তারিখ লোড হচ্ছে...

অনিয়মের আধিপত্য গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :

ব্যক্তিগত কৌশল করে কাটা হচ্ছে সেবাপ্রার্থী জনসাধারণের পকেট। অপরদিকে বাড়ছে হয়রানি ও ভোগান্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসে জমির নামজারি ও জমাভাগ এবং বিভিন্ন মোকদ্দমায় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ আদায় করেন। টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। খারিজের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণ অনুযায়ী ঘুষের রেট ও ভিন্ন ভিন্ন।

সম্প্রতি একটি অভিযোগের সূত্র ধরে এসব তথ্য মিলেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরী তাসমিন ঊর্মির নীরবতায় তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলে অভিযোগ।

উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের রাথুরা এলাকার আতাউল্লাহ সরকারের ছেলে লিমন সরকার তাদের ওয়ারিশ সম্পত্তির হিস্যা অনুযায়ী নামজারি না হওয়ায় পূর্বের সাতটি নামজারি বাতিলের জন্য একটি মোকদ্দমা করেন। মোকদ্দমা নম্বর ১৪৬/২০২৪। পরে এসিল্যান্ড নূরী তাসমিন ঊর্মি নাগরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে গত ২১ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন।

এতে বলা হয়, সৃজিত সকল জোত (খারিজ) বাতিল পূর্বক সমূদয় ভূমি (৯ একর) মূল জোতভোক্ত করার আদেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে মোকদ্দমার সকল পক্ষগণকে তাদের জমির নিজ নিজ মালিকানা হিস্যা ও দখল মোতাবেক নামজারি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

আদেশ পেয়ে চারজন অংশীদার তাদের হিস্যা ও দখল মোতাবেক নামজারির জন্য আবেদন করেন। নথি নম্বরগুলো হলো ৩৯২৬, ৩৯৩২, ৩৯৩৯ ও ৩৯৬৭। এর মধ্যে একটি ৩৯৬৭/২০২৪-২৫ নম্বরের নথি গত ৩০ ডিসেম্বর মঞ্জুর হয়েছে। এখন ও বাকিগুলো মঞ্জুর করা হয়নি।

আবেদনকারীরা বিষয়টি নিয়ে এসিল্যান্ড নূরী তাসমিন ঊর্মির সঙ্গে দেখা করলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, যে নামজারি অনুমোদন হয়েছে, সেটা বাতিল করা হবে। বণ্টননামা দলিল ছাড়া কাউকে নামজারি দেওয়া হবে না।

আবেদনকারীরা জানান, ওই নথির জমি বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য জমির দালালরা লেনদেন করায় নামজারি দ্রুত হয়েছে। চুক্তিতে না যাওয়ায় তাদের আবেদনগুলো আটকে রয়েছে। অফিস সহকারী কাম মিউটেশন সহকারী আল আমিনের কথা ছাড়া কাজ হয় না। ওই নামজারিও অদ্যাবধি বাতিল করা হয়নি।

তারা বলেন, রায়ে বণ্টননামা দলিলের কোন বাধ্যবাধকতা কথা উল্লেখ করা হয়নি। যেহেতু একই তফসিল, সেহেতু বণ্টননামা দলিল লাগলে সবার লাগবে। একজনের ক্ষেত্রে লাগবে না, অন্যদের ক্ষেত্রে লাগবে-এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

আবেদনকারীরা আরও জানান, তাদের মিসকেসের সময় অফিস সহকারী আল আমিন ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। পরে তার হাতে ৩৯ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে হয়রানির যেন শেষ নেই।

এ ব্যাপারে অফিস সহকারী আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ-কে বলেন, লেনদেনের অভিযোগ মনগড়া। মিসকেসটিতে একটি পক্ষকে বাদ দিয়ে রায় নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি কানাডা থেকে রায় স্থগিতের জন্য ই-মেইলে আবেদন করেছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দেখা যায়, ই-মেইলে এসিল্যান্ড বরাবর আবেদন পাঠানো ব্যক্তি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এখলাস উদ্দিন সরকার। বর্ণিত মোকদ্দমার ১১ জন বিবাদীর মধ্যে তিনি ৩ নম্বর। তার ভাই জসিম উদ্দিন সরকার ১ নম্বর ও আরেক ভাই মেজবাহ উদ্দিন সরকার ২ নম্বরে ছিলেন। অর্থাৎ তাকে পক্ষভুক্ত না করে রায় নেওয়া হয়নি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরী তাসমিন ঊর্মি দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ-কে বলেন, মিসকেসের রায় থাকলেও নামজারিতে বণ্টননামা দলিল লাগবে। বণ্টননামা দলিল ছাড়া আবেদন করা যাবে না।

সিরাজগঞ্জে একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

সিরাজগঞ্জে একজনের মৃত্যুদণ্ড, ৪ জনের যাবজ্জীবন

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতাঃ দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর সিরাজগঞ্জ পৌর যুবলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা হত্যা মামলায় এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

নিহত গোলাম মোস্তফা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রানীগ্রাম মহল্লার আব্দুস সামাদের ছেলে তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক (৩৮)। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন একই মহল্লার কাশেম আলীর ছেলে সেলিম রেজা (৪২) ও বাদল সেখ (৩৯), আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০) ও সাইফুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম (৪৩)।

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৩ এর অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হামিদুল ইসলাম গনমাধ্যমকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মামলার ১৮ জন আসামির মধ্যে একজনকে মৃত্যুদণ্ড ও চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১৩ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নিহত গোলাম মোস্তফার সঙ্গে আসামিদের সামাজিক, ব্যবসায়িক ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর গোলাম মোস্তফা ফজরের নামাজ শেষে ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বের হন। প্রাতঃভ্রমণ শেষে তিনি পৌর শহরের পাশে রানীগ্রাম পশ্চিমপাড়া বাজারের একটি চা স্টলে বসেন। এসময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রামদা, ছোরা, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়।

এসময় তারেকুল ইসলাম তারেক রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম ও অন্য আসামিরাও তাকে উপর্যুপরি আঘাত করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শিখা খাতুন বাদী হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেন। এতে আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৮ জুন ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম