তারিখ লোড হচ্ছে...

টিউলিপের মতো পদত্যাগে বাধ্য হতে পারেন পুতুলও: দ্য প্রিন্ট

বিশেষ প্রতিনিধি:

যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত টিউলিপ সিদ্দিক। একই পথে হাঁটতে হতে পারে তার খালাতো বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও। তাকে ছাড়তে হতে পারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের পদ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। পত্রিকাটিতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন কলকাতাভিত্তিক সাংবাদিক মনদ্বীপা ব্যানার্জি। প্রতিবেদনে তিনি বাইবেল থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন।

মনদ্বীপা বলেছেন, ‘বাবার পাপের দায় ছেলের ওপর পড়ে। তবে এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পাপের দায় পড়েছে তার বোনের মেয়ে টিউলিপের ওপর। যার কারণে টিউলিপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এবার এই দায় পড়তে যাচ্ছে তার নিজ মেয়ে পুতুলের ওপর। যিনি ২০২৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হয়েছিলেন।’

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেই যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সে কারণে এবার পুতুলও চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে দ্য প্রিন্টের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন মনদ্বীপা ব্যানার্জি।

ওপার বাংলার এই সাংবাদিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের একটি সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে পুতুলের প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছিল, মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার যোগ্য না। অভিজ্ঞ ও যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে শুধু স্বজনপ্রীতির কারণে তিনি মনোনয়ন পান। এমন স্বজনপ্রীতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করবে।

এছাড়া ২০২৩ সালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসও পুতুলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এতে বলা হয়, আঞ্চলিক পরিচালক পদের জন্য সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে আরেকজন প্রার্থী ছিলেন নেপালের শম্ভু আচার্য। তিনি ছিলেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি ৩০ বছর যাবৎ সেখানে কাজ করছেন। এছাড়া জনস্বাস্থ্যের ওপর তার পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে।

অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করতেন। তার বেশিরভাগ কাজ ছিল অটিজম নিয়ে। তিনি স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং একটি দাতব্য ও গবেষণা সংস্থা দেখাশোনা করেন। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় বড় বাজেট নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার আগে পুতুল তার মা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন সফরে যেতেন।

দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে যে, পুতুল কিভাবে চাকরি পেলেন। তার নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে নাকি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মায়ের হস্তক্ষেপ। তাই সবার দৃষ্টি এখন পুতুলের দিকে। এখন দেখার বিষয় পুতুলও তার বোন টিউলিপের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে বাধ্য হন কিনা।’

২০২৩ সালের ১ নভেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান পুতুল। টিউলিপের পদত্যাগের পর থেকেই সবার নজর এখন তার দিকে।

এর আগে গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগের খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর নিজের এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন টিউলিপ।

শেখ রেহানা-কন্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বড়োসড়ো দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে লন্ডনে ফ্ল্যাট উপহার পাওয়া নিয়েও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন।

এসব অভিযোগের জেরে টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানায় প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল। এরপরই পদত্যাগ করেন টিউলিপ।

কাঁচা খেজুরের রস থেকে সাবধান

স্বাস্থ্য ডেস্ক: 

শীতকালে বিভিন্ন রোগের আবির্ভাব হয় তার মধ্যে নিপাহ ভাইরাস অন্যতম। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর রসের স্বাদ এবং গন্ধে সবার মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। এই সময়ে অনেক মানুষ খেজুর গাছ থেকে রস নামিয়ে সরাসরি কাঁচা রস পান করে। যা থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশে খেজুর রস থেকে তৈরি হওয়া গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড়, বালুয়া গুড়, মিছরি গুড় ইত্যাদি অনেক জনপ্রিয়। সাধারণত বাংলাদেশে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয় কার্তিক থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয় যশোর, কুষ্টিয়া এবং ফরিদপুরে। তবে, খেজুর রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর সম্পর্কে আমরা কতটা সচেতন! বেশ কয়েক বছর ধরে খেজুর রস খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস হল একটি ‘জুনোটিক ভাইরাস’, যা প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায় এবং পরে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নিপাহ ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে জ্বর, মানসিক অস্থিরতা, কিংবা মৃগী হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
২০০১ সালে মেহেরপুরে বাংলাদেশে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। সে বছর শনাক্ত হয় ১৩ জন এবং তাদের অনেকেই মারা যায়। ২০১২ সালে এই রোগে আক্রান্ত হয় ১৮ জন।

সবশেষ গত সাত বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু ২০১৭ সালে তিনজন শনাক্ত হয়।  ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২০ জন শনাক্ত হয়। গত ২৩ বছরে দেশে ৩৩৯ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২৪০ জন মারা যায়। তাই নিপাহ ভাইরাস নিয়ে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সাধারণত গাছের গর্তে পাত্র ঝুলিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। যেখানে রাতের বেলা বাদুড়রা এসে রস পান করে। বাদুড়রা খেজুর রস পান করার সময়  তাদের লালা এবং মল রসের সঙ্গে মিশে যায়। যার কারণে কাঁচা খেজুর রস পান করলে মানুষের মধ্যে নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে পারে।ফলে  ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া এবং বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কোন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেটা জানা প্রয়োজন।

নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হলে উপসর্গহীন থাকতে পারে আবার কারো শুধু সাধারণ জ্বর-কাশি দেখা দিতে পারে। তবে সবচেয়ে জটিল অবস্থা হলো, মস্তিষ্কে সংক্রমণ দেখা দেয়। নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পাঁচ থেকে চৌদ্দ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। তবে অনেকের মতে ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় ভাইরাসটি শরীরের মধ্যে থাকতে পারে। শুরুতে প্রচণ্ড  জ্বর, মাথা ও পেশিতে ব্যথা, কাশি, পেটে ব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সময়মতো ট্রিটমেন্ট না হলে রোগী মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকতে পারে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, খেজুরের রস সংগ্রহ করা নিয়ে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন, যারা রস সংগ্রহ করেন, তারা যেন সতর্ক থাকেন। কারণ হাঁড়ির আশপাশে বাদুড়ের লালা লেগে থাকতে পারে। মাস্ক পরতে হবে এবং রস সংগ্রহের পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহের হাঁড়ি ঢেকে রাখতে হবে। খেজুরের কাঁচা রস পান না করে তা ফুটিয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা এবং রোগীর সেবা করার পর সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, খেজুর রস সংগ্রহের স্থানটি নিরাপদ এবং পরিষ্কার। এ ছাড়া, খেজুর রস সেদ্ধ করে পান করা উচিত।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, রস সংগ্রহের পর তা ৭০-৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেদ্ধ করা উচিত, যাতে ভাইরাসটি মারা যায়।

এখনও পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধের কোনো টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা নেই। তাই এই রোগ নিয়ে সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। সে ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন গ্রহণ করা যেতে। যেমন, আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে এই রোগ। তাই যারা রোগীদের সেবা দিয়েছেন এবং মৃতদের সৎকার করেছেন, তাদের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। রোগীর কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। রোগীর সঙ্গে একই পাত্রে খাওয়া বা একই বিছানায় ঘুমানো যাবে না।

যেহেতু নিপাহ ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পাঁচ থেকে চৌদ্দ  দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়, তাই সে সময়ে যারা খেজুরের রস খেয়েছেন, তাদের সবাইকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে যারা রোগীর সেবা করবে তারা  মুখে মাস্ক এবং হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। আসুন নিপাহ ভাইরাসে আতঙ্ক না হয়ে নিজে সচেতন হই এবং অন্য কেও এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করি।

 

সবা:স:জু- ৪৩০/২৪

 

 

ভাষা পরিবর্তন করুন »
সংবাদ শিরোনাম