২৪

সাবেক মন্ত্রীর পরিত্যক্ত বাড়িতে তরুণীকে দলবেধে ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার:

কুমিল্লার লাকসামে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়িতে এক তরুণীকে (১৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় মামলা হলে রোববার অভিযান চালিয়ে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রেফতাররা হলেন- লাকসাম উপজেলার মনোহরপুর এলাকার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৫), পৌরসভার শ্রীপুর মধ্যপাড়ার মো. মমিনের ছেলে মো. মাসুদ (২৩), বাতাখালী এলাকার আবু তাহেরের ছেলে মনির হোসেন হৃদয় (২৩), উত্তর বিনই এলাকার মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আল আমিন (২৩) ও মধ্য লাকসাম এলাকার মৃত মোস্তাফিজ মজুমদারের স্ত্রী বিলকিছ আক্তার কল্পনা (৪০)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার সোনাপুর এলাকার এক তরুণী ও তার স্বামী গত ১৩ মার্চ লাকসামে তার নানা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন। ১৪ মার্চ ভোরে তারা লাকসাম বাইপাস মোড় থেকে বাড়ি ফেরার জন্য সিএনজিতে ওঠেন।

সিএনজি চালক মো. মাসুদ তাদের স্বামী-স্ত্রী কিনা জানতে চেয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। একপর্যায়ে কৌশলে লাকসামের গন্ডামারা এলাকায় নিয়ে যায়। অভিযুক্তরা তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে এবং পরিকল্পিতভাবে লালমাই উপজেলার মগবাড়ি এলাকায় নিয়ে স্বামীকে ফেলে রেখে তরুণীকে অপহরণ করে।

পুলিশ জানায়, পরে ভিকটিমকে লাকসামের বড়তুফা এলাকায় সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্ত মো. মাসুদ ও মোহাম্মদ আলী তাকে ধর্ষণ করে। এরপর ভিকটিমকে লাকসাম পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের তালুকদার ভিলায় অভিযুক্ত বিলকিছ আক্তার কল্পনার ভাড়া বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে পুনরায় ধর্ষণ করা হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে লাকসাম থানায় মামলা দায়ের করেন।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত শুরু করা হয়। পুলিশ রোববার অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার (১৭ মার্চ) তাদের আদালতে পাঠানো হবে। আমরা এ ঘটনায় কঠোর অবস্থানে রয়েছি।’

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ওই বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালানোর পর থেকে সেটিতে কেউ বসবাস করে না। বর্তমানে বাড়িটি পরিত্যক্ত।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম