
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি :
বিদেশ পাঠানোর নামে টাকা আত্নসাৎ মেলেনি টাকা ও পাসপোর্ট। রায়পুরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী।
নরসিংদীর রায়পুরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক আদম বেপারী চক্র। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেও৷ কোন সুফল পায়নি ভুক্তভোগী। উপরন্ত মিথ্যা মামলায় হাজতবাস করতে হয়েছে শফিকুল ইসলামের পিতাকে। এ চক্রটি একই সময় আমির নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকেও মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে। উল্লেখ্য আমীর প্রতারক চক্রের আত্মীয়ও বটে। ভুক্তভোগী সাহাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে মো. ইসমাইল মাষ্টার ও মৃত- আপ্তাব উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মেরির ছেলে আবুল কাশেমের নিকট টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাইলে মো. ইসমাইল মাষ্টার তার আত্মীয় আনোয়ারা বেগমের দ্বারা মিথ্যা মামলা দায়ের করে হাজত বাসসহ নানা ভাবে হয়রানী করে চলছে।
অভিযোগে জানা যায়, রায়পুরা উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের পলাশতলী পশ্চিম পাড়া এলাকার মৃত- সাহাজ উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে মো. ইসমাইল (৫৫) ও মৃত- আপ্তাব উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মেরির ছেলে আবুল কাশেম (৫৮) মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে একই উপজেলার রায়পুরা পৌরসভার থানা হাটি এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ২০১৭ সালের ১লা মার্চ ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এবং আসামীগণের আত্মীয় আমির নামক ব্যক্তির কাছ থেকেও ৩ লক্ষ টাকা নেয়। পরে ২০১৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি আমিরকে একটি ভিসা এবং পরবর্তীতে শফিকুল ইসলামকে ৫ মার্চ মালয়েশিয়ার আরও একটি ভিসা প্রদান করে এবং ২০১৭ সনের ২ জুলাই তাদের ২ জনকে সংযুক্তিভাবে একটি বিমানের টিকেট দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পাঠায়। কিন্তু বিমানবন্দরে যাওয়ার পর ধরা পরে তাদের দেয়া ভিসা ও টিকেট ভূয়া এ ব্যপারে ১৮ সেপ্টেমবর ২০১৭ইং তারিখে এঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সালিশ বসলে তারা টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার শর্তে সালিশিদের মাধ্যমে ৩ শত টাকা মূল্যের ৩ টি স্ট্যাম্পে সর্বমোট ৬ লাখ টাকা ফেরত দিবে বলে লিখিত অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন। এরপর থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে টাকা পয়সা না দিয়ে, আবার আসামীগণের আত্মীয় আমির নামক ব্যক্তির আম্মা আনোয়ারাকে বাদী করে ভুক্তভোগীর পিতাকে অযথা হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে ১০ দিন জেলে আটক রাখেন এবং ১নং আসামী ইসমাইল সরকারি চাকুরীজীবি বলে সে নিজে বাদী না হয়ে ২নং আসামী আবুল কাশেম ও তারই ছেলে এবং ১নং আসামীর আপন বোন জামাই মিন্টুকে বাদী করে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করে আসছে। সে হুমকি দেয় যে, টাকা চাইলে আরো মামলা দিবে।ভুক্তভোগী পক্ষ গত ২৩ জুলাই ২২ইং তারিখ বিকালে কয়েকজন স্বাক্ষীসহ আসামিদের বাড়িতে টাকা ও পাসপোর্ট চাইতে গেলে তারা টাকা পয়সা ও পাসপোর্ট ফেরত না দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় বলে জানায় শফিকুল ইসলাম।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রায়পুরা থানায় ভুয়া ভিসা ও বিমানের টিকেট সহ প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি দিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানায়। অভিযোগকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে এবং এনজিও থেকে সুদে টাকা নিয়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। এখন সুদের টাকা পরিশোধ করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্ত্রী- বৃদ্ধ মা-বাবা ও ভাই বোন নিয়ে সংসারের খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় ২ মাস আগে সকল প্রমাণাদি কাগজপত্র সংযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান দুইজন উপ-পুলিশ পরিদর্শক সদস্যকে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য দায়িত্ব দেন এবং আসামীগণকে থানায় আনার নির্দেশ দেন। প্রায় ২মাস পর অপারেশন পরিদর্শক আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দরবার হয়,সেই দরবারে কোনো সমাধান করতে পারিনি। পরবর্তীতে আবার দরবারে তারিখ নির্ধারণ করেন ঠিকই আসামীরা নির্ধারিত তারিখে উপস্থিত হননি। প্রথম দরবারে রায়পুরা থানার অপারেশন পরিদর্শক কোর্টের রায়ের পক্ষে সহমত প্রকাশ করেন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল বিষয়টি মিমাংসার পক্ষে সহমত প্রকাশ করেন, কিন্তু এএসআই আনোয়ারুল আসামীগণের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিষয়টি অমিমাংশিত রয়েছে। মিথ্যা মামলার বাদী আনোয়ারা বলেন,আমার বড় ছেলে ওয়ারিশকে পলাশতলীতে বিয়ে করাই। সেই সুবাধে আসামীগণরা আমার আত্মীয়। এখনও আমার টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দেননি। আসামীগণরা যখন আমার আত্মীয় ছিলো তখন তাদের কথায় ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলামের বাবার নামে মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা করি এবং অযথা ১০দিন জেলে আটক রাখি। দালাল চক্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দিব,দিচ্ছি বলে তালবাহানা করে চলছে এবং বলে বেড়াচ্ছে এব্যাপারে বাড়াবাড়ি করলে জীবনের শিক্ষা দিয়ে দিবে।
রায়পুরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল বলেন, আমি ভূক্তভোগী শফিকুল ইসলামের সকল প্রমাণাদি কাগজপত্র দেখেছি। বিজ্ঞ আদালত সঠিক রায় দিয়েছে এবং আসামীগণের নিকট টাকা ও পাসপোর্ট পাওনা। তাছাড়া উপ-পুলিশ পরিদর্শক এএসআই আনোয়ারুল আসামীগণেরপক্ষে অবস্থান নেয়ায় বিষয়টির কোন সুরাহ হচ্ছেনা।
ভুক্তভোগী বলেন, তিনি আসামীগণের সকল হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত তার পক্ষ রায় দেন। তাই এই কষ্টের টাকা ও আমার পাসপোর্ট উদ্ধারের জন্য আইন প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানান।