তারিখ লোড হচ্ছে...

পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে বেআইনি কাজ করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পুলিশ কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে বেআইনি কাজ করবে না।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহীতে ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদার অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভূঞা।

প্যারেড অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১১ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমান্ডার বগুড়া সেনানিবাস মেজর জেনারেল এস এম আসাদুল হক, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাওয়াদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) বাংলাদেশ পুলিশ আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ ও আরএমপির পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ উচ্চ পদস্থ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সব নাগরিকের, কোনো দলের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়, কোনো সম্প্রদায়ের নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রজাতন্ত্রের স্বাধীন কর্মচারী, যারা সুনির্দিষ্ট আইন মেনে চলেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করবে। তারা কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায্য ও অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ করবে না। আজকের এই সমাপনী অনুষ্ঠানে আপনারা এই শপথে বলীয়ান হবেন।

নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করতে হবে। থানায় এসে মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেই দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এ সময় তিনি জুলাই ও আগস্ট ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে সেই চেতনাকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর গৌরবকে আরও সমুন্নত রাখার পরামর্শ প্রদান করেন। নবীন কর্মকর্তাদের কোনো দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কিংবা তাদের অন্যায্য ও অন্যায় নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে অপেশাদার আচরণ ও বেআইনি কাজ না করার জন্য বলেন।

তিনি আরও বলেন, আজ আপনাদের এই এক বছরব্যাপী মৌলিক প্রশিক্ষণের শেষ দিন। আজ থেকে আপনারা সুপ্রশিক্ষিত এক ঝাঁক মেধাবী চৌকস পুলিশ অফিসার হয়ে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নাগরিকের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, আপনাদের এই নতুন কর্মজীবনে স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের এই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণে সুনিপুণ কুচকাওয়াজ উপহার দেওয়ায় আপনাদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয় বিসিএস ৪০তম ব্যাচের ৬৩ জন ও ৩৮তম ব্যাচের তিনজনসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারের। এক বছর প্রশিক্ষণ শেষে গত বছরের ২০ অক্টোবর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ জন্য দেড় হাজারের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে আগের রাতে হঠাৎ করেই কুচকাওয়াজ স্থগিত করে প্রশাসন। এরপর গত ২৪ নভেম্বর এই অনুষ্ঠানের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু সেবারও অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছিল।

এরপর এলোমেলোভাবে হেঁটে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন এমন অভিযোগ এনে গত ১৫ ডিসেম্বর শিক্ষানবিশ ২৫ এএসপিকে শোকজ করা হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মাত্র দুই দিন আগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শোকজপ্রাপ্ত ২৫ জনের মধ্যে ছয়জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সর্বশেষ আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ৪০তম বিসিএস ব্যাচের ৫৭ জন ও ৩৮তম বিসিএস ব্যাচের ৩ জনসহ মোট ৬০ জন প্রশিক্ষণার্থীর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো।

ভাঙ্গায় এখনও ছাত্রীদের ক্লাস নেন সেই “লম্পট” আজাদ! 

*২০ লক্ষ টাকায় যৌন হয়রানি করে আত্মহত্যায় বাধ্য করা ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেন আজাদ। 

*জড়িত ছিলো স্কুল কমিটি,প্রধান শিক্ষকসহ রাঘব বোয়ালরা। 

*প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি চেষ্টার অভিযোগ আজাদের বিরুদ্ধে।  

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১৭ সালে ফরিদপুরের ভাঙা উপজেলার ভাঙা সরকারি  মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী স্কুলছাত্রী হিরামনি মৃত্যুতে দায়ী লম্পট শিক্ষক আজাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি   শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও এর পেছনের কারণ নিয়ে “ভাঙ্গায় লম্পট শিক্ষক আজাদের ফাঁসি চায় শিক্ষার্থীরা” শিরোনামে  একটি চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় পত্রিকা। প্রকাশিত ১ম পর্বের সেই ভিডিও প্রতিবেদনটি ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে ভাঙা উপজেলায়। এরই জের ধরে সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থীদের  নানান রকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে লম্পট শিক্ষক আজাদ। ওদিকে এরই মধ্যে চলমান  অনুসন্ধানে উঠে এসেছে  স্কুলছাত্রী হিরামনি মৃত্যুতে আজাদের জড়িত থাকার আরো চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

এবারের অনুসন্ধানে কথা বলে ২০১৭ সালে ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজাদের যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়া একই স্কুলের ১০ম শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী হিরামনি তিশার বাবা মনির হোসেনের সাথে৷ তার সাথে কথা বলে ও  সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে- চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্রী হিরামনি তিশার মৃত্যুতে দায়ী যৌন হয়রানিকারী লম্পট আজাদ, স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনের সহযোগিতায় স্কুলছাত্রী হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে। মূলত, হিরামনি তিশার গৃহশিক্ষক ছিলেন দুশ্চরিত্র আজাদ, আর পড়াতে গিয়ে নানানভাবে প্রায়শই যৌন হয়রানি করতেন হিরামনি তিশাকে। পিতৃতূল্য শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরণের বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়ে হিরামনি তিশা লজ্জায় ঘৃণায় সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় তখন ভুক্তভোগী  হিরামনির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন লম্পট শিক্ষক আজাদের বিরুদ্ধে।  কিন্ত মামলা দায়ের পর থেকে তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কতিপয় অসাধু সদস্য,  ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় অনেকটা চাপ প্রয়োগ করে ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। এমনকি সে সময় লম্পট আজাদের লালসার শিকার হয়ে প্রাণ দেয়া মেধাবী শিক্ষার্থী হিরামনি তিশার সহকর্মীরা বেশ কয়েকদিন আন্দোলন করলেও তাদেরকেও ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেন লম্পট আজাদ ও তার লোকজন, এমনকি তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়ার হুমকিও দেয় ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কতিপয় সদস্য ও শিক্ষকরা।

ওদিকে হিরামনি তিশাকে যৌন হয়রানি করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার ঘটনা জানাজানি হলে লম্পট আজাদের তৎকালীন স্ত্রীও ঘৃণায়  তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। অথচ একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া লম্পট শিক্ষক  আজাদ ২০ লক্ষ টাকায় এতোবড় চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামা চাপা দিয়ে পুনরায় ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ক্লাস নিচ্ছেন অদ্যবধি।  কিন্ত লম্পট আজাদকে স্কুল কমিটি ও কতিপয় শিক্ষকের নগ্ন সমর্থন ও আজাদের ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে কোন প্রতিবাদ জানাতে পারেনি সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, একজন সাধারণ শিক্ষক পদে চাকরি করা আজাদ ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে হিরামনি তিশার মৃত্যু রহস্য কিভাবে ধামাচাপা দিলেন, এতো টাকা তিনি কোথায় পেলেন? তা নিয়েও রয়ে গেছে প্রশ্ন-

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা  ২০১৭ সালে লম্পট শিক্ষক আজাদ কর্তৃক ধামাচাপা দেয়া হিরামনি তিশার মৃত্যুর ঘটনা ফের প্রকাশ্যে এনে আজাদের পদত্যাগ ও ফাঁসি দাবি করে। এমনকি এ নিয়ে লিখিত বিবৃতি ও কর্মসূচীও দেয়া হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের তরফ থেকে।  কিন্ত পুনরায় পুরোনো রুপে ফিরে আসে আজাদ, সে শিক্ষার্থীদের আবারো নানাবিধ হুমকি দিতে থাকে, এমনকি তার হুমকি থেকে বাদ যায়নি গণমাধ্যমও।  তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় কিছু অসাধু সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা দিয়ে সংবাদকর্মীদের হুমকি দিয়ে গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধের চেষ্টাও করেন লম্পট আজাদ।  লম্পট শিক্ষক  আজাদকে শিক্ষার্থীরা ডাকছেন খুনি আজাদ বলে। এমন একজন লম্পট যৌনহয়রানিকারী ও ছাত্রীর মৃত্যুতে দায়ী চরম বিতর্কিত শিক্ষককে দিয়ে কেনো ও কিভাবে স্বনামধন্য ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কতৃপক্ষ ছাত্রীদের ক্লাস নেয়ান তা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে তুমুল সমালোচনা।

২০১৭ সালে লম্পট আজাদ কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়ে সেচ্ছা মৃত্যুর পথ বেছে নেয়া হিরামনির পরিবারের পক্ষ থেকে হওয়া মামলা ধামাচাপা দেয়ার ঘটনায় লম্পট আজাদকে সহযোগিতা  করা ভাঙা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষক এবং স্থানীয় কথিত গণমান্যদের মধ্যে কে কে কিভাবে এবং কোন স্বার্থে জড়িত তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকবে লম্পট আজাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ২য় পর্বে-

language Change
সংবাদ শিরোনাম